সৌরভ দত্ত: অন্তঃসত্ত্বাদেরও টিকা নিতে বাধা নেই। জুলাই মাসের শুরুতেই জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সন্তানসম্ভবা মহিলাদের টিকাকরণের পথে সবথেকে বড় বাধা হয়েছে দাঁড়াচ্ছে টিকার অপ্রতুলতা। যেহেতু কোভ্যাক্সিন নিয়ে টানাটানা খুব বেশি, তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি রয়েছে জেনেও জোগানের কথা মাথায় রেখে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের কোভিশিল্ডই দিতে হচ্ছে। দু’টি ভ্যাকসিন বাদে কোনও বিকল্প না থাকায় কোন টিকায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞরা।
গর্ভবতী মায়েদের টিকার রক্ষাকবচ দেওয়া যে আবশ্যক, এ নিয়ে একমত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু কোভ্যাক্সিন না কোভিশিল্ড, গর্ভবতী মহিলাদের টিকাকরণে অগ্রাধিকার কিসে, তা নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে ধন্দ রয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, টিকার রক্ষাকবচ না থাকায় গর্ভবতী মহিলারা কোভিডে আক্রান্ত হলে তাঁদের অসুস্থতা বেড়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের আইসিইউতে ভর্তি করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে টিকাদান যে জরুরি, তা মনে করিয়েই ঝুঁকিপূর্ণ সন্তান-সম্ভবাদের মেডিক্যাল কলেজে টিকা দেওয়ার কথা বলছেন টিকাজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমিটির সদস্য চিকিৎসক।
অন্তঃসত্ত্বাদের টিকাকরণ নিয়ে এখনও পর্যন্ত যে প্রামাণ্য নথি রয়েছে তাতে এমআরএনএ ভ্যাকসিনকেই নিরাপদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ভারতে এখনও এমআরএনএ ভ্যাকসিন উপলব্ধ নয়। কোভ্যাক্সিন তুলনামূলক কিছুটা নিরাপদ হলেও তার জোগান নেই। এই পরিস্থিতিতে ‘বিকল্পহীন’ হয়েই অন্তঃসত্ত্বাদের টিকা দেওয়ার জন্য কোভিশিল্ডকেই বেছে নিতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের বৈঠকে উপস্থিত চিকিৎসকদের বলা হয়েছে, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবিটিস ও রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার মতো রোগ থাকলে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের কোভ্যাক্সিনের তুলনায় কোভিশিল্ডে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা বেশি রয়েছে। বৃহস্পতিবার ইউনিসেফের আলোচনায় রাজ্যের কোভিড বিশেষজ্ঞ কমিটির তরফে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের কোন টিকা দেওয়া নিরাপদ, তা জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু, কোভ্যাক্সিনের জোগানে ঘাটতি থাকায় সদুত্তর মেলেনি। এ অবস্থায় গর্ভবতী মহিলার সম্মতি নিয়ে তবেই টিকাদানের কথা বলছেন চিকিৎসকরা।
স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সুভাষ সরকারের কথায়, “এখন যে কোনও ভ্যাকসিন প্রয়োগের আগেই মা-কে বুঝিয়ে বলতে হবে, এটা তাঁকে সুরক্ষিত করতেই দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাচ্চার উপর এর কোনও নেতিবাচক বা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না, সেটা আমরা জানি না।” একই সুর স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ আরতি বিশ্বাসের কণ্ঠে। তিনি বলছেন, “সন্তানসম্ভবা মায়েদের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে বোঝাতে হবে, যে যদি কেউ সংক্রমিত হন তবে নানা ধরনের ক্ষতি পারে। এটা ঠিক যে ভ্যাকসিনের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু সেটা করোনা সংক্রমিত হওয়ার থেকে অনেক বেশি সুবিধাজনক।” আরও পড়ুন: ‘প্রতিশ্রুতি মতো টিকা আসছে না,’ সবিস্তারে খতিয়ান পেশ করে ক্ষোভ উগরে দিল স্বাস্থ্যভবন