কলকাতা: পুজোর ভিড় দেখেই চিকিৎসকেরা আশঙ্কা করেছিলেন, উৎসব মিটলে পরিস্থিতি আবার হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। গত তিনদিন ধরে করোনা আক্রান্তের যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তা দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পুরকর্তারা। বিশেষত কলকাতার (Kolkata) দৈনিক সংক্রমণের রিপোর্ট নতুন করে চিন্তায় ফেলেছে আধিকারিকদের। গতকালের পরও আজ শহরে ফের বাড়ল করোনা (Covid 19) আক্রান্তের সংখ্যা। গতকাল আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৬০। শুক্রবার সেই সংখ্যা বেড়ে হল ৩১৯। শহরের সেফ হোমগুলি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল পুর কর্তৃপক্ষ।
আক্রান্তের সংখ্যা তো উদ্বেগের কারণ বটেই, তবে সবথেকে বেশি চিন্তা বাড়াচ্ছে টিকাপ্রাপ্তদের সংক্রমণ। করোনার টিকা নেওয়ার পরও যে সংক্রমণ হতে পারে, এমন উদাহরণ আগেও দেখা গিয়েছে। তবে, এ ক্ষেত্রে সেই হার অনেকটাই বেশি। গত ২৪ ঘণ্টার রিপোর্ট অনুযায়ী, শহরের মোট আক্রান্তের প্রায় ৫০ শতাংশেরই টিকার দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়া হয়ে গিয়েছে।
শুক্রবার পুরসভা থেকে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৪ ঘন্টায় শহরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩১৯ জন। এর মধ্যে কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আক্রান্ত ২৪২ জন। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে সংখ্যাটা ৭৭। ৩১৯ জনের মধ্যে ১৫০ জন যারা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার পরেও আক্রান্ত হয়েছেন। কোভিড প্রোটোকল না মানায় এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথম ডোজ় নিয়েছেন এমন আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ জন। ভ্যাকসিন নেননি এমন আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ জন।
গতকালই পুরসভার বৈঠকে শহরের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারগুলি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজ পুরসভার তরফে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক মন্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ জানিয়েছেন হয়েছে, শহরের একটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার এবং দুটি সেফব হোম খুলে দেওয়া হচ্ছে। ট্যাংরা চম্পা মনি মাতৃ সদন সেফ হোম, হরেকৃষ্ণ শেঠ লেন সেফ হোম এবং তোপসিয়ার কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এগুলির মধ্যে হরেকৃষ্ণ শেঠ লেনের সেফ হোমটি মা এবং শিশুদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকরা পর্যালোচনা করে দেখেছেন মা ও শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে।
পুরকর্তারাও কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন যে পুজোর মরশুমে যে ভাবে ভিড় বেড়েছে, তার জেরেই ক্রমশ বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গতকালই অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে শুরু করায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বিশেষজ্ঞ ড. শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক বলেন, এটা প্রত্যাশিত ছিলই। তিনি মনে করেন, পুজোর সময় নাইট কার্ফু তুলে দেওয়া উচিৎ হয়নি। তবে এটা তৃতীয় ঢেউ কি না, তা এখনই বাল সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর দাবি, গতকাল থেকে যে নাইট কার্ফু চালু করা হয়েছে, তা যেন কালী পুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো বা ছট পুজো, সব ক্ষেত্রেই কার্যকর থাকে। উৎসবে ছাড় দিলে বিপদ বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।