Dilip Ghosh on Singur: ‘টাটা-ন্যানো থেকে মাছের ভেড়ি অবধি…পুরোটাই লুট!’

Kolkata: প্রশাসন সূত্রে খবর, যেসব চাষিদের তিন বিঘার উপর জমি আছে, তাঁরা এই আবেদন করলে মাছ চাষের জন্য সমস্ত সুবিধা পাবেন।

Dilip Ghosh on Singur: 'টাটা-ন্যানো থেকে মাছের ভেড়ি অবধি...পুরোটাই লুট!'
তোপ দিলীপের, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 01, 2022 | 6:56 AM

কলকাতা: ফের চাঁচাছোলা আক্রমণ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh)। সিঙ্গুরে (Singur) যে জমিতে টাটারা কারখানা (Tata Nano Singur controversy) করবে বলেছিল, সে জমিতে এখন মাছের ভেড়ি তৈরি হচ্ছে। মাটি কাটার কাজ চলছে আপাতত। কারখানার বদলে ভেড়ি? যা নিয়ে ইতিমধ্যেই তরজা শুরু হয়েছে। সিঙ্গুর ইস্যুতে ফের একবার রাজ্য সরকারকে নিশানা করলেন দিলীপ।

ফেসবুকে একটি পোস্ট করে সেখানে দিলীপ লিখেছেন,  “টাটা, ন্যানো থেকে মাছের ভেড়ি অবধি…সিঙ্গুরে কৃষকদের তিন ফসলি জমির পরিবর্তে এক টুকরো কাগজ আর ইঁট, কংক্রিটের জায়গা ফেরত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যেখানে এখন শুধুই কাশ ফুল জন্মায়। চাষের জমিতে ভেড়ি আর প্রকৃত ভেড়ি লুট ! যে মানুষগুলি তাঁকে ভরসা করেছিলেন,তাদেরকে আর কত বোকা বানাবেন দিদিমণি ?”

লেখার সঙ্গেই রয়েছে একটি ছবি। সেখানে ২০০৮ সালের সিঙ্গুর আন্দোলন, ২০১৯ সালে মমতার সিঙ্গুর যাত্রা ও  ২০২২-এ মাছের ভেড়ির জন্য জমিকাটার ছবি কোলাজ করা হয়েছে।

কার্যত, সিঙ্গুর নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। একদা বঙ্গ রাজনীতির আন্দোলনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্রে এমন আচমকা বদলে কার্যত তোপ দাগছে বিরোধীরা। কিছুদিন আগেই এই নিয়ে মুখ খুলেছিলেন দিলীপ। বলেছিলেন, কারখানার স্বপ্ন শেষ করে সে জমিতে ভেড়ি বানাতে উৎসাহ দিচ্ছে সরকার। দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ভেড়ি যেখানে চলার কথা সেখানে লুঠ হয়ে যাচ্ছে। আর যেখানে তিন ফসলি, চার ফসলি জমি সেখানে কি না ভেড়ির স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে।

সিঙ্গুরে টাটাদের প্রস্তবিত কারখানার জন্য যে জমি, সেখানেই মাছ চাষের ভেড়ি তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছেন চাষিরা। আর তাতে সমস্ত রকম সহযোগিতা করছে রাজ্য সরকার। সিঙ্গুরের পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ দুধকুমার ধারার কথায়, “পুকুর খনন থেকে শুরু করে আগামী তিন বছরের জন্য মাছের চারা, মাছের প্রয়োজনীয় খাবার, সার, ঔষধ বিনামূল্যে দেবে রাজ্য সরকার।”

প্রশাসন সূত্রে খবর, যেসব চাষিদের তিন বিঘার উপর জমি আছে, তাঁরা এই আবেদন করলে মাছ চাষের জন্য সমস্ত সুবিধা পাবেন। জেলার অ্যাগ্রো ইরিগেশন দফতরের উদ্যোগে একটি কমিটিও গঠন করা হবে চাষিদের নিয়ে। একইসঙ্গে জল ধরো, জল ভরো প্রকল্পও সমান্তরালভাবে চলবে।

সিঙ্গুরের পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ দুধকুমার ধারা জানান, কারখানা এলাকার যে সব জলা বা নিচু জমি আছে সেইসব জমিকে মাছ চাষের জন্য কাজে লাগানো হবে। এতে চাষিরাই উপকৃত হবেন বলে দাবি তাঁর। কিন্তু এমনও শোনা যাচ্ছে, এই জমি চাষের যোগ্য করে তুলতে না পারার কারণেই এই নয়া পন্থা রাজ্যের। দুধকুমার ধারা অবশ্য, সে তত্ত্ব উড়িয়েই দেন। কিন্তু প্রশ্ন তো থাকছেই।

নির্বাচন আবহেও সব রাজনৈতিক দলগুলির নজর ছিল সিঙ্গুরে। যে সিঙ্গুরে একদা কারখানা হওয়ার কথা ছিল, সে সিঙ্গুরের জমির অবস্থা এখন কেমন? চাষিরা জানিয়েছিলেন, জমিতে ফসল ফলানো সম্ভব। কিন্তু, জমিতে চাষ করার উপায় নেই। একদা কারখানার জন্য ধরে রাখা জমিতে এখন কেবল আগাছার জঙ্গল। পড়ে পড়েই নষ্ট হচ্ছে জমি। তাহলে কি সর্ষের মধ্যেই ভূত? বিরোধীরা অন্তত তাই বলছেন। নিজেদের ‘খামতি’ ঢাকতেই এখন মাছের চাষে নজর দিয়েছে সরকার।

যদিও, দুধকুমার ধারার কথায়, “সরকারের আত্মিক প্রকল্পে এই কাজ হবে। হুগলিতে অফিস আছে। সেখান থেকে চাষিদের দিয়ে একটা কমিটি তৈরি করা হবে। তিন বিঘা বা তার বেশি জমি হলে ভাল হয়। সরকারের তরফে পুকুর খনন করে দেওয়া হবে। সেই জলে মাছ চাষও হবে, অতিরিক্ত জল চাষের কাজে ব্যবহার করতে পারবে। আমরা জমিগুলোকে চাষযোগ্য করছি। মাছ চাষও একটা চাষ।”

ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন চাষি উদ্যোগী হয়েছেন মাছ চাষে। শনিবার থেকে শুরু হয়েছে পুকুর খননের কাজ। বড় বড় জেসিবি মেশিন দিয়ে চলছে পুকুর খনন। মাছ চাষে আগ্রহী এক চাষির দাবি, এই এলাকায় চাষ করা সম্ভব নয় এবং বহু জমি এখনও পর্যন্ত চাষ উপযোগী করে দেওয়া হয়নি। তাই জমি ফেলে না রেখে মাছচাষেই রাজি হচ্ছেন। সে কাজ ইতিমধ্যেই শুরুও হয়ে গিয়েছে। তাঁর বিশ্বাস, আগামিদিনে আরও অনেকেই এ পথে হাঁটবেন। তাহলে ন্যানো কারখানা থেকে ফসলি জমির স্বপ্ন পেরিয়ে সিঙ্গুর কি রাতারাতি বদলে যাবে  মাছের ভেড়িতে? উত্তর দেবে সময়, আপাতত ‘সুদিন’-এর অপেক্ষায় সিঙ্গুরবাসী।


আরও পড়ুন: Vehicle Rule 2019: জরিমানার অঙ্কে বদল নয়, চাপ দিয়ে সিদ্ধান্ত বদলেও ‘না’, কড়া বার্তা ফিরহাদের