সুজয় পাল: নোনা ধরা দেওয়ালে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আর নরেন্দ্র মোদীর ছবি। তারই সামনে কাঠের চেয়ারে বসে বছর বত্রিশের এক তরতাজা যুবক। গত বছর জন্মদিনে কেক কাটার ঠিক আগের মুহূর্ত। একটা বছরে বদলে গেল ছবিটা। সেই যুবকই এখন ফ্রেমবন্দি। ছবিটে রজনীগন্ধার মালা। পছন্দের খাবার সাজানো থালায়। সঙ্গে রয়েছে চিপসের প্যাকেট, চকোলেট কেকও। মৃত ভাইয়ের ছবির সামনে বসে ভাইকে স্মরণ করে সেই কেকে ছুরি বসাচ্ছেন দাদা। বেঁচে থাকলে বৃহস্পতিবার ৩৩ বছরে পা দিতেন প্রয়াত বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার। এখন তিনি লাশকাটা ঘরে শুয়ে। সেই লাশের বয়স ১২০ দিন। তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে তদন্ত করছে সিবিআই।
রাজ্য-রাজনীতিতে এখন একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে, ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’। একুশের বিধানসভা ভোটের আবহে একাধিক বিজেপি কর্মীকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই তালিকায় প্রথম নামই কাঁকুরগাছির অভিজিতের। ভোটের দিন গলায় তার পেঁচানো মৃতদেহ উদ্ধার হয় অভিজিৎ সরকারের। তাঁর পরিবারের প্রথম থেকেই দাবি, বিজেপি করার অপরাধেই অভিজিৎকে খুন করা হয়েছে। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও চলছে আদালতে। সিবিআই তদন্তও শুরু করেছে।
কাকতালীয় ভাবে বৃহস্পতিবার, যেদিন অভিজিতের জন্মদিন সেদিনই আবার সিবিআই তাদের তদন্ত শুরু করল। সিবিআই-এর স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিমের ডিআইজি পদমর্যাদার আধিকারিকরা এদিন বিশ্বজিতের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর কাছ থেকে গোটা ঘটনার বিবরণ শোনেন। দু’ঘণ্টার কথোপকথনে কলকাতা পুলিশের বেশ কয়েকজন অফিসারের নাম উঠে আসে। তাঁদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলে সরকার পরিবার। যে সময় অভিজিৎকে ‘পিটিয়ে মারা’ হচ্ছিল, সে সময়ের কিছু ভিডিয়ো ক্লিপিংও তদন্তকারীদের দেখান বিশ্বজিৎ। বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার নামও সিবিআই-এর কাছে জানান বলে সূত্রের দাবি।
এদিকে অভিজিতের ‘খুনের’ বিচার করতে যখন দিল্লি থেকে তদন্তকারীর দল এসে বাড়িতে ঘুরছে, ওদিকে মায়ের তখন দম ফেলার সময় নেই। ছেলেটার যে আজ আবার জন্মদিনও। ওকে তো গুছিয়ে প্রিয় খাবারগুলো দিতে হবে। চোখের সামনে নেই ঠিকই, তা বলে মায়ের বুক থেকে তো সরাতে পারেনি কেউ! ভাত, মুগ ডাল, পাঁচ রকম ভাজা, মাছ সবটাই নিজে হাতে রেঁধেছেন অভিজিতের মা। সঙ্গে দই-মিষ্টি-কেকও সাজিয়ে দিয়েছে ছেলের ছবির সামনে। দাদা প্রতিবারই ভাইকে কিছু না কিছু উপহার দেন। এবারও ভোলেননি জামা, প্যান্ট, পারফিউমের বোতল আনতে।
যদিও অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ সরকার এদিন বলেন, “আজ আমার ভাইয়ের জন্মদিন। আর আজ থেকেই সিবিআই নিজেদের তদন্ত শুরু করল। ঘটনার পুনর্নির্মাণ করল। সিবিআই আজই বাড়িতে এল। এটাই ভাইয়ের জন্য সেরা উপহার। এবার ওর আত্মা শান্তি পাবে। ও নিশ্চয়ই বিচার পাবে।” আরও পড়ুন: ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডে এক হাজার পাতার চার্জশিট জমা পড়ল আদালতে, দেবাঞ্জন-সহ ৮ জনের নাম