কলকাতা: যাদবপুর। নামটা শুনলে খুশিতে চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠার কথা। গর্বে তাদের বুক ফুলে ওঠার কথা, যারা এই নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে (Jadavpur University) পড়েছেন বা পড়ছেন। কিন্তু কী আশ্চর্য! হচ্ছে উল্টোটা! লজ্জায় মাথা হেঁট ! পড়ুয়া মৃত্যুর আঁচ পোহাচ্ছে যাদবপুর। আর দিন-প্রতিদিন আগুন ছড়াচ্ছে! বিক্ষোভের-প্রতিবাদের। তদন্তের গতি বাড়তেই, ধরপাকড়ের সংখ্যাটা একধাক্কায় বেড়ে গেছে অনেকটাই। এরমধ্যে এদিন বিকালে বাম ছাত্রদের সঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যদের তুমুল সংঘর্ষের ছবি দেখা যায়। এদিকে এ ঘটনার খানিক আগেই যাদবপুর এইট-বিতে টিএমসিপির ধর্ণা মঞ্চে গিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক দেবাশিস কুমার। বলেছিলেন, “এবার যাদবপুরেও আমরা খেলা শুরু করে দিলাম।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য স্লোগান তুললেন, ‘দড়ি ধরে মারো টান মাও-মাকু-নকশালরা হবে খানখান’। বললেন, যাদবপুরে আগামীতে একমাত্র বিকল্প হয়ে উঠবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদই।
অন্যদিকে তৃণমূলকে আবার জমি ছাড়তে নারাজ বামেরা। এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলছেন, “যাদবপুরকে ভিলেন বানাতে হবে। এটাই ওরা চাইছে। যাদবপুর মানেই বাম, যাদবপুর মানেই বিশৃঙ্খলা। এটা বুঝিয়েই যাদবপুরকে ওরা টার্গেট করতে চাইছে।” তবে কী যাদবপুরে বর্তমানে চলছে দখলদারির রাজনীতি? কার হাতে থাকবে থাকবে যাদবপুরের ক্ষমতা তা নিয়েই চলছে রাজনীতি? এদিন বিকালে সংঘর্ষের ছবি থেকে সেই প্রশ্নই যেন আরও জোরালো হচ্ছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, বড় নেতা থেকে ছাত্র নেতারা যা বলছেন, পরিস্থিতি ক্রমশ সেদিকেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। নির্যাস একটাই, ক্ষমতায়ন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতায়ন।
যাদবপুর প্রসঙ্গে একদিন আগেই বাম রাজনীতিকে নিশানা করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওমনি যাদবপুর দখলে যেন ঝাঁপিয়ে পড়েছে ঘাসফুল শিবির। এদিকে পিছিয়ে থাকতে রাজি নয় বিজেপিও। আগে থেকেই শঙ্কুদেব পণ্ডারা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া মৃত্যু নিয়ে পথে নেমেছেন। তবে এদিন শুধু পথেই সীমাবদ্ধ না থেকে অরবিন্দ ভবনে ডেপুটেশন দিতে যায় শাসকদলের ছাত্র সংগঠন। তাঁর আগে তৃণাঙ্কুর কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, “যাদবপুর-প্রেসিডেন্সির মতো বিশ্ববিদ্যালয়কে এতদিন ছেড়ে রেখেছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম এখানে বিরোধীদের থাকার জায়গা রাখা উচিত। ক্ষমা চাইছি। এটা আমাদের ভুল হয়েছে। আগামীতে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদই একমাত্র বিকল্প হয়ে উঠবে।”
এদিকে যাদবপুর নিয়ে বিগত কয়েকদিন ধরেই সরগরম শহর থেকে জেলা! তদন্ত চলছে। মামলাও বাদ নেই। দিনদিনই কিন্তু চড়ছে তাপ-উত্তাপ। একদিকে কলকাতা থেকে মন্ত্রী থেকে শুরু করে তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের একটি দল এদিন পৌছে গিয়েছিল, বগুলায়। মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার সহ পাঁচ সদস্য। তারা গেলেন বগুলায়। ওদিকে, সেখান থেকে ছাত্র-শিক্ষকরা বিচার চেয়ে এদিন হাজির হয়েছিলেন কলকাতায়। শহরে করেছেন মিছিল। অন্যদিকে, যাদবপুরকাণ্ডে মৃত ছাত্রের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি দল। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিষয়টি দেখছেন, পরিবারকে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। চলতি সপ্তাহেই আবার বগুলায় যাচ্ছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
অন্যদিকে সৌরভ, দীপশেখর, মনোতোষের পর এবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন আরও ৬ জন। এর মধ্যে তিনজন প্রাক্তন ও বাকি তিনজন বর্তমান পড়ুয়া। ফলে সব মিলিয়ে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতারির সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে নয়ে। পুলিশ সূত্রে খবর, নজরে আছেন আরও বেশ কয়েকজন। এদের বয়ানে বেশকিছু অসঙ্গতি রয়েছে বলে দাবি পুলিশের।