কলকাতা : বুধবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূলের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিলেন বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। তিনি এদিন মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য থেকে শুরু করে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিলেন। উত্তর প্রদেশের রাজনীতি থেকে তেলের দাম বৃদ্ধি অনেক বিষয়েই দলের পক্ষ থেকে মতামত প্রকাশ করেন বিজেপি নেতা। এদিন বিধানসভায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেছেন, “পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে অনেক অভিনন্দন এবং অনেক অনেক ধন্যবাদ।” এদিন বিধানসভায় তৃণমূল বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন যে বিধানসভা নির্বাচনে ৭৭ টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনের পর অনেকে বিজেপি থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে এখন দেখা যাবে ৭৭ থেকে তা ৩০ এ এসে দাঁড়াতে পারে।
তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “পরিষদীয় মন্ত্রী হিসেবে তিনি এই বক্তব্য রেখে তৃণমূলের রাজনৈতিক দর্শন,তৃণমূলের দল পরিচালনা করা এবং সংসদীয় রাজনীতির প্রতি কতটা তৃণমূলের আস্থা তিনি প্রমাণ করেছেন। তিনি দল ভাঙানোর নেতা হয়ে উঠেছেন। তিনিই স্পিকারের উপস্থিতিতে বিধানসভায় অন্য দলের কর্মীর হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়েছেন। আজ পরিষদীয় মন্ত্রী এবং বর্ষীয়ান নেতা যখন এই কথা বলছেন তখন আমরা দলের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এবং অনেক অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি তাঁর এই স্পষ্ট বক্তব্যের জন্য।” উল্লেখ্য, ২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের পর একের পর এক নেতা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। সেই তালিকায় মুকুল রায়, সব্যসাচী দত্ত সহ আরও অনেকে ছিলেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার দাবি করছিলেন যে উত্তর প্রদেশে এইবার নিজের গদি টিকিয়ে রাখতে পারবে না বিজেপি। তাঁর জবাবে বিজেপি নেতা বলেছেন, “তৃণমূল কংগ্রেস বলতেই পারে যে তারা মঙ্গলগ্রহে জলের সন্ধান পেয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস কী বলল তাতে উত্তর প্রদেশের রাজনীতিতে খুব একটা কিছু যায় আসে না। উত্তর প্রদেশের মানুষ দেশের প্রধানমন্ত্রীকে চেনেন। তাঁরা গত পাঁচ বছর উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকার পরিচালনা দেখেছেন। তাঁরা নিশ্চিতভাবেই বিরাট সাফল্য তাঁকে দেবেন।” তিনি আরও বলেছেন, “অনেক বড় ব্যবধানে উত্তর প্রদেশে বিজেপি সরকার তৈরি করবে।”
পাঁচ রাজ্যের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর পেট্রল, ডিজেলের দাম বাড়ার সম্ভাবনার কথা আগেই জানা গিয়েছিল। এর উপর রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে একাধিক দেশ তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় তেলের দাম বাড়ার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই প্রসঙ্গে শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “সরকার যদি পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতায় দাম বাড়াতে চায় তাহলে আমার মনে হয় সচেতন দেশবাসী সরকারকে সহযোগিতা করবে। তাঁদের দৈনন্দিন জীবন এবং এই মূল্যবৃদ্ধিকে সঙ্গে নিয়ে কীভাবে তাঁরা চলবেন সেটা তাঁরা চিন্তাভাবনা করবেন। ” “সরকার এই বিষয়ে চিন্তিত। দেশবাসীও এই সংকটের বিষয়ে সচেতন। এখনও পর্যন্ত দাম বাড়েনি। সুতরাং এখন অবধি এই নিয়ে নতুন করে মানুষের চিন্তিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।”
উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের রাজ্য রাজনীতিতে প্রভাব কতটা পড়তে পারে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন “এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস প্রায় এক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বলে আসছেন বিজেপি ভারতবর্ষের ক্ষমতা থেকে চলে যাচ্ছে। উত্তর প্রদেশে বিজেপির ভরাডুবি আসন্ন।” তিনি আরও বলেছেন, “কার্যত উত্তর প্রদেশের নির্বাচনকে তৃণমূল কংগ্রেস ভারতবর্ষ বিশেষ করে রাজ্যবাসীর মানুষের সামনে এইভাবে উপস্থাপিত করেছে যে উত্তর প্রদেশে বিজেপির পরাজয় মানেই নরেন্দ্র মোদীর পতন। এইবারে সেটা হচ্ছে না। নিঃসন্দেহে ভারতবর্ষের রাজনীতি উত্তর প্রদেশকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। উত্তর প্রদেশের সাফল্য ব্যর্থতায় দেশের রাজনীতির উপর অনেকটা প্রভাব পড়ে। আগামিকালের ফলাফলে প্রমাণিত হয়ে যাবে যে ২০২৪ সালের ১৫ অগাস্ট দিল্লির লালকেল্লা থেকে জাতিকে সম্বোধন করবেন নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী।”
আরও পড়ুন : Suvendu Adhikary : ‘যোগী জিতছে, তাই মাননীয়া মিডিয়ার সামনে আসবেন না’, দাবি শুভেন্দুর