ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডে এক হাজার পাতার চার্জশিট জমা পড়ল আদালতে, দেবাঞ্জন-সহ ৮ জনের নাম
গত ২২ জুন কসবা ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ড প্রকাশ্যে আসে। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেবকে তড়িঘড়ি গ্রেফতারও করে পুলিশ।
কলকাতা: ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডে চার্জশিট পেশ করল কলকাতা পুলিশ। বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতে এক হাজার পাতার এই চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেব-সহ মোট সাতজনের নাম রয়েছে চার্জশিটে। খুনের চেষ্টা, ষড়যন্ত্র, সম্মিলিত প্রতারণা-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে দেবাঞ্জন দেব-সহ বাকিদের বিরুদ্ধে। চার্জশিটে নাম রয়েছে দেবাঞ্জন দেব, রবীন শিকদার, সুশান্ত দাস, শরৎ পাত্র, অরবিন্দ বৈদ্য, অশোককুমার রায়, কাঞ্চন দেব ও শান্তনু মান্নার। ১৩০ জন সাক্ষী রয়েছেন এই মামলায়।
ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডের তদন্ত প্রথমে শুরু করেছিল কসবা থানার পুলিশ। পরবর্তী কালে লালবাজারের গোয়েন্দা শাখার হাতে সেই তদন্তভার যায়। দেবাঞ্জন দেব-সহ অনেককেই এই কাণ্ডে গ্রেফতারও করা হয়। এতদিন পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা যে তদন্ত চালিয়েছে, তাতে কী কী তথ্য উঠে এসেছে তার বিস্তারিত এদিন আদালতে জানানো হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।
এই ঘটনায় দেবাঞ্জন দেবের কী ভূমিকা ছিল, টিকার নামে যে ভুয়ো তরল দিনের পর দিন সাধারণ মানুষকে শিবির করে দেওয়া হয়েছে তাতে মূলত কী ছিল তার সমস্ত খতিয়ে দেখা হয়েছে কলকাতা পুলিশের তরফে। টিকার ভায়াল পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। সেই নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট কী এসেছে তা আদালতের কাছে যেমন তুলে ধরা হয়েছে, পাশাপাশি অভিযুক্ত দেবাঞ্জনকে যারা যারা সহযোগিতা করেছে তারা কে কী ভাবে সহযোগিতা করেছিল, এই ঘটনা সম্পর্কে আগে থেকে কতটা অবহিত ছিল, কেন এই ভুয়ো ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প খুলে সাধারণ মানুষকে ঠকানো হয়েছিল এ সংক্রান্ত যা যা তথ্য প্রমাণ এখনও অবধি তদন্তকারীদের হাতে এসেছে— সমস্ত উল্লেখ করে এদিন চার্জশিট জমা দেওয়া হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
গত ২২ জুন কসবা ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ড প্রকাশ্যে আসে। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেবকে তড়িঘড়ি গ্রেফতারও করে পুলিশ। অভিযোগ ওঠে, অনুমতি ছাড়াই চলছিল করোনার টিকাকরণ। এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেব গ্রেফতারের পর তদন্তে নিত্য নতুন তথ্য উঠে আসতে শুরু করে। তদন্তে গতি আনতে লালবাজারের তরফে সিটও গঠন করা হয়।
ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডে মোট চারটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। এর মধ্যে একটি মামলা খারিজ হয়ে যায়। বাকি তিনটি মামলা করেছিলেন বিজেপি নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারি, তাপস মাইতি ও আইনজীবী সন্দীপন দাস। বিজেপির তরফে এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তেরও দাবি তোলা হয়। গত ৯ জুলাই অবশ্য কলকাতা হাইকোর্ট রায় দেয়, ভুয়ো ভ্যাকসিন মামলায় এখনই সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন নেই।
যদিও এই ভুয়ো টিকাকরণ নিয়ে রাজনীতিও কম হয়নি। দিল্লি অবধি গিয়েছে এই অভিযোগ। ভুয়ো আইএএস অফিসার দেবাঞ্জন দেবের প্রসঙ্গ টেনে রাজ্যে টিকা বণ্টনে দুর্নীতি হচ্ছে বলে দাবি করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনকে একটি চিঠিও দেন। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবের একটি কড়া চিঠিও পৌঁছয় নবান্নে। মুখ্যসচিবকে উদ্দেশ্য করে সেই চিঠিতে লেখা হয়, শুভেন্দুর তোলা অভিযোগ নিয়ে রাজ্যকে দু’দিনের মধ্যে নিজের অবস্থান জানাতে হবে। পাল্টা এই ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল, “এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। নালিশ আসার সঙ্গে সঙ্গে যে পদক্ষেপ আমরা করেছি, এই ধরনের পদক্ষেপ আর কেউ কোনওদিন করা সাহস পায়নি।” পরিকল্পনা করে চক্রান্ত চলছে বলেও দাবি করেন তিনি। এসবের মধ্যেই ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডের চার্জশিট জমা পড়ল বৃহস্পতিবার। আরও পড়ুন: ‘এটা কী সংস্কৃতি!’, বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে ‘ঘেরাও’-য়ের নিদান ‘কেষ্টর’, পাল্টা কটাক্ষ দিলীপের