আমফানকে দশ গোল দিয়েছিল, ইয়াসকে কি ট্যাকেল করতে পারবে হাওড়া ব্রিজ?
আবহওয়াবিদরা আপাতত জানাচ্ছেন, গত বারের মতো অত গতি থাকবে না এ বারের ঘূর্ণিঝড়ের। কলকাতা ঘেঁষে বেরিয়ে যাবে ইয়াস।
কলকাতা: ‘নদীর বুকে আছেন ঝুঁকে বিদ্যাসাগর,তার উত্তুরে সে থুত্থুরে আর এন ট্যাগোর।’ থুত্থুরেই বটে, কারণ ৭৫ বছর পেরিয়ে গিয়েছে রবীন্দ্র সেতুর। বহু ঝড়-ঝাপটা সামলে নিয়েছে হাওড়া ব্রিজ (Howrah Bridge)। আবারও একটা ঝড় আসছে। এ বার কী হবে ঐতিহাসিক এই ব্রিজের? এই প্রশ্ন উঠছে। তবে আমফানের সেই ধ্বংসলীলা আপাতত বুকে চেপে রেখেছে হাওড়ার ঝুলন্ত এই সেতু।
আমফানে হাওড়া ব্রিজ
গত বছর আমফান আছড়ে পড়েছিল গাঙ্গেয় কলকাতায়। রুদ্ররূপ দেখেছিল হাওড়া ব্রিজ। আমাদের সাংবাদিক সেই মূহুর্তে ছিলেন রবীন্দ্র সেতুতে । সেই স্মৃতি আজও তাঁর কাছে অমলিন। বিকেল ৩টের সময় হাওড়া ব্রিজে লোহার ট্রাইপড স্থির করে রাখা কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। বৃষ্টির ফোঁটা বিঁধেছিল তিরের মতো। তখনও আমফান পুরোপুরি আছড়ে পড়েনি। তার মধ্যেই ক্যামেরা, বুম যেন উড়ে গঙ্গায় পড়ে যাওয়ার পরিস্থিতি। প্রথমে শোঁ শোঁ, তারপর দুমদুম আওয়াজে বয়েছিল ঝোড়ো হাওয়া। পা দিয়ে শক্ত করে ট্রাইপড চেপে প্রতিবেদন করতে হয়েছিল চিত্র সাংবাদিককে। আমফানে প্রায় ১১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে হাওয়া বয়ে গিয়েছিল হাওড়া ব্রিজের ওপর দিয়ে। তবে ঝড়ের দাপটে অক্ষত ছিল হাওড়া ব্রিজ। এ বারও কোন পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে রবীন্দ্র সেতু?
হাওড়া ব্রিজের জন্য কী ব্যবস্থা নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ?
আবহওয়াবিদরা আপাতত জানাচ্ছেন, গত বারের মতো প্রবল গতি থাকবে না এ বারের ঘূর্ণিঝড়ের। কলকাতা ঘেঁষে বেরিয়ে যাবে ইয়াস। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়বে। তার জন্য কতটা প্রস্তুত হাওড়া ব্রিজ। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাওড়া ব্রিজের জন্য বিশেষ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে প্রত্যেক বার ঘূর্ণিঝড় আসার আগে যে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হয়, তা এ বারও দেখা হয়েছে। কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে বন্দরে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সরোজ মণ্ডল জানান, যে গতিবেগের কথা বলা হচ্ছে তাতে হাওড়া ব্রিজের কোনও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, এর থেকে বেশি গতিবেগ ধরেই হাওড়া ব্রিজের নকশা তৈরি হয়েছে। তাই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। কলকাতার অন্যান্য স্মৃতিসৌধ যেমন ভিক্টোরিয়া, শহিদ মিনারের কোনও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই শহরের উচ্চতম বিল্ডিং ৪২-রও। একই মত অধ্যাপক সোমনাথ ঘোষেরও। তিনি বলেন, “ক্ষয়ক্ষতি নির্ভর করে ঝড়ের গতি ও প্রকৃতির ওপর। গতি যেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ প্য়ারামিটার তেমন প্রকৃতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার।” একটি সাধারণ ঝোড়ো হাওয়া ও ঘূর্ণিঝড়ের মতে ফারাক রয়েছে। সাধারণ প্রবল গতির ঝোড়ো হাওয়া থেকে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। তবে হাওড়া ব্রিজে কোনও ক্ষতি হবে না বলেই মনে করছেন। তাঁর মতে হাওড়া ব্রিজ অনেকটাই মজবুত। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হয়, তাই বিশাল কোনও ক্ষতি হবে না। কিন্তু ক্ষতি হতে পারে উপকূলবর্তী ছোট কোনও সেতুর।
♦♦♦ ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় নবান্নের তরফে প্রকাশ করা হল হেল্পলাইন নম্বর। ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে যে কোনও বিপদে পড়লে ফোন করুন এই নম্বরগুলিতে ১০৭০ এবং ০৩৩-২২১৪৩৫২৬।
আরও পড়ুন: জোরকদমে প্রস্তুতি কলকাতা পুরসভার, ইয়াস মোকাবিলায় বিশেষ আলো এল মহানগরে