কলকাতা: বিশে মে, ২০২১। প্রবল শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়েছিল আমফান। উত্তাল সমুদ্র, ঝোড়ো হাওয়া, সুন্দরবনের কান্না আর জলমগ্ন কলকাতা। সেই বেদনাদায়ক স্মৃতির ক্ষত মিটতে না মিটতেই হাজির নতুন ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। বাংলা ও ওড়িশা উপকূলের মাঝামাঝি ল্যান্ডফল হবে তীব্র এই ঘূর্ণিঝড়ের। আমফানে বাঁধ ভেঙেছিল, ভেসে গিয়েছিল ঘরবাড়ি। একটা বিস্তীর্ণ অংশের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। বিভীষিকাময় সেই আমফানের স্মৃতির পুনরাবৃত্তি চায় না রাজ্যবাসী। আমফানের জেরে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৯৮ জন। সেই মৃত্যু কোনওভাবেই কাম্য নয়। এ ছাড়া বেদনাদায়ক যেসব স্মৃতি এখনও নাড়া দেয়…
দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদ্যুৎ বিপর্যয়: একটা ঝড় সব তছনছ করে দিয়ে গিয়েছিল। শহর-শহরতলি থেকে গ্রাম, ঝোড়ো হাওয়ার তাণ্ডব হয়েছিল সর্বত্র। উপকূলবর্তী এলাকায় ১৭০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড় হয়েছিল। যার ফলে একাধিক অঞ্চলে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে যায়। কারেন্টের খুঁটি উপড়ে আসে। উপড়ে আসে সারি সারি গাছ। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে দীর্ঘদিন উপকূলবর্তী গ্রামে আলো জ্বলেনি। প্রদীপ, মোমবাতি, লম্ফ, হ্যারিকেনের আলো সঙ্গী হয়েছিল দীর্ঘদিন। ২০ দিন পরেও স্থায়ী বিদ্যুৎ পরিষেবা ছিল না গ্রামীণ একাধিক এলাকায়। খাস কলাকাতার বুকেও দীর্ঘক্ষণ কারেন্ট ছিল না। রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখিয়েছিল শহর।
জলে থৈ থৈ রাজ্য: ঘূর্ণিঝড় হলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হবে সেটাই স্বাভাবিক। উপকূল তো বটেই কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছিল। জলমগ্ন হয়েছিল শহর কলাকাতাও। রাস্তায় জমেছিল হাঁটু জল। সমুদ্র বাঁধ ছাড়িয়ে নোনা জল ঢুকেছিল গ্রামে। পানীয় জলের সঙ্কট দেখা গিয়েছিল। কলকাতায় বাড়িতে জল ঢুকে এসেছিল। পুরসভার প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে আয়ত্তে আসে পরিস্থিতি।
সংযোগ ব্যবস্থা তলানিতে: আমফানের পর প্রিয়জন কেমন আছে? এইটুকু জানতে চেয়েও বিফল হতে হয়েছিল রাজ্যবাসীকে, কারণ সম্পূর্ণ ব্যাহত হয়েছিল মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিষেবা। কোনও টেলিকম পরিষেবাই উপলব্ধ ছিল না। কখন নেটওয়ার্ক আসবে, তারপর প্রিয়জনের খবর মিলবে, এহেন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জেরে মোবাইল, ল্যাপটপ-সহ সমস্ত যোগাযোগ মাধ্যমই কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।
ত্রানে দুর্নীতি: মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। খাবার নেই। পানীয় জল নেই। সব ভেসে গিয়েছে আমফানে। এই পরিস্থিতিতে উপকূলের মানুষের স্রেফ ভরসা ছিল ত্রান। কিন্তু ত্রানেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে। সেই ত্রান না কি নেতাদের পকেটে গিয়েছে। বিরোধীরা এই অভিযোগ করেছিল। নেতাদের ভাগ্যে জুটেছিল, ‘চালচোর’, ‘ত্রিপলচোর’ তকমা।
কৃষকদের হাল বেহাল: সমুদ্রের নোনা জল একবার গ্রামে ঢুকে এলে আর রক্ষে নেই। উর্বর জমি হয়ে যায় অনুর্বর। মিষ্টি জলের মাছ মরে ভাসতে থাকে। আমফানে এমনটাই হয়েছিল। দু-ফসলা তিন ফসলা জমি হয়ে গিয়েছিল চাষের অযোগ্য, কারণ ঢুকে গিয়েছিল নোনা জল। সুন্দরবনের বাঁধ ভেঙে নেমে এসেছিল এহেন বিপর্যয়। পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ক্ষেত থেকে আগেভাগেই ধান বাড়িতে তুলে নিয়েছিলেন কৃষকরা। যাঁদের ধান জমিতে থেকে গিয়েছিল, আর ফসল পাননি তাঁরা। আমফান ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সব।
প্রাণীদের ক্ষতি: তাদের তো আর পাকাবাড়ি নেই। জঙ্গলই তাদের বাসা। আমফান ঝড়ে সেই বাসা উড়ে গিয়েছিল। গাছ উপড়ে রাস্তায় এসে পড়েছিল। সঙ্গে রাস্তায় এসে পড়েছিল পাখির বাসা-ডিমও। পরিবেশবিদরা জানিয়েছিলেন, আমফানের একটা বড় প্রভাব পড়েছিল পশু-পাখিদের ওপর। বিঘ্নিত হয়েছিল তাদের বর্তমান-আগামী।
আরও পড়ুন: আমফানকে দশ গোল দিয়েছিল, ইয়াসকে কি ট্যাকেল করতে পারবে হাওড়া ব্রিজ?