কলকাতা: হাঁসখালিতে ঠিক কী ঘটেছিল? তথ্য তালাসে নিজস্ব অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার রাতে বিজেপির তথ্য অনুসন্ধান কমিটির চার সদস্য কলকাতা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছন। বিজেপির মহিলা মোর্চার প্রতিনিধি দল শুক্রবার সকালে হাঁসখালির উদ্দেশে রওনা দেবে বলে সূত্রের খবর। দলের সভানেত্রী মহারাষ্ট্রের প্রতিনিধি খুসবু সুন্দর বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। সঠিক কারণ খুঁজে বার করতে হবে। সব দিকে দেখে রিপোর্ট আমরা জেপি নাড্ডার কাছে জমা দেব।” প্রসঙ্গত, বগটুইয়ের পর হাঁসখালি গণধর্ষণকাণ্ডে তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে বিজেপি। এবারের এই কমিটিতে রয়েছেন উত্তর প্রদেশের সাংসদ রেখা ভর্মা, উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী বেবি রানি মৌরিয়া, তামিলনাড়ুর বিধায়ক ভানাতি শ্রীনিবাসন, মহারাষ্ট্রের প্রতিনিধি খুসবু সুন্দর।
শুক্রবার বিজেপির প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে। নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। স্থানীয় বাসিন্দা, অভিযুক্তদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন তাঁরা। সব দিক খতিয়ে দেখে একটি রিপোর্ট তৈরি করবে। এই ঘটনায় সরাসরি তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতার নাম জড়িয়েছে। মূল অভিযোগ তাঁরই ছেলের বিরুদ্ধে। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নারী নিরাপত্তা নিয়ে বিধানসভার অলিন্দ থেকে পথ, সর্বত্রই সুর চড়াচ্ছে বিজেপি। তাতে ঘৃতাহুতি করেছে হাঁসখালি কাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ‘প্রেগন্যান্ট তত্ত্ব’। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ‘সুইং’ দিয়েছেন তৃণমূলেরই বর্ষীয়ান নেতা সৌগত রায়! তাঁর বক্তব্য, ‘মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে একটি ধর্ষণও লজ্জার।’ আর তাতেই রীতিমতো হাতে লোপ্পা বল পেয়ে শাসকদলকে আরও ঠেসছে বিরোধী শিবির। বগুটুইয়ের রিপোর্টের ছত্রে ছত্রে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। তা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারের রিপোর্টে সরাসরি তৃণমূল নেতার নাম জড়ানোয়, কতটা চাপ বাড়াবে বিজেপি শিবির, সেটাই দেখার।
তবে দেখার আরও একটি বিষয়। বগটুইয়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কাকতালীয়ভাবে বিজেপির প্রতিনিধি দল যেদিন অকুস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন, পথে খারাপ হয়ে যাওয়া দুই সিমেন্টের বস্তার গাড়ির পিছনে দীর্ঘক্ষণ আটকে গিয়েছিল তাদের গাড়ি। লরি সরাতে শেষমেশ থানার সামনে বিক্ষোভে বসতে হয়েছিল বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, নেত্রী ভারতী ঘোষদের। দীর্ঘ চেষ্টায় পৌঁছেছিল ‘নাছোড়বান্দা’ দল। এদিনও তেমন কোনও বিপর্যয় ঘটে কিনা, সেটাও ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের।
এদিকে, হাঁসখালিকাণ্ডে তদন্তভার হাতে পাওয়ার পরই তৎপর সিবিআই।হাঁসখালি গণধর্ষণকাণ্ডে তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকদের নিয়মিত কথা বলছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই হাঁসখালির অফিসার ইন চার্জ ও অনান্য তদন্তকারী আধিকারিকদের কাছ থেকে এই তদন্তের এখনও পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য হাতে নিয়েছে সিবিআই। এই ঘটনায় ধৃত ২ জন এখনও পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। তাদেরকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চায় সিবিআই। আদালতে এ ব্যাপারে আবেদন জানানো হবে সিবিআই-এর তরফে।
হাঁসখালি গণধর্ষণকাণ্ডে বড় প্রমাণ এসেছে পুলিশের হাতে। তদন্তকারী পুলিশের দাবি, গণধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে। যে বাড়িতে বার্থ ডে’র পার্টি চলছিল, সেখানেই মিলেছে প্রমাণ। সেখান থেকে বীর্যের নমুনা পাওয়া গিয়েছে। এছাড়াও মৃত কিশোরীর এক আত্মীয়ের তরফে পুলিশের হাতে এসেছে একটা কাপড়ের টুকরো। ওই কাপড়ের টুকরোটিই এখন তদন্তের অন্যতম অস্ত্র। এর ভিত্তিতে এরই মধ্যে পুলিশ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া প্রমাণ এখনও ফরেনসিক ল্যাবে পাঠাতে পারেনি পুলিশ। এই ঘটনাটি প্রথম থেকেই তদন্তের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল পুলিশের কাছে। কারণ পুলিশের হাতে কোনও প্রমাণ আসছিল না। মৃত্যুর পর ওই কিশোরীর দেহ জবরদস্তি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল বলে অভিযোগ। ছিল না কোনও ডেথ সার্টিফিকেট, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তো দূর অস্ত। প্রাথমিকভাবে তদন্ত এগোতে বেগ পেতে হচ্ছিল পুলিশকে। পরবর্তীকালে ‘প্লেস অব অকারেন্স’-এ যেখানে পার্টি চলছিল, সেখান থেকে কিছু নমুনা পাওয়া গিয়েছে। তাতে পুলিশ মনে করছে, ওখানে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। এবার গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে সিবিআই।
আরও পড়ুন: স্কুল থেকে বাকিদের সঙ্গেই বেরিয়েছিল, দুই কিশোরীকে এক সঙ্গে ওই অবস্থায় দেখে তাজ্জব স্যাররাও!