প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ: বঙ্গে এখন উৎসবের মরসুম। ঢাকের বাদ্যির জন্য এখন কান খাঁড়া। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন আবারও ভোটের (By-Election) দামামা বাজিয়ে দিল। উৎসবের মরসুমেই দিনহাটা, শান্তিপুর, খড়দহ এবং গোসবা বিধানসভা আসনের উপনির্বাচন। তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করলেও নির্বাচনে লড়তে হবে। তাই প্রাথমিক ভাবে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করল বামেরা।
আর প্রার্থী বাছাই করতে বসেই প্রথম হোঁচট শান্তিপুর নিয়ে। কারণ, সেখানে বাম কংগ্রেসের জোট থাকবে কি না, তা নিয়ে দুই সংগঠনের নেতৃত্ব আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে স্থির হয়েছে। যদিও কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, ভবানীপুরের সঙ্গে শান্তিপুরকে এক করে দেখার কোনও কারণ নেই। ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেই এআইসিসি (AICC) প্রার্থী দিতে চায়নি। শান্তিপুর নিয়ে সেই ছুঁৎমার্গ থাকবে না, তা আশা করা যায়।
তবে কয়েকদিন আগে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, ভোট মিটে গিয়েছে, ফলে জোটও শেষ। সেই পরিস্থিতিতে জোট নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে নারাজ বাম নেতাদের অনেকে। বরং তাঁরা কংগ্রেসের কোর্টে বল ঠেলে বলেছেন, “ওরা আগে জানাক, কী করবে। আমরা তো জোট ভাঙিনি। ওদের ভাগে থাকা ভবানীপুর ওরাই প্রার্থী দিল না।” উল্লেখ্য, শান্তিপুরে কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন আইনজীবী ঋজু ঘোষাল। যিনি দলের অন্দরে প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
যে চার আসনে উপনির্বাচন হবে, শান্তিপুর বাদে বাকি তিনটেয় প্রার্থী ছিল বামেদের। ফলে ওই তিনটি আসন নিয়ে সমস্যা হবে না বলেই দাবি বাম নেতৃত্বের। প্রার্থী বাছাইয়ে প্রাথমিক ভাবে যা আলোচনা চলছে বামেদের অন্দরে, সে ক্ষেত্রে দিনহাটায় প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের আব্দুর রউফ। গোসবার আসনে বামেদের হয়ে লড়াই করতে পারেন আরএসপির অনিলচন্দ্র মণ্ডল। খড়দহে রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কাস্তে হাতুড়ি তারা চিহ্নে লড়তে পারেন ছাত্র যুব আন্দোলনে নেতা দেবজ্যোতি দাস।
ভবানীপুর উপনির্বাচনে একেবারে বাজে ভাবে হার হয়েছে বাম প্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাসের। যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাপ্ত ভোট ৮৫ হাজার ২৬৩। বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের প্রাপ্ত ভোট ২৬ হাজার ৪২৮। সেখানে সিপিএমের প্রতীকে লড়ে শ্রীজীব পেয়েছেন মাত্র ৪ হাজার ২২৬টি ভোট। অর্থাৎ তিন দশক ধরে যে দল বাংলায় রাজত্ব করেছে, সেই দল নিয়ে এখন রাজনৈতিক আলোচনাতেই অনীহা বঙ্গবাসীর।
যদিও ভবানীপুরের ফল প্রকাশের পরই বিমান বসু বলেছিলেন, “রেজাল্ট যা হওয়ার ছিল, তাই হয়েছে। এই ভোটে খুব ব্যাতিক্রমী কিছু রেজাল্ট হবে বলে মনে করিনি। তবে এবার কিছু মানুষ যারা নিয়মিত ভোট দেন, তাঁরা এই নির্বাচনে ভোট দেননি।” যদিও বিমান বসু স্বীকার করে নিয়েছেন, বামেদের ভোটের শতাংশ বাড়বে, এটা ভাবনাচিন্তার মধ্যে তাঁদের ছিল না। তবে লড়াইয়ের ময়দান বামেরা যে ছাড়ছে না, উপনির্বাচন নিয়ে তোড়জোর দেখে এ কথা বলাই যায়।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: এবার মমতার শপথপাঠ নিয়ে তৈরি হল জটিলতা, রাজভবন থেকে আসছে না সবুজ সঙ্কেত