কলকাতা: স্কুল নয়, যেন নরক! দৃষ্টিহীন শিশুদের স্কুলের ভিতরে চলত অবাধ যৌন নির্যাতন। ধর্ষণ, যৌন হেনস্থা হয়ে উঠেছিল নিত্যদিনের বিভীষিকা। প্রতিবাদ করতে গেলে জুটত মার, ঠাঁই হত অন্ধকার ঘরে, বন্ধ হয়ে যেত খাবার। এমনই অভিযোগ উঠছে হরিদেবপুর থানা এলাকার এক দৃষ্টিহীনহীন জন্য স্কুলের বিরুদ্ধে। শিশু সুরক্ষা কমিশনের তরফে উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সম্প্রতি কমিশনের তরফে এক মহিলা কোনও পরিষেবা সংক্রান্ত কাজে ওই হোমে গিয়েছিলেন। এরপরই নাকি ওই স্কুলের আবাসিক পড়ুয়ারা মহিলাকে সামনে পেয়ে বলতে থাকে, ‘আমাদের বাঁচান।’ অভিযোগ শুনে আর দেরী করেননি ওই মহিলা। এরপর শিশু সুরক্ষা কমিশনের কাছে যায় খবর। বিষয়টা খুবই স্পর্শকাতর বলে অনুমান করেই কমিশন খবর দেয় লালবাজারে।
অনন্যা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এটি একটি বেসরকারি স্কুল। সরকারি কোনও আর্থিক সাহায্যও পায় না। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে ভিতরে কী হতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, স্কুলের পড়ুয়ারা প্রথমটায় মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছিল। পরে বিস্ফোরক সব অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। নিয়মিত যৌন নির্যাতনের কথা তারা পুলিশ ও কমিশনকে জানায়। এক পড়ুয়া জানিয়েছেন, ১০ বছর বয়স থেকে তার ওপর চলছে নির্যাতন। মূলত বয়ঃসন্ধির পর থেকেই ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন করা হত বলে অভিযোগ। প্রতিবাদ করলে অন্ধকার ঘরে রেখে দেওয়া হত তাদের! কখনও কখনও একদিন অন্তর খেতে দেওয়া হত বলেও অভিযোগ উঠেছে।
শুধু তাই নয়, অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়েছিল। তড়িঘড়ি তার গর্ভপাতও করানো হয়! কোথা থেকে এই গর্ভপাত করানো হয়েছে, তা পুলিশকে খুঁজে বের করতে বলেছে শিশু সুরক্ষা কমিশন। কারণ যার সঙ্গে ওই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ, সেও এক নাবালিকা। তার গর্ভপাত কীভাবে করা হল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
কমিশন জানিয়েছে, পড়ুয়াদের বয়ান অনুযায়ী একবার দুই জন শিক্ষিকার কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। তাঁরা প্রতিবাদ করলে তাঁদের চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ওই স্কুলের অধ্যক্ষা সব জানতেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। কমিশন জানিয়েছে, পড়ুয়াদের মধ্যে অনেকেই চোখে দেখতে পায় না। অনেকেরই বাবা, মা নেই। অসহায় অবস্থা। ইতিমধ্যেই তিনজনকে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে, স্কুলের অধ্যক্ষা, মালিক ও রান্নার লোককে।