গরুকে ‘বাছুর’ বানিয়ে পাচারের বিষয়টি নজরে আসে ২০১৭ সালেই! স্বীকারোক্তি বিএসএফ-এর

ঋদ্ধীশ দত্ত |

Jan 05, 2021 | 7:26 PM

কলকাতা: অবশেষে স্বীকারোক্তির বিএসএফ (BSF) কর্তাদের। গরুপাচার (Cattle Smuggling) নিয়ে সন্দেহজনক তথ্য মিলতেই কমান্ডান্ট সতীশ কুমারকে বদলি করা হয়েছিল। মঙ্গলবার কলকাতার রাজারহাটে বিএসএফের সদর দফতরে এক সাংবাদিক বৈঠকে এমনই জানালেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট আধা সামরিক বাহিনীর দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আইজি অশ্বিনী কুমার সিং। এদিন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “২০১৭-১৮ সালেই গরুপাচারের বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। […]

গরুকে বাছুর বানিয়ে পাচারের বিষয়টি নজরে আসে ২০১৭ সালেই! স্বীকারোক্তি বিএসএফ-এর

Follow Us

কলকাতা: অবশেষে স্বীকারোক্তির বিএসএফ (BSF) কর্তাদের। গরুপাচার (Cattle Smuggling) নিয়ে সন্দেহজনক তথ্য মিলতেই কমান্ডান্ট সতীশ কুমারকে বদলি করা হয়েছিল। মঙ্গলবার কলকাতার রাজারহাটে বিএসএফের সদর দফতরে এক সাংবাদিক বৈঠকে এমনই জানালেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট আধা সামরিক বাহিনীর দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আইজি অশ্বিনী কুমার সিং। এদিন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “২০১৭-১৮ সালেই গরুপাচারের বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। তথ্য নিয়ে সন্দেহ হতেই অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছিল। তখনই ওই কমান্ডান্টকে অন্যত্র বদলি করা হয়।” স্বাভাবিকভাবেই এই বক্তব্য সাম্প্রতিককালে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

সদ্য জামিনে পেয়ে ছাড়া পেয়েছেন গরুপাচার কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত বিএসএফের কমান্ডান্ট সতীশ কুমার। আসানসোল সিবিআই (CBI) আদালত কিছুদিন আগে তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে। যদিও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের আইনজীবীরা তাঁকে আরও কিছুদিন হেফাজতে রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু আদালত সেই দাবি নস্যাৎ করে দেয়। ৫ লক্ষ টাকা ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন পান সতীশ। তবে জামিন পেলেও নিয়মিত সিবিআইয়ের দফতরে হাজিরা দিতে হবে তাঁকে।

গরুপাচার কাণ্ডের তদন্তে নেমে গত ১৮ নভেম্বর সতীশকে গ্রেফতার করেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সীমান্ত দিয়ে গরুপাচারে সক্রিয় ভূমিকা ছিল তাঁর। গোটা চক্রের অন্য আর এক পাণ্ডা এনামুল হকের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল তাঁর। এক একটি কনসাইন পিছু ৩৫ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা পেতেন সতীশ। যা নীচুতলার কর্মীদের মধ্যেও ভাগ বাঁটোয়ারা করা হত। নিজের আয় ঢাকতে স্ত্রী এবং আত্মীয়দের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিতেন তিনি।

সিবিআইয়ের কর্তারা তদন্তের পর জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭-র এপ্রিল পর্যন্ত বাংলায় বিএসএফের ৩৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ডান্ট ছিলেন সতীশ। ওই ১৬ মাসে তাঁর বাহিনী মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় ২০ হাজার গরু বাজেয়াপ্ত করেছিল। কিন্তু সেই বাজেয়াপ্ত গরুকে সরকারি খাতায় ‘বাছুর’ হিসেবে দেখানো হচ্ছিল। গরুর যা দাম, তার চেয়ে কম দামে সেগুলি স্থানীয় বাজারে নিলাম করা হত। সেখান থেকে বাছুরের দামে গরু কিনে নিত পাচারকারীরা। এই পাচার চক্রের মাথায় ছিল এনামুল হক। তাঁর তত্ত্বাবধানে নিলামে কেনা ওই গরু আবার বাংলাদেশে পাচার হয়ে যেত। গরুকে ‘বাছুর’ বানিয়ে দেওয়া বিএসএফ এবং কাস্টমস আধিকারিকদের সঙ্গে সংযোগ ছিল তাঁর। মোটা টাকা দিয়ে তাঁদের পুষিয়ে দিতেন তিনি। এমনটাই অভিযোগ।

আরও পড়ুন: লক্ষ্মীর ইস্তফা নিয়ে মমতা বললেন, ‘ও ভাল ছেলে, খেলাতে বেশি মন দিতে চায়’

এদিন বিএসএফের কর্তাদের একাংশ জানালেন, এই ধরনের গুরুতর অভিযোগ উঠলে বিএসএফের তরফে অভ্যন্তরীণ তদন্ত করা হয়। সতীশ কুমারের ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম হয়নি। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এই রাজ্য থেকে ওই আধিকারিককে অন্য রাজ্যে বদলি করা হয়। পরে সিবিআইয়ের কর্তারা তদন্তের দায়িত্ব নিলে বিএসএফের কর্তারাও তাঁদের সঙ্গে নিজস্ব তদন্ত চালিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু বিএসএফের কর্তাদের প্রথম থেকেই আরও বেশি সক্রিয় থাকা উচিত ছিল বলেই মনে করছেন তাঁরা।

এদিন আইজি বলেন, গরুপাচার আগের তুলনায় প্রায় শূন্য হয়ে গিয়েছে। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর সময় পাচারের পরিমাণ বেড়েছিল নাকি কমেছিল, তা আমি বলতে চাইছি না। কিন্তু অভিযোগ যে উঠেছে তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে পাচার হতে গিয়ে সীমান্তে গরু ধরা পড়েছিল ৩৮ হাজার ৬৫৭ টি। ২০১৯ সালে ধরা পড়ে ২৯ হাজার ৭২০টি। ২০২০ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৪৯-এ। এই তথ্য তুলে ধরে আইজি বলেন, অপরাধের ধরন বদলাচ্ছে। জওয়ানদের সতর্ক করা হয়েছে। তাঁদেরও নজরদারির ক্ষেত্রে পদ্ধতি বদল করতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: প্রজাতন্ত্র দিবসে থাকছেন না বরিস, ভারত সফর বাতিল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর!

Next Article