কলকাতা: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আতঙ্ক কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে রাজ্যের জনজীবন। কিন্তু তা বলে করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতি সেরে রাখতে বিন্দুমাত্র গাফিলতি রাখতে চায় না রাজ্য সরকার। সেই মতো বেশ কয়েকটি বিষয়ে জোর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে।
তৃতীয় ঢেউয়ের আগে প্রস্তুতির নিরিখে মূলত দু’টি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে স্বাস্থ্যভবন। টিকাকরণে গতি, কোভিড আক্রান্ত কম বয়সীদের চিকিৎসায় পরিকাঠামোয় জোর। শহরের পরে পঞ্চায়েত এলাকাতেও টিকাকরণের হার বৃদ্ধিতে নজর দিচ্ছে রাজ্য। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে পিকু (PICU), এসএনসিইউ (SNCU), পেডিয়াট্রিক এইচডিইউ-এর পরিকাঠামো তৈরি রাখতে বলা হয়েছে। মৃদু-মাঝারি উপসর্গ যুক্ত কমবয়সিদের (৩ মাস-১২ বছর) জন্য রাজ্যজুড়ে ১০ হাজার শয্যা চিহ্নিত করা হয়েছে।
পাশাপাশি কোভিড আক্রান্ত ১ দিন থেকে ৩ মাসের শিশুদের জন্য ৩৫০টি এসএনসিইউ (SNCU) শয্যার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রাথমিক স্তরের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলির সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের টেলি কনসালটেশনের মাধ্যমে পরামর্শের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সোমবারই প্রকাশ্যে এসেছে এক তথ্য। জানা গিয়েছে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের সম্ভাবনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে (PMO) একটি রিপোর্ট জমা পড়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের (NIDM) তরফ থেকে এই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অক্টোবরেই চরম আকার ধারণ করতে পারে করোনার তৃতীয় ঢেউ। শিশুদের ক্ষেত্রে যে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকবে, সে ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে। অর্থাৎ উৎসবের মরসুম যে এবারও দেশবাসীর জন্য খুব একটা স্বস্তির নয়, এই রিপোর্টে মিলেছে তেমনই ইঙ্গিত।
বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে, সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের বিশেষ কবচকুণ্ডল দরকার। কোনও ভাবেই তাদের যাতে সমস্যা না হয় সেদিকে নজর রেখে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে। হাসপাতালে শিশুদের জন্য বেড বাড়ানো, অক্সিজেনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থার নির্দেশ আগেই দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। শিশুদের ঝুঁকির অন্যতম কারণ, তারা এখনও টিকা পায়নি। ফলে কোভিডের সঙ্গে লড়াই করার জন্য তারা আদৌ প্রস্তুত কি না তা নিয়ে একটা ধন্দ থেকেই যাচ্ছে।
এ নিয়ে সম্প্রতি নবান্নে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। ছিলেন স্বাস্থ্য দফতর, পঞ্চায়েত দফতর, শিক্ষা দফতর, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর, নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের সচিবরা। দীর্ঘ বৈঠক করেন মুখ্য সচিব। সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আগে শিশুদের যাতে কোনও পুষ্টির অভাব না হয় বা কোনও শিশু যাতে অপুষ্টির কারণে করুণ পরিণতির শিকার না হয় সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। বিশিষ্ট চিকিৎসক শুভ্রজ্যোতি ভৌমিকের পর্যবেক্ষণ, ‘চিন্তার মূল কারণ, অনেক জায়গাতেই লকডাউন উঠে গিয়েছে। মানুষ স্বাভাবিক জনজীবনে ফিরছেন। যাঁরা করোনার টিকার দু’টি ডোজ পেয়ে গিয়েছেন, তাঁরা মাস্ক নামিয়ে চলাফেরা করছেন, যা কখনওই উচিৎ নয়।’ আরও পড়ুন: ‘ভয়ে আছি আমরা’, সজল ঘোষের গ্রেফতারি নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের স্ত্রী তানিয়ার!