কলকাতা: ভবানীপুর উপনির্বাচন (Bhabanipur By-Election) মামলায় স্বস্তি রাজ্যের। কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিল ভোটে কোনও বাধা নেই। ভবানীপুরের উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই আইনি জটিলতায় জড়ায় এই প্রক্রিয়া। আদালতে মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। সেই মামলাতেই এদিন এই রায় দেয় আদালত। তবে একই সঙ্গে এদিন আদালত কক্ষে মুখ্যসচিবের ভূমিকা নিয়ে বার বার প্রশ্ন ওঠে। মুখ্যসচিব একজন ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ হয়েও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সুরক্ষিত করছেন, এমন পর্যবেক্ষণও উঠে আসে।
ভবানীপুরের উপনির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তরফে যে প্রেস বিবৃতি জারি করা হয়, সেখানে (বিবৃতির ছ’ নম্বর অনুচ্ছেদে) উল্লেখ করা হয়েছিল, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন, রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি কোনও ভাবেই ভোটের কেন্দ্রে প্রভাব ফেলবে না। একইসঙ্গে তিনি তুলে ধরেছেন, ভারতীয় সংবিধানের ১৬৪ (৪) ধারায় একজন মন্ত্রী যদি বিধানসভার সদস্য না হন তা হলে ভোটের ফল প্রকাশের ছ’মাসের মধ্যে তাঁর মন্ত্রিত্ব চলে যায়। সেই পদে সর্বোচ্চ পদাধিকারী নিয়োগ না হলে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হতে পারে।’
মামলাকারী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়েই আদালতের দ্বারস্থ হন। তিনি দাবি করেন, ভবানীপুরে নির্বাচন এখনই না করানো হলে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হতে পারে বলে মুখ্যসচিবের সুপারিশের উল্লেখ নির্বাচন কমিশনকে তার প্রেস বিবৃতি থেকে বাদ দিতে হবে। এই মামলার শুনানিপর্বে দেখা যায়, কমিশনের জবাবে কোনও ভাবেই সন্তুষ্ট হয়নি আদালত। শেষ শুনানির দিনও ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল বলেন, ৬ ও ৭ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় আদালত।
মঙ্গলবার রায়দানের সময় শুধু বলা হয়েছে, ভোটে কোনও বাধা নেই। তবে ভোটে নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রেও বেশ কয়েকটি পর্বের মধ্যে দিয়ে যেতে হতো আদালতকে। যাঁরা প্রার্থী, তাঁদের বক্তব্য শুনতে হতো। একই সঙ্গে রাজ্য সরকারের যুক্তিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যদি তাদের মতামত ছাড়া বড় কোনও সিদ্ধান্ত আদালত নিত নিঃসন্দেহে তা নজিরবিহীন বলেই গণ্য করা হতো।
এদিন আদালতে যা হল…
* ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জানান, ভবানীপুরে উপনির্বাচন হতেই পারে। তাতে কোনও বাধা নেই।
* বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ রয়েছে, যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
* মুখ্যসচিবের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে মুখ্যসচিব যে ভাবে চিঠি লিখেছেন তাতে মনে হচ্ছে মুখ্যসচিব কোনও দলের কর্মীর থেকেও বেশি কিছু, পর্যবেক্ষণ আদালতের। অর্ডার কপিতেও সে প্রসঙ্গ রয়েছে।
* এই মামলার অর্ডার কপিতে বলা হয়েছে, এই নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, যিনি হারবেন, তিনি ফের আদালতে যেতে পারেন। কারণ, যে ভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে, যেখানে মুখ্য সচিবের কথা উল্লেখ করে কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে তা ঠিক নয়। মুখ্যসচিবের আলাদা করে আইনত সুপারিশ তা ঠিক নয় বলেই মনে করেছে আদালত।
* সে ক্ষেত্রে কেউ যদি পরবর্তীকালে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে প্রশ্ন তোলে, এই নির্বাচন আদৌ কতটা সঠিক ছিল, তাঁর কথাও শুনবে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: By-Election: পুজোর পরই রাজ্যের বাকি চার কেন্দ্রে উপনির্বাচন, নির্ঘণ্ট ঘোষণা কমিশনের
আরও পড়ুন: Central Force: ভবানীপুরের ভোটে কোথায় কত কেন্দ্রীয় বাহিনী, কলকাতা পুলিশ সূত্রে উঠে এল সেই বিন্যাস