অবশেষে স্বাস্থ্য ভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ পঞ্চম দিনে পড়েছে ডাক্তারদের আন্দোলন। সেই আন্দোলন স্থলেই পৌঁছে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে রয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার।
পাঁচ দফা দাবি নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে আন্দোলন করছেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে বৈঠক করতে নবান্নেও গিয়েছিল আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের প্রতিনিধি দল। তবে লাইভ স্ট্রিমিং-এর শর্ত না মানায়, বৈঠক না করেই ফিরে যান তাঁরা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: তোমরা ভিজো না। আমার সঙ্গে কথা বলেছিলে বলে তোমাদের ডাকা। আজ তোমাদের থেকে কিন্তু অনুরোধ এসেছিল। সেখানে কোথাও লাইভ স্ট্রিমিংয়ের কথা লেখা ছিল না। লক্ষ্মীভাই বোনরা। তোমরা মানুষের স্বার্থে বুঝবে। তোমরা আমার সঙ্গে কথা না বলতে পারো। এক কাপ চা খেয়ে যাও।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: যেহেতু কোর্টে ব্যাপারটা বিচারাধীন। তবে তোমাদের মিটিংয়ের মিনিটস আমি করে দেব। কিন্তু কপি আজ দিতে পারব না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: আর আপনারা যদি বাড়িতে এসে মিটিং না করেন তাহলে এত অসম্মান করলেন কেন আমায়? আপনারা অনেক অসম্মান করেছেন। আগেও তিনদিন দু’ঘণ্টা করে অপেক্ষা করেছি। এইটুকু সম্মান তো দেবেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: আমি আন্দোলন করা লোক। আন্দোলন থেকে উঠে এসেছি। আমি জানি না কারা এর মধ্যে আছে কারা নেই। তবে বলব রাজনীতি ভুলে মানুষের স্বার্থে কথা বলুন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: যদি তোমরা কথা বলতে না চাও তাহলে বলব ভিজো না। তোমরা ভিডিয়োর কথা লেখোনি। স্বচ্ছতা থাকবে। সুপ্রিম কোর্ট থেকে অনুমতি নিয়ে তবেই কপি দেব। আমি কথা দিচ্ছি এই ভিডিয়ো আমরাও ব্যবহার করব না।
লাইভ স্ট্রিমিং নিয়ে অনড় আন্দোলনকারীরা। তবে এই বার তাঁরা দু’তরফের ভিডিয়ো রেকর্ডিংয়ের দাবি জানান। তবে তাতেও সম্মতি মেলেনি বলে খবর।
প্রথম থেকেই লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবি নিয়ে অনড় ছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তবে মুখ্য়মন্ত্রী কালীঘাটে বৈঠক ডাকার পর লাইভ স্ট্রিমিং হবে কি না সেই বিষয়ে সাংবাদিকদের স্পষ্ট কোনও উত্তর দেননি জুনিয়র ডাক্তাররা। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছিল যেভাবে তাঁরা অনড় ছিলেন লাইভ স্ট্রিমিংয়ের বিষয়টিতে, তাহলে হয়ত সরে যাচ্ছেন তাঁরা। তবে সূত্রের খবর, কালীঘাটে পৌঁছে প্রথমে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবি জানাবেন তাঁরা।
বিস্তারিত পড়ুন: Junior Doctor’s Protest: লাইভ স্ট্রিমিং করতে না দিলে কী করবেন জুনিয়র ডাক্তাররা?
কালীঘাট পৌঁছল জুনিয়র চিকিৎসকদের দল। পনেরো জনকে যেতে বলা হয়েছিল কালীঘাট। তবে ৩৫ জন ঢুকলেন সেখানে। আর আন্দোলনকারীদের ছাতা দিয়ে সহযোগিতা করছে পুলিশ। তবে ৩৫ জনই ভিতরে ঢুকতে পারছেন কি না তা জানা যায়
শনিবার জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে কালীঘাটে ডেকেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জুনিয়র চিকিৎসকরা এ দিন ইমেল পাঠিয়ে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে বলবেন তাঁরা সেইখানেই বৈঠক করবেন। এরপরই আলোচনা চেয়ে রাজ্য সরকারের তরফে ফের ইমেল আসে জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে। সেই ইমেলে উল্লেখ করা হয়েছে পনেরো জন বৈঠকে যোগ দিতে পারবেন। তবে দেখা গেল একটি বাসে মোট ৩৫ জন উঠে কালীঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন তাঁরা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়ে তাঁকে ইমেল করেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁদের স্পষ্ট বার্তা ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্থান-কাল জানালেই তাঁরা সেইখানে পৌঁছে যাবেন। জুনিয়র চিকিৎসকরাও রাজ্য সরকারের মতোই চাইছেন খোলা মনে আলোচনা করতে। এরপর আজ ধরনা মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চলে যাওয়ার পর তাঁকে ইমেল করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সেই চিঠির জবাব দিয়েছেন মুখ্যসচিব। বৈঠকে ১৫ জন উপস্থিত থাকতে পারবেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ
হঠাৎ স্বাস্থ্যভবনে হাজির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃষ্টি ভেজা দুপুরে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, “একটা টেন্ডার কেস আমার কাছে আসেনি। রোগী কল্যাণ সমিতি কী কাজ করে, আমি জানিনা। আমার আন্ডারে আসে না। অভিযোগ পেলে নিশ্চয় তদন্ত করব। প্রমাণিত হলে সাজা দেব।”
“দোষীরা কেউ আমার বন্ধু নয়। আপনারা ভাবছেন কেউ আমার বন্ধু। কিন্তু আমি তাদের চিনি না, জানিনা, আমাদের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। যারা এসেছে, তারা প্রসেসের মাধ্যমে এসেছে। খুন, দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলে, কথা বলে অ্যাকশন নেব।”
আন্দোলনকারীদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করে মমতা বলে, “আমি আপনাদের একজন সহযোদ্ধা হিসেবে এসেছি। আপনাদের বিরুদ্ধে আমি কোনও ব্যবস্থা নেব না। আমি মুখ্যমন্ত্রী নই। আমি দিদি হিসেবে এসেছি। আমি চাইনা আপনাদের কোনও ক্ষতি হোক। আমি আপনাদের কাছে আবেদন করে গেলাম, জোর করতে পারি না।”
“আপনারা কাজে যোগ দিন। আমি আপনাদের দাবিগুলো দেখব। আমি একা সরকার চালাই না। আমি অফিসারদের সঙ্গে কথা বলব। আমাকে একটু সময় দিন। আপনাদের প্রতি আমি কোনও অবিচার করব না। কাজে ফিরুন। অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।
আমি সব হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতিতে অধ্যক্ষদের চেয়ারম্যান করব। জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্স ও পুলিশ থাকবে তাতে। আরজি কর সহ সব কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দিলাম।”
“আমি পাঁচ মিনিট সময় নেব। আমাকে বলতে দিন। আমি অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি। আমার নিরাপত্তার কথা না ভেবেই নিজে ছুটে এসেছি। কারণ আমি আপনাদের আন্দোলনকে কুর্ণিশ জানাই। আমি নিজে অনেক সাফার করেছি। আমার পোস্টটা বড় কথা নয়। মানুষের পোস্টটাই বড় কথা।
কাল সারারাত ঘুমোতে পারিনি। আমারও কষ্ট হয়েছে। আপনারা যেভাবে বসে আছেন, তাতে আমার মানসিকভাবে কষ্ট হচ্ছে। ৩৩-৩৪ দিন আমিও রাতের পর রাত ঘুমোইনি। আপনারা যখন রাস্তায় থাকেন আমাকেও পাহারাদার হিসেবে জেগে থাকতে হয়।”
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে মমতা বলেন, আমি অনেক চিন্তা করি। চিন্তা করেই এসেছি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পৌঁছতেই স্লোগানে উত্তাল আন্দোলনের মঞ্চ। উঠল উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান। আন্দোলনকারীদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমাকে বলতে দিলে আমি খুশি হব। আমি আপনাদের আন্দোলনকে সমর্থন করি। আমি ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা লোক।”