কলকাতা: বিধানসভার বাজেট অধিবেশন তখন শেষের পথে। শুক্রবার বিকেলে ভাষণের শেষে অধিবেশন কক্ষে শুভেন্দু অধিকারীকে বলতে শোনা গেল, “আমরা গঠনমূলক সমলোচনা করব। ইতিবাচক সহযোগিতা করব।” কিন্তু, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উবে গেল সেই সহযোগিতার সুর। পিএসি-র চেয়ারম্যান হিসেবে মুকুল রায় নাম ঘোষণা হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন বিজেপি বিধায়করা। শাসকদের এই সিদ্ধান্তে পদ্মশিবির এতটাই রুষ্ট যে তারা জানিয়ে দিয়েছে, বিধানসভার কোনও কমিটির দায়িত্বভারই তারা গ্রহণ করবে না। যে যে কমিটির চেয়ারম্যান বিজেপি বিধায়কদের করা হয়েছে, তাঁরা সকলেই পদত্যাগ করবেন বলে খবর সূত্রের।
বিধানসভায় মোট কমিটির সংখ্যা ৪০। ২০১৬ সালে যার মধ্যে ১৪ টি কমিটি পেয়েছিল তৎকালীন বিরোধী বাম-কংগ্রেস। তাদের প্রাপ্ত মোট আসনের সংখ্যা ছিল ৭৭। বিজেপিও এ বছর বিধানসভা ভোটে একই সংখ্যক আসন জেতে। কিন্তু পদ্মশিবিরকে সম-সংখ্যক কমিটি ছাড়তে রাজি ছিল না তৃণমূল। এর পিছনে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, গতবার একাধিক দলের মধ্যে কমিটি বণ্টন করতে হয়েছিল। কিন্তু এবার বিরোধী দল শুধুই বিজেপি। সেই কারণে বেশি কমিটি ছাড়তে রাজি হয়নি তৃণমূল।
যদিও, বাকি কমিটিগুলি নিয়ে কখনই খুব একটি মাথাব্যথা ছিল না বিজেপির। শুভেন্দুরা চেয়েছিলেন, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান করা হোক বালুরঘাটের বিধায়ক অশোক লাহিড়ীকে। কিন্তু সেই কমিটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় এখন ভাগে আসা ৮ টি কমিটির চেয়ারম্যান পদে কোনও দলীয় প্রতিনিধি রাখতে চায় না বিজেপির পরিষদীয় নেতৃত্ব। সর্বসমক্ষে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরও খাতায়-কলমে বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায়কে পিএসি-র চেয়ারম্যান করার মতো ঘটনা এর আগে পরিষদীয় গণতন্ত্রে ঘটেনি বলেই দাবি করেছেন শুভেন্দু অধিকারী।
যদিও কোনও বিজেপি বিধায়কই কমিটি ছাড়বেন না, সদস্য হিসেবে তাঁরা থাকবেন। কিন্তু কোনও কমিটির দায়িত্বই বিজেপি আর নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। কটাক্ষের সুরে তিনি বলেছেন, “তৃণমূল যত পারে ক্ষমতা ভোগ করে নিক। কারণ এটাই ওদের শেষ টার্ম।”
আরও পড়ুন: পিএসি-র চেয়ারম্যান হলেন মুকুল, ‘এটাই ওদের শেষ টার্ম’, তীব্র প্রতিক্রিয়া শুভেন্দুর
দিলীপ ঘোষও স্পষ্ট ভঙ্গিমায় জানিয়েছেন, পিএসি না হলে কিছুই চান না তাঁরা। তিনি বলেন, “তৃণমূল চাইলে সব কমিটি রেখে দিক। কিন্তু একটা গণতন্ত্রে বোঝাপড়ার মাধ্যমে সরকার চলে। যেখানে বিরোধীদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়। কিন্তু এখানে গণতন্ত্র নেই।” নাম না করে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানায় নিয়ে তিনি বলেন, “বলা হচ্ছে, তিনি (মুকুল রায়) নাকি বিজেপির সদস্য। আপনিই ঝাণ্ডা ধরে তাঁকে দলে যোগদান করিয়ে তারপর বিজেপির সদস্য বলছেন। চালাকি করার কোনও কারণ নেই। আপনি সোজা বলুন, যে আমরা দেব না। যদি ওটা (পিএসি) না দেন, কোনও পদই নেব না।”
পালটা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূলের পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “মুকুল রায় তৃণমূলে যোগদান করলেও তিনি বিজেপিরই বিধায়ক। এই মুহূর্তে মুকুল বিজেপির সদস্য। সেই হিসেবে বিরোধী বিধায়ক হিসেবে অধ্যক্ষ তাঁর নাম ঘোষণা করেছেন।” অন্যদিকে বিজেপির সদস্যদের কমিটির চেয়ারম্যান পদ ছাড়ার বিষয়ে পার্থবাবুর বক্তব্য, “কোনও কাজ থেমে থাকবে না। কোনও স্ট্যাডিং কমিটিই চেয়ারম্যান ছাড়া চলতে পারে না। বিজেপি বিধায়করা যদি কমিটি অচল করতে চান, আমরা সচল রাখার কথাই বলব।”
আরও পড়ুন: ওয়ার্মারের তাপে ঝলসে গেল ১০ দিনের নবজাতকের দেহ! চাঞ্চল্যকর অভিযোগ ন্যাশনাল মেডিক্যালে