কলকাতা: এসি সারাইয়ের কাজ যখন করতেন, তখনও সংসারের চাল নুন কেনার গার্হস্থ্য অনুশাসনেই জীবন জেরবার ছিল মানিকের। কিন্তু মাত্র আড়াই বছরেই তাঁর জীবনযাত্রায় ব্যাপক বদল লক্ষ্য করতে পেরেছিলেন প্রতিবেশীরা। পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে, কথাবার্তা, জীবনযাপনে অদ্ভুত পরিবর্তন। কিন্তু তাঁর উত্থানের নেপথ্যে যে এই কারণ থাকতে পারে, তা কল্পনাও করতে পারেননি প্রতিবেশীরা। সিআইডি যখন শিশু পাচার চক্রের অভিযোগে মানিক হালদারকে গ্রেফতার করে, তখন চমকে ওঠেন প্রতিবেশীরাও। বাংলায় একটা বড়সড় শিশু পাচার চক্রের হদিশ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। আর তাতে কানেকশন রয়েছে বিহারের। রবিবারই শালিমার স্টেশনের বাইরে থেকে এই চক্রের মূল পাণ্ডা মানিক হালদার ও এক মহিলাকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
জানা যাচ্ছে, বিহারের অনুমোদনহীন নার্সিংহোম থেকে সদ্যোজাত শিশু কিনে এনে বাংলায় বিক্রি করতেন মানিক। সামাজিক মাধ্যমেই চলত ডিল। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, মানিক আগে এসি সারাইয়ের কাজ করতেন। সেই সূত্রে বিভিন্ন IVF সেন্টার ও নার্সিংহোমে তাঁর যাতায়াত ছিল। সেখানে গিয়ে মানিক বুঝতে পারেন, অনেক নিঃসন্তান দম্পতি বাচ্চার খোঁজ করেন। আড়াই বছর আগে ফেসবুকে একটি পেজ খোলেন। দত্তক কীভাবে নেওয়া যায়, সেই সংক্রান্ত একটি পেজ খোলেন মানিক। সেই পেজে অনেকে যুক্ত হন। কারোর বাচ্চা প্রয়োজন, সেরকম সংক্রান্ত কোনও আবেদন এলে, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হত। দম্পতির সঙ্গে কথাবার্তা ফাইনাল করে অগ্রিম বাবদ অর্ধেক টাকা মানিককে আগে দিতে হত।
৩-১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দর বাঁধা ছিল। সেক্ষেত্রে কোনও দম্পতি পুত্র সন্তান চাইলে, তাঁকে ১২ লক্ষ টাকা দিতে হত। ৬ লক্ষ টাকা নগদে অগ্রিম দিতে হত মানিককে। এরপর মানিক বিহারের তাঁর চক্রের অন্য পাণ্ডাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। তাঁদের সঙ্গে ওই অবৈধ নার্সিংহোমের যোগ থাকত। সেখান থেকেই শিশু এনে তাঁরা বিক্রি করতেন বলে অভিযোগ। এরপর শিশু পৌঁছে যেত সংশ্লিষ্ট দম্পতির কাছে। কন্যা সন্তানের জন্য দর উঠত তুলনামূলক কম। মানিককে নিয়ে ইতিমধ্যেই বিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন সিআইডি তদন্তকারীরা।