কলকাতা: কন্যাশ্রী দিবসের অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে ‘জয় ইন্ডিয়া’ শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। সোমবার আলিপুরের ধনধান্য স্টেডিয়ামে কন্যাশ্রীদের নিয়ে এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণের একেবারে শেষপর্বে সকলকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়েই ‘জয় হিন্দ, বন্দে মাতরম, জয় বাংলা’র সঙ্গে ‘জয় ইন্ডিয়া’ও বলেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার মেধা, বাংলাকে কেউ যেন থামাতে না পারে। চমকাতে না পারে।”
কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্মলগ্ন থেকে এখনও অবধি বিশ্বের দরবারে এই প্রকল্প ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে বলে এদিন মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “আজ কন্যাশ্রী একটা ব্র্যান্ড। সারা বিশ্বের বুকে এই ব্র্যান্ডের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। আমি বিশ্বাস করি এটা একদিন ইন্টারন্যাশনাল গার্ল চাইল্ড ডে হিসাবে সারা পৃথিবীতে উদযাপিত হবে। বিশ্বের যত দেশ সকলে প্রতিযোগিতায় ছিল। কন্যাশ্রী প্রথম হওয়ার পর গর্বে আমার বুকটা ভরে গিয়েছিল। আমি নেদারল্যান্ড যাই পুরস্কার নিতে। যেদিন এই প্রকল্প চালু করেছিলাম, একটা লোগো দরকার। একটা গরিব মেয়ের অবয়ব করে দিলাম নিজে হাতে। কন্যাশ্রী যে গানটা তোমরা শুনছ, গানটির লেখা এবং সুর দু’টোই আমার।”
এদিনের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্কুলের কন্যাশ্রীরা উপস্থিত ছিল। মুখ্যমন্ত্রী তাদের সামনে একেবারে তাদের মতো করেই বক্তব্য রাখেন। উৎসাহ দেন প্রত্যেক পড়ুয়াকে। এই অঙ্কুরই যে আগামীর বটবৃক্ষ, সে কথাও বলতে শোনা যায় তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ‘শ্রেষ্ঠাশ্রী’, ‘সর্বশ্রী’দের উদ্দেশে বলেন, “শুধু দেশের সেরা নও, তোমরা বিশ্বসেরা। আমি বিশ্বাস করি বিশ্বসেরা হিসাবে বিশ্বের মানচিত্রে তোমরা বাংলাকে তুলে নিয়ে যাবে। আর সেদিন গর্ব করে বলবে, আমি একজন কন্যাশ্রী। আমি কন্যাশ্রী থেকে এ জায়গায় এসেছি।”
স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে রাজ্য়ে কন্যাশ্রী দিবস পালিত হয়। এদিন সেই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী পড়ুয়াদের স্মরণ করিয়ে দেন, দেশমাতৃকার স্বাধীনতায় বাংলার বীরসন্তানদের বীরগাঁথা। মমতা বলেন, “স্বাধীনতার লড়াই বাংলা থেকে হয়েছিল। আন্দামান জেলে যতজনের নাম আছে, তার মধ্যে ৯০ শতাংশ বাংলার নাম। এরপরই পঞ্জাব। স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার ভূমিকা সকলেরই জানা।” বাংলা যে সংহতির পীঠস্থান, একথাও এদিন বলতে শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তাঁর পরামর্শ, মাঝেমধ্যে পড়ুয়াদের নিয়ে আলিপুর মিউজিয়ামে ঘুরিয়ে আনুন।
তবে এদিনের মঞ্চে মমতার ‘জয় ইন্ডিয়া’ ধ্বনি নিয়ে বিভিন্ন মহলে চর্চা শুরু। সম্প্রতি কেন্দ্র সরকার বিরোধী একাধিক রাজনৈতিক দল এক ছাতার তলায় এসে যে ‘জোট’ তৈরি করেছে, তার নাম ‘I.N.D.I.A’। আর এই ‘ইন্ডিয়া’র গুরুত্বপূর্ণ শরিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল। তিনি নিজে এই ‘ইন্ডিয়া’র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুখ। বিভিন্ন জায়গায় এ নিয়ে তাঁকে বলতেও শোনা গিয়েছে। তবে সোমবার কন্যাশ্রীর মঞ্চে তাঁর ‘জয় ইন্ডিয়া’ ধ্বনি দেশের জন্য জয়ধ্বনি নাকি জোটের জয়ধ্বনি তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।