কলকাতা: বঙ্গ বিজেপির অন্দরে ক্রমেই চড়া হচ্ছে বিরোধের সুর। একের পর এক বনভোজনের আয়োজন করে চলেছেন শান্তনু ঠাকুর (Shantanu Thakur)। ঠাকুরনগরে হামেশাই দেখা মিলছে রীতেশ জয়প্রকাশদের। ইতিমধ্যেই দল থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন তাঁরা। কিন্তু শনিবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ শান্তনুর বাড়িতে যান জয়প্রকাশরা। সওয়া দশটা নাগাদ কার্যত খোশমেজাজে তাঁদের বেরতে দেখা যায়। এদিকে রবিবারই দিল্লিতে যাচ্ছেন শান্তনু। বাজেট অধিবেশন তো রয়েছেই, কানাঘুষো শোনা গিয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার সঙ্গে দেখাও করতে পারেন তিনি। তাহলে কী ফের বঙ্গ বিজেপিতে বড়সড় বদল হতে চলেছে? প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের।
শনিবারের বৈঠক শেষে জয়প্রকাশ মজুমদার জানান, মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর রবিবার দিল্লি যাচ্ছেন। তার আগে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন তাঁরা। তবে বর্তমানে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে যে আবহ, তাতে কেবল সাক্ষাৎ হয়েছে, রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়নি এমনটাও কার্যত অসম্ভব। জয়প্রকাশ মজুমদারের কথায়, দু’জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যখন এক জায়গায় বসেন, অবশ্যই রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়। একইসঙ্গে জয়প্রকাশের দাবি, দল তাঁকে বরখাস্ত করেছে সাময়িকভাবে। তবে তিনি দলের কাজ করে চলেছেন। অন্যদিকে রীতেশ তিওয়ারি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, আগামিদিনের রণকৌশল কী তা সময়ই বলে দেবে।
এদিন জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “মন্ত্রী বাজেট অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য রবিবারই দিল্লিতে রওনা দিচ্ছেন। তার আগে একটু কথাবার্তা হল। আর দু’জন রাজনীতিবিদ এক জায়গায় হলে রাজনীতি নিয়ে তো কথা হবেই। ঢেঁকি তো স্বর্গে গিয়েও ধান ভাঙে। দল তো সাময়িক বরখাস্ত করেছে। পার্টিতে যেমন আছি, কাজ করছি। তারা মনে করেছে কী হিসাবে করেছে জানি না। আমরা বারবার বলেওছি এটা সঠিক না। অনেক কিছুই ইতিমধ্যে বলে ফেলেছি এই বরখাস্ত নিয়ে। মাথায় রাখবেন পোর্ট ট্রাস্ট গেস্ট হাউজে যত আমাদের বিজেপির কর্মীরা ছিলেন, শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে ছিলেন, সবাই আছেন। আরও বেড়েছে সেটা।”
অন্যদিকে রীতেশ তিওয়ারি খুব একটা কিছু না বললেও তাঁর মন্তব্য বেশ ইঙ্গিতবাহী। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন দিল্লি যাচ্ছেন না, তবে কথা হয়েছে। সেসব সময়ে জানা যাবে। তাঁর কথায়, “দিল্লি যাচ্ছি না। এখন ওখানে খুব ঠান্ডা। দলীয় যা কথাবার্তা হবে সবটা কি সংবাদমাধ্যমে বলা যায়? রাজনীতিকরা একসঙ্গে বসলেও মোয়ার মিষ্টি কম না বেশি তা নিয়ে কি আলোচনা হয়? যা নিয়ে কথা বলার সেটাই আলোচনা হল।”
গত, ২৩ জানুয়ারি জয়প্রকাশ মজুমদার ও রিতেশ তিওয়ারিকে শো কজের চিঠি দেয় বঙ্গ বিজেপি। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হয় তাঁদের বিরুদ্ধে। তারপরের দিনই ২৪ জানুয়ারি, রীতেশ ও জয়প্রকাশকে সাময়িক বরখাস্তের চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে লেখা হয়, ‘রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নির্দেশ অনুসারে নিম্নলিখিত ব্যক্তিদ্বয়ের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের দল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে।’ এরপরই সাংবাদিক বৈঠক করে বঙ্গ বিজেপির একাংশের বিরুদ্ধে একের পর বিস্ফোরক দাবি করেন জয়প্রকাশ মজুমদাররা। তারপর, শান্তনু ঠাকুরের আয়োজিত একের পর এক বনভোজনেও দেখা মেলে তাঁদের।
আগেও দলের অন্দরের কোন্দল নিয়ে জে পি নাড্ডার সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারেন শান্তনু এমন কথা শোনা গিয়েছিল। এ বারের পরিস্থিতিও কি তাই? কানাঘুষো শোনা গিয়েছে, কেবল বাজেট অধিবেশনই লক্ষ্য নয়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে দলের অন্দরের ক্ষোভের কথাও জানাতে পারেন শান্তনু। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বঙ্গ বিজেপির অন্দরের কোন্দলে শান্তনুই পারেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কানে গোটা বিষয়টি পৌঁছে দিতে। তাই, মতুয়া সাংসদের বাড়িতেই ঘনঘন দেখা যাচ্ছে দলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের। এদিকে, শনিবারই আবার, কৃষ্ণগঞ্জের বিজেপি বিধায়ক শান্তনুকে একটি ‘ব্যক্তিগত চিঠি’ দিয়েছেন। তা নিয়েও জল্পনা থাকছেই, এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।