কলকাতা : আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (Aliah University) কাণ্ড থেকে তৃণমূল যতই দায় এড়ানোর চেষ্টা করুক না কেন, ধৃত ছাত্র নেতা গিয়াসুদ্দিনের ফেসবুক বায়োতে উল্লেখ রয়েছে প্রাক্তন ইউনিট প্রেসিডেন্ট, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সে নিজেও বার বার নিজেকে তৃণমূলের ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। যদিও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বক্তব্য, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কোনও ইউনিট ছিল না দীর্ঘদিন ধরে। তবে অনুব্রত মণ্ডল বা তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের মতো পরিচিত নেতাদের সঙ্গে তার ছবি রয়েছে। একই ফ্রেমে। যদিও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ তাঁকে বহিষ্কার করেছিল কি না, সেই সংক্রান্ত কোনও নথি এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল তাকে। কিন্তু তারপরও আলিয়ার ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে জড়িয়ে ছিল গিয়াসুদ্দিন। আলিয়ার অলিন্দে কীভাবে উত্থান হল এই গিয়াসুদ্দিনের?
আলিয়ায় তার আসা ২০১৬ সালেরও আগে। তখন থেকেই গিয়াসুদ্দিনের ‘গুন্ডাগিরি’ শুরু। একের পর এক অভিযোগ। ছাত্রদের থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৩০০ টাকা করে তোলার অভিযোগ উঠেছিল। পড়ুয়াদের বক্তব্য, ইউনিটের নাম করে এই টাকা তোলা হত। যদিও সেই সময় ওখানে কোনও ইউনিট ছিল না বলেই দাবি। এভাবেই চলতে থাকে। সেই সঙ্গে নিজেকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিট প্রেসিডেন্ট বলেও নিজেকে দাবি করতে থাকে সে। সেই সময় তথাকথিতভাবে কোনও ইউনিট না থাকলেও, সাধারণতভাবে ছাত্র রাজনীতিতে যা দেখা যায়, যে সংগঠনের বাহুবল বেশি, তাদের দাপট চলে। আলিয়াতেও একইরকম চলে আসছিল। আর এমনই একটা রাজনৈতিক বাতাবরণের মধ্যে ‘ডানা গজাতে’ শুরু করে গিয়াসুদ্দিনের।
নিজেকে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা হিসেবে দাবি করে ক্যান্টিনের টাকা নয়-ছয়েরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নিজের দাপট খাটিয়ে দাম বেশি নিত বলে অভিযোগ। ছাত্র-ছাত্রীদের নেশায় আসক্ত কারার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়ার দাবি, “রেজিস্ট্রারকে প্রভাব দেখিয়ে হোস্টেলের ক্যান্টিনের খাবারের দায়িত্ব নিয়েছিল সে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ ছেলেমেয়েই গরিব পরিবারের। মেসে যে খাবার ২২ টাকা প্রতি মিল পাওয়া যেত, পরবর্তীতে গিয়াসুদ্দিনের সময়ে সেই মিল ৩১-৩৫ টাকায় পাওয়া যেতে শুরু করে। ছাত্ররা এর বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে মারধর করা হয়েছে, হুমকি দেওয়া হয়েছে প্রাণনাশের।”
পড়ুয়াদের অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে গিয়াসুদ্দিনের মাথায় হাত ছিল নাদিমূল হকের। সেই নাদিমূল হকের সান্নিধ্যেই তার ছাত্র রাজনীতিতে বেড়ে ওঠা। কিন্তু কীভাবে এতটা বড় নেতা হয়ে গেল গিয়াসুদ্দিন যে তার কথাতেই সব চলত? পড়ুয়ারা বলছেন, এখানে আসল ক্ষমতা হল পেশিবল। প্রচুর ছেলে গিয়াসুদ্দিনের সঙ্গে ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে চর মারার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ভাবেই আস্তে আস্তে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দাদা’ হয়ে ওঠে সে।
প্রতিবাদ করতে গেলে ক্লাস থেকে বের করে মারা হয়েছে। বাদ যাননি পিএইচডি পড়ুয়াও। এমনকী অধ্যাপক, প্রাক্তন রেজিস্ট্রারকেও মারধরের অভিযোগ রয়েছে। এরপর তাকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখানে বলা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও পাঠক্রমে সে ভর্তি হতে পারবে না। কিন্তু তারপরেও আলিয়ায় না থেকেও থেকে গিয়েছে গিয়াসুদ্দিন।
আরও পড়ুন : Aliah University Controversy: অভিযুক্তের সঙ্গে এক ফ্রেমে তৃণাঙ্কুর-অনুব্রত! তৃণমূলেই আছি, দাবি গিয়াসউদ্দিনের