Calcutta High Court: ‘২০১২ সালের আইনে সংশোধনী আনলেন না কেন?’, OBC মামলায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল আদালত
Calcutta High Court: বিচারপতি রাজা শেখর মান্থা: এখনো পর্যন্ত রাজ্যের তরফে বিভিন্ন বিষয়ে যে চার থেকে পাঁচটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তার মাধ্যমে সরাসরি আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে।

কলকাতা: ওবিসি (OBC) মামলায় ধাক্কা রাজ্যের। রাজ্যের জারি করা নতুন বিজ্ঞপ্তির উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ। ১৪০টি জনজাতিকে নিয়ে গঠিত নতুন বিজ্ঞপ্তির উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল আদালত। তবে যাঁরা ১৯৯৩ সালের আইন অনুযায়ী ২০১০ সালের আগে ওবিসি সার্টিফিকেট পেয়েছেন, তাঁদের চাকরি বা ভর্তির নিয়োগে বাধা থাকছে না।
এজলাসে বিচারপতিরা কী বললেন?
বিচারপতি রাজা শেখর মান্থা: এখনো পর্যন্ত রাজ্যের তরফে বিভিন্ন বিষয়ে যে চার থেকে পাঁচটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তার মাধ্যমে সরাসরি আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে।
বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী: আমরা আগেও বলেছি ওবিসি শ্রেণীভুক্ত ৬৬ টি সম্প্রদায়কে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুন। আপনারাও বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপেক্ষা করছেন। আমরাও বলেছি যে ঠিক আছে তাহলে সেই অবধি কোনও পদক্ষেপ করবেন না।
বিচারপতি রাজা শেখর মান্থা: আপনারা ২০১২ সালের ওবিসি আইন অনুযায়ী অর্ধেক কাজ করেছেন। তারপর আবার ১৯৯৩ সালের আইনে ফেরত গিয়েছেন। এটা কেন ? আপনারা কেন ২০১২ সালের আইনে সংশোধনী আনলেন না?
মামলার ব্যাকগ্রাউন্ড
উল্লেখ্য, গত বছরের মে মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ ২০১০ সাল থেকে ৬৬টি সম্প্রদায়কে দেওয়া ওবিসি শংসাপত্র বাতিলের নির্দেশ দেয়। প্রায় ১২ লক্ষ শংসাপত্র বাতিল করা হয়। হাইকোর্টের রায় ছিল ২০১০ সালের আগে ৬৬টি সম্প্রদায়ের ওবিসি সার্টিফিকেট বৈধ। তারপর সব শংসাপত্র বাতিল করে আদালত। উচ্চ আদালতের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায়। শীর্ষ আদালত হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়নি। মামলা সেখানে চলছে।
এ দিকে, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মতো নতুন করে তালিকা তৈরি করতে শুরু করে রাজ্য। কিন্তু সেখানে কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে তড়িঘড়ি নতুন ওবিসি তালিকা প্রকাশের অভিযোগ ওঠে রাজ্যের বিরুদ্ধে। নতুন তালিকার উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে ফের মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে।
মামলাকারীদের বক্তব্য, হাইকোর্টের রায় মেনে সমীক্ষা করা হয়নি। তবে রাজ্য সে সময় জানিয়েছিল আদালতের নির্দেশ মেনেই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। মামলাকারীদের বক্তব্য ছিল, কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পেশাগত ভাবে ভিন্ন রাজ্যের প্রতিটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমীক্ষা করতে হবে। তবে অভিযোগ, রাজ্য জেলাভিত্তিক কয়েকটি পরিবারের মধ্যেই সমীক্ষা করেছে। তাঁদেরও এও দাবি, আগের প্রকাশিত তালিকার সঙ্গে বর্তমান তালিকার অল্প কিছুই তফাৎ আছে। এরপর সোমবার রাজ্য শুনানির সময় বলে, ওবিসি মামলার জন্য কলেজে ভর্তি থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া সব আটকে আছে। তখন বিচারপতি মান্থা বলেন, “কোথাও নিয়োগ বা ভর্তি বন্ধ রাখার কথা আদালত বলেনি।”
মামলাকারীদের মূল বক্তব্য, কোথায় কত জনসংখ্যা রয়েছে তার সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্যই রাজ্যের কাছে নেই। এর জন্যই সঠিক সমীক্ষার প্রয়োজন। এমনকী, নতুন কোনও জনগোষ্ঠীকে ওবিসি-র তালিকায় আনতে গেলে বিধানসভায় বিল পেশ করতে হয়। তবে সেটাও রাজ্য করেনি। এরপরই রাজ্যের বিজ্ঞপ্তি খারিজের আবেদন জানান মামলাকারীরা। এরপর আজ ১৪০টি জনজাতিকে নিয়ে গঠিত নতুন বিজ্ঞপ্তির উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল আদালত।
তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “এখন কী হবে হাইকোর্টকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আদালতের হস্তক্ষেপের দুটো প্রধান কারণ হতে পারে। প্রথম হল, এই তালিকা নিয়ে প্রতিবাদ আছে। দ্বিতীয় হল, কোর্ট বলছে, যে ভাবে কাজ হয়েছে তা সঠিক হয়নি। তার মানে তালিকা ঠিক আছে, কিন্তু কাজের পদ্ধতি ঠিক নেই। তাহলে কোর্ট যে ভাবে বলবে সরকারও সেইভাবে কাজ করবে।”

