কলকাতা: দুর্গাপুজোয় কলকাতার রাস্তায় এখন থিকথিক করছে ভিড়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত… কলকাতার রাস্তায় মানুষের ঢল আরও বাড়ছে। কারও মুখে মাস্ক রয়েছে, তো কোথায় আবার কর্পূরের মতো উবে গিয়েছে মাস্ক। আবার কাউকে প্রশ্ন করলে উত্তর আসছে… ‘এই তো, এতক্ষণ মাস্ক পরেই ছিলাম। একটা সেলফি তুলতে হবে তো প্যান্ডেলের সঙ্গে। তাই মাস্কটা খুলে রেখেছি।’ কিন্তু এরই মধ্যে চোখ রাঙাচ্ছে করোনা। কলকাতা পৌরনিগমের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, শহরের বেশ কিছু এলাকায় চুপি চুপি নিজের দাঁত নখ বের করতে শুরু করে দিয়েছে করোনা।
কলকাতা পৌরনিগমের স্বাস্থ্য বিভাগের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শহরের একাধিক বোরো এলাকায় বেড়েছে করোনার সংক্রমণ। এর মধ্যে যে বোরোগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ২, ৩, ৫, ৭, ১০ নম্বর এলাকা। হিসেব বলছে, পুজোর মরশুমে এই এলাকাগুলিতে প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশ বেড়েছে করোনার সংক্রমণ। আর এই পরিসংখ্যান দেখে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পৌর প্রশাসনের কর্তাদের। পৌরনিগমের থেকে নজরদারি চালানো হচ্ছে জোরকদমে। কলকাতার পুজো দেখতে আসা দর্শনার্থীদের বারবার করে কোভিড বিধি মানার জন্য অনুরোধও করা হচ্ছে। কিন্তু মাস্ক নিয়ে এখনও দর্শনার্থীদের মধ্যে একটি বড় অংশের মধ্যে চূড়ান্ত অবহেলার ছবি দেখা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে করোনার সংক্রমণকে আটকানো যাবে, তা বুঝে উঠতে পারছেন না কলকাতা পৌরনিগমের কর্তাব্যক্তিরা।
আর পুজোর মধ্যে এই থিক থিক করা ভিড় দেখে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকদের একাংশও। বিশিষ্ট চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর মতে, মানুষকে যেতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আমাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে একটা দুঃখ পাথর চাপা দিয়ে আটকানো রয়েছে। হঠাৎ করে কেউ এসে বলে দিল, এবার মজাটা করে নিন। এবারে আর কোনও বাধা নেই। গতবছর চারিদিকে একটা বিধিনিষেধের বাতাবরণ ছিল। সেই বাতাবরণটা এবার যেন হঠাৎ করেই সামগ্রিকভাবে উধাও হয়ে গেল। এর দায় প্রত্যেকের। আর সমাজের পরিচালকদের দায় তো বটেই।”
তিনি আরও মনে করছেন, “অনেকেই ভাবছে করোনা টিকার দু’টি ডোজ় পাওয়ার পরে সে করোনাকে জিতে নিয়েছে, মৃত্যুঞ্জয়। কিন্তু এমনটা একেবারেই নয়। দুটি ডোজ় অবশ্যই আপনাকে শক্তিশালী করেছে, কিন্তু দুটি ডোজ় মানেই যে আপনার করোনা হবে না, এই ধারনা ভ্রান্ত।”
লোকাল সার্কলস নামে এক অনলাইন পোলিং প্ল্যাটফর্ম সম্প্রতি একটি সমীক্ষাটি চালিয়েছিল। সোমবার সেই সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে ওই সংস্থা। তাতে দেখা যাচ্ছে, সমীক্ষায় যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁদের এলাকার লোকেরা ‘ভাল সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলছেন’, বাকি ৯৪ শতাংশের বেশিরভাগই জানিয়েছেন, তাঁদের এলাকায় সামাজিক দূরত্ববিধি সব শিকেয় উঠেছে। অথবা সামান্য কিছু মানুষের মধ্যে তা সীমিত হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন : COVID 19: দেশের মাত্র ৬ শতাংশ মানুষই সাক্ষী শারীরিক দূরত্ববিধির, ‘প্যান্ডেল হপিং’ করুন সাবধানে…