কলকাতা: প্রশ্নের মুখে ১৬৯টি কলেজের পরীক্ষা। চরম উদ্বেগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। সূত্রের খবর, বারবার রাজ্য সরকারের অনুমতি চেয়েও সিন্ডিকেটের বৈঠক ডাকতে ব্যর্থ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজ্যপাল নিযুক্ত অস্থায়ী উপাচার্য শান্তা দত্ত। ৫-৬ বার অনুমতি চেয়েও, তা মেলেনি বলে দাবি অস্থায়ী উপাচার্যের। সিন্ডিকেটের বৈঠক ডাকতে না পারলে পাশ হবে না পরীক্ষা বিধি। আগামী এক’দুমাসের মধ্যে পরীক্ষা করানোর কথা। সেক্ষেত্রে পরীক্ষা বিধি নির্ধারিত না হলে কীভাবে নেওয়া হবে পরীক্ষা। তারপর ফলপ্রকাশের ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে। চরম উদ্বেগে প্রহর গুনছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। সন্ধিহান পরীক্ষার্থীরাও।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরেই গোটা দেশে জাতীয় শিক্ষানীতি বলবৎ হয়েছে। পরীক্ষা পদ্ধতিতে বদল এসেছ। ফলে এবছর নতুন পরীক্ষা বিধি প্রয়োজন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মিটিং অর্থাৎ সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণ কমিটি থেকে সেই পরীক্ষা বিধি পাশ হতে হবে। কিন্তু সেখানেই জটিলতা। সূত্রের খবর, অস্থায়ী উপাচার্য যত বার এই বৈঠক করতে চাইছেন, সরকার সেই বৈঠকের অনুমতি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ। ফলে বেকায়দায় পড়েছেন অস্থায়ী উপাচার্য। তিনি বলেন, “আমি পড়ুয়াদের জন্য বেদনায় আছি। কষ্ট পাচ্ছি।”
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতেই বেশ খানিকটা অসুবিধা হচ্ছে বলে দাবি করেন অস্থায়ী উপাচার্য শান্তা দত্ত। ঠিক কী বললেন তিনি? তাঁর মতে, “আমি ৬টা সিন্ডিকেট মিটিং করেছিলাম। সেগুলির ওপর অনেক কাজই হয়েছে। যে পলিসি মেকিংয়ের প্রশ্ন রয়েছে, যেমন ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসির সবটা পার্ট পেরিয়ে এসে, একটা জায়গায় আটকে গিয়েছে। এক্সামিনেশন রেগুলেশন। আমাদের ১৬৯ কলেজ রয়েছে। এখানে জাতীয় শিক্ষানীতি চালু হয়ে গিয়েছে। ওরা অপেক্ষা করে বসে রয়েছে, কবে পরীক্ষা বিধি চালু হবে। কিন্তু আমরা দিতে পারছি না। রাজ্য সরকার আমাদের বলেছিল অস্থায়ী উপাচার্যকে একটা অনুমতি নিতে হবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের থেকে। আমি ৫-৬ বার অনুমতি চেয়েছি। কিন্তু সেই অনুমতি এখনও পাইনি। কেন যে দেওয়া হচ্ছে না, সেটা সরকারই বলতে পারবে।”
প্রসঙ্গত, গোটা দেশে জাতীয় শিক্ষানীতি চালু হওয়ার পর রাজ্যের তরফেও একটি শিক্ষানীতি তৈরি করা হয়। সেই শিক্ষানীতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ধীরে ধীরে কার্যকরও করা হচ্ছে। রাজ্যের গাইডলাইনে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রের বেশিরভাগ নীতিই জাতীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এক্ষেত্রে বিশেষ কোনও বদল আনা হয়নি। তাই পরীক্ষা বিধির ক্ষেত্রেও খুব একটা সমস্যা হবে না বলে মনে করেন অনেকে। তা সত্ত্বেও কেন সিন্ডিকেট বৈঠক ডাকার অনুমতি পাচ্ছেন না উপাচার্য? রাজ্যপাল দ্বারা নিযুক্ত বলেই কি অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁকে, প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষামহলের কেউ কেউ।
যদি জাতীয় শিক্ষা নীতির ভিত্তিতে পরীক্ষা বিধি না আসে তাহলে কী ভাবে সমস্যায় পড়তে পারেন পরীক্ষার্থীরা? জানালেন এজেসি বোস কলেজের প্রিন্সিপাল পূর্ণচন্দ্র মাইতি। তাঁর বক্তব্য, “যদি নতুন পরীক্ষা বিধি না আসে, তাহলে পুরনো নিয়মেই আমরা পরীক্ষা নেব। কোনও অসুবিধা হবে না। কিন্তু ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলি যে নীতিতে পরীক্ষা নেবে, আমরা তা থেকে বিচ্যুত হব।”
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে। তিনি আবার স্পষ্ট বলেই দিলেন, “সিন্ডিকেটের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না।” ফলে দোটানায় পড়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য। সমস্যায় পরীক্ষার্থীরাও।