COVID19 in Kolkata: ১ বিক্রেতা পিছু ১ ক্রেতা! নির্দেশিকা জারির আগেই বেঁকে বসছেন দোকানিরা
Kolkata Municipal Corporation: কোনও একজন বিক্রেতার কাছে ১ জনের বেশি ক্রেতা থাকা যাবে না। অর্থাৎ, যদি কোনও বাজারে ৫০ জন বিক্রেতা উপস্থিত থাকেন তাহলে সেই বাজারে ৫০ জন ক্রেতাই উপস্থিত থাকবেন
কলকাতা: রাজ্যে কোভিডের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। কলকাতায় ইতিমধ্যেই ৪৮ টি মাইক্রো কনটেইনমেন্ট জ়োন ঘোষিত হয়েছে। জারি হয়েছেে আংশিক লকডাউন। কিন্তু, তারপরেও শহরের বড় বড় বাজারগুলিতে (Market Places) কেবল অসাবধানতার ছবিই উঠে এসেছে।
এই পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে অভিনব ব্যবস্থা নিতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। বাজারে ভিড় এড়াতে প্রত্যেক বিক্রেতা পিছু একজন করে ক্রেতা থাকবেন এমনটাই বলা হচ্ছে সেই নির্দেশিকায়। তবে এখনও তা চূড়ান্ত করা হয়নি। বৃহস্পতিবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim), পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল-সহ একাধিক অধিকর্তারা বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেই এই অভিনব পন্থাটির কথা উঠে আসে। শীঘ্রই এই নিয়ম জারি করা হবে বলে খবর। কিন্তু, বেঁকে বসছেন দোকানিরা।
ঠিক কীভাবে চলবে ১ বিক্রেতা পিছু ১ ক্রেতা পদ্ধতি?
নিয়ম যাতে সঠিক ভাবে কার্যকর হয়, তা দেখার ভার দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুলিশকে। এদিন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, রাজ্যের মুখ্যসচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদী ছাড়াও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও ছিলেন এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যে বাজারে যতজন বিক্রেতা থাকবেন, ঠিক ততজন ক্রেতাকেই ঢোকানো হবে বাজারে।
কোনও একজন বিক্রেতার কাছে ১ জনের বেশি ক্রেতা থাকা যাবে না। অর্থাৎ, যদি কোনও বাজারে ৫০ জন বিক্রেতা উপস্থিত থাকেন তাহলে সেই বাজারে ৫০ জন ক্রেতাই উপস্থিত থাকবেন। সেই ক্রেতারা যখন বেরোবেন, তখন অপর রাস্তা দিয়ে বাকিদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। বাকি ক্রেতারা লাইন দিয়ে অপেক্ষা করবেন বাজারের বাইরে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার নির্দেশ দেন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
বিক্রেতা হোন বা ক্রেতা, সমস্যা উভয়ের
কিন্তু, এক বিক্রেতা এক ক্রেতা নিয়ম চালু হলে সমস্যায় পড়বেন উভয় পক্ষই। অন্তত এমনটাই মতামত অধিকাংশের। বিক্রেতাদের একাংশের দাবি, করোনা পরিস্থিতির জেরে এমনিতেই বিক্রি কম। লোক নেই বাজারে। এরপর যদি মাথাপিছু ১ জন করে ক্রেতা করে দেওয়া হয়, তাহলে বিক্রি আরও কমে যাবে। কারণ দ্বিতীয় ক্রেতা আর আসবেন না সংশ্লিষ্ট বিক্রেতার কাছে।
গড়িয়াহাট বাজারের এক সবজি বিক্রেতার কথায়, “এই সব নিয়ম সরকারি অফিসে চলে। বাজারে নয়। আমি যদি একজনকে জিনিস দিই, তাহলে অন্যজন সেখান থেকে অন্য কোনও বিক্রেতার কাছে যাবেন। আমার কাছে আর আসবেন না। তাহলে ক্ষতি তো আমারই। আমি দুইজনের বদলে একজনকে জিনিস বিক্রি করব। এসব নিয়ম পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে হোক আর যেভাবেই হোক বাজারে হয় না। তাহলে বাজার গুলো সব সরকারি করে আমাদের চাকরি দেওয়া হোক!”
তবে, সমস্যা কি কেবল বিক্রেতাদের? ক্রেতাদের নয়? সমস্যা রয়েছে তাঁদেরও। যাঁরা বাজারে কেনাকাটা করতে আসেন তাঁদের একাংশের মত, বাজারে কেউ তিন ঘণ্টা সময় নিয়ে আসে না। সকলেই কাজে যান। কর্মক্ষেত্রের চাপ রয়েছে। সেখানে বাজারের জন্য আলাদা করে অতিরিক্ত সময় বের করা খুব সমস্যার। এছাড়াও রয়েছে দরদাম। সকল বিক্রেতা একদামে জিনিস বিক্রি করবেন না। প্রত্যেক বিক্রেতার কাছে যদি একজন ক্রেতা দাঁড়ান তাহলে সেই ক্রেতা অন্য কোনও দোকানির কাছে যেতে পারবেন না। ফলে দোকানির নির্ধারিত দামেই জিনিস কিনতে হবে। যা অনেকের পক্ষেই কার্যত অসাধ্য।
এক ক্রেতার কথায়, “আমি তো রোজ রোজ বাজারে আসি না। যেদিন যেমন দরকার এসে নিয়ে চলে গেলাম। সেখানে আচমকা যদি এরকম নিয়ম হয়, তাহলে অনেকটা সময়ে বাজারে দিতে হবে। সেই সময়টা দেওয়া সম্ভব নয়।” যদিও, বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির একাংশের মতামত, নতুন নির্দেশিকা চালু হলে সমস্যা হলেও তা মানতে হবে। কারণ সংক্রমণ রুখতে গিয়ে যদি পুরো লকডাউনের পথে হাঁটে রাজ্য তাহলে সমস্যায় পড়বেন তাঁরাই।
বিধিনিষেধ নিয়ে বৈঠক নবান্নেও
সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবারই জেলা প্রশাসনের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যসচিব। লাগাতার যে ভাবে করোনা বাড়ছে, তা নিয়েই বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যসচিব। সেই বৈঠকে রাতের বিধি-নিষেধ প্রয়োগ করার বার্তা দিয়েছেন তিনি। জেলা প্রশাসনকে বলেছেন, “বাজারগুলোতে এবং বাজারে ঢোকার মুখে, বিধিনিষেধ মেনে চলতে বাধ্য করুন। হাসপাতালগুলোতে নজর রাখুন।” টিকাকরণ ঠিকঠাক মতো হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন মুখ্যসচিব।
দরিদ্র মানুষদের শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়ার যে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে, সেই খাবার বাড়ি বাড়ি পৌঁছচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন তিনি। পাশাপাশি বিধান নগর কমিশনারেট ও প্রত্যেকটি জেলা পুলিশের পুলিশ সুপারকে মুখ্য সচিব সতর্ক করে বলেছেন, “মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোনের নামে শুধুমাত্র বোর্ড লাগিয়ে দিলেই হবে না। তাকে কার্যকর করতে হবে। পুলিশের অনেকেই সংক্রমিত হয়েছেন, এ কথা উল্লেখ করে মুখ্যসচিব বলেন, তবুও ব্যাপারটা আপনারা দেখুন।”
বঙ্গে করোনা সংক্রমণ
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার ৪২১, বুধবার যে সংখ্যাটা ছিল ১৪ হাজার ২২। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। বুধবারের তুলনায় পজিটিভিটি রেট বেড়েছে কিছুটা। বুধবার যে হার ছিল ২৩.১৭ শতাংশ, বৃহস্পতিবার সেটাই বেড়ে হয়েছে ২৪.৭১ শতাংশ।