Babita Sarkar: আদালতে নতুন করে ভাগ্য লেখা হল তাঁর… এজলাসে বসে ঝাপসা চোখে শুনলেন ববিতা
Babita Sarkar Case: আইনজীবী গতকালই জানিয়েছিলেন, আসতে হবে। টিকিট পাবেন না তাই বাসে করে এসেছেন ভোরে। শেষ পর্যন্ত ববিতার চাকরি বাঁচেনি। এমনটা যে হতে পারে তা হয়ত অনুমান করেছিলেন জানুয়ারিতেই। তবুও হাল ছাড়েননি।
কলকাতা: এই এজলাসে বসেই সেদিন আদালতের নির্দেশের অপেক্ষা করছিলেন ববিতা। আদালতের নির্দেশে মুখে হাসি ফুটেছিল। এতদিনের লড়াই, সংগ্রামের পর বেকারত্বের অন্ধকার কেটেছিল। এই এজলাসে বসেই সেদিন চাকরি নির্দেশ শুনেছিলেন ববিতা (Babita Sarkar)। নতুন জীবনের কথা ভেবে, এতদিন ধরে একটু একটু করে বুনে আসা স্বপ্নগুলোর কথা ভেবে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলেন। তারপর দীর্ঘ কয়েক মাস পেরিয়ে আজ আবারও আদালতে ববিতা। সেই একই এজলাসে। সেদিন যতটা উৎকণ্ঠা ছিল, এদিন হয়ত আরও বেশি উৎকণ্ঠা। আদালতের নির্দেশের অপেক্ষায় ববিতা। আজও চাকরির নির্দেশ এল। তবে ববিতার নয়, তাঁর প্রতিপক্ষ অনামিকা রায়ের চাকরির নির্দেশ। আর কোপ পড়ল ববিতার চাকরিতে। যে আদালতের যে এজলাসে বসে একদিন নিজের চাকরি পাওয়ার কথা শুনেছিলেন, আজ সেই আদালতের সেই এজলাসে বসেই শুনলেন চাকরি হারানোর কথা। সাম্প্রতিক অতীতে এমন ঘটনা নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন আইনজ্ঞ মহল।
পরেশ-কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীর (Ankita Adhikari) চাকরি বাতিল করে ববিতা সরকারকে (Babita Sarkar) চাকরি দিয়েছিল আদালত। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর চাকরি পেয়েছিলেন ববিতা। বেকারত্বের অন্ধকার ঘুচে আলোয় ফিরেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Justice Abhijit Ganguly) নির্দেশের পর আবারও ‘বেকার’ তিনি। সব স্বপ্ন যেন নিমেষে শেষ হয়ে গেল। আদালত কক্ষে ভেঙে পড়লেন ববিতা। স্বামী সঞ্জয় কর্মকার সারাক্ষণ পাশেই ছিলেন। গলা রুদ্ধ হয়ে এসেছে শুরুতেই। তাঁর মুখেও চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। গতকাল আইনজীবী জানিয়েছিলেন আসতে হবে। টিকিট পাবেন না তাই বাসে করে এসেছেন ভোরে। শেষ পর্যন্ত ববিতার চাকরি বাঁচেনি। এমনটা যে হতে পারে তা হয়ত অনুমান করেছিলেন জানুয়ারিতেই। তবুও হাল ছাড়েননি। নিজের বাড়ি থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে যেতেন চাকরি করতে।
প্রথমে মামলা জিতে একটি সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনেছিলেন ববিতা। কিন্তু ক্রমাগত রাজনৈতিক চাপের মধ্যে স্বামী তাঁকে একা ছাড়তে পারেননি। এই টানাপোড়েনের মধ্যে দুই সন্তানের পড়াশোনাও বিঘ্নিত হয়েছে। এখন আদালতের নির্দেশের পর টাকা কীভাবে শোধ করবেন, সেই উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না ববিতা। এদিন মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই ঘটনা ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেও মন্তব্য করেন। এজলাসে ববিতার চোখ তখন ঝাপসা। সৌভাগ্য এনে দেওয়ার জন্য হাইকোর্টকে ভগবানের জায়গা বসিয়েছিলেন ববিতা। এবার সেই আদালতেই সেই এজলাসেই তাঁর ভাগ্য লেখা হল নতুন করে, তবে এবার একটু অন্যভাবে।
একটা সময় ছিল, যখন চাকরির দাবিতে নাগাড়ে আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন ববিতা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন তিনি। আদালতে গিয়েছিলেন চাকরির দাবিতে। মামলায় প্রতিপক্ষ যে সে কেউ নন, হেভিওয়েট মন্ত্রী-কন্যা। প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতার চাকরির বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছিলেন। সেই মামলায় জিতে চাকরিও পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই মামলায় আবার উঠে আসেন নতুন দাবিদার। নতুন করে মামলা গড়ায় আদালতে আর তারপর আজ যেন এক লহমায় সব স্বপ্ন আবার ভেঙে চুরমার হয়ে গেল ববিতার।