প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
কলকাতা: সিপিআইএমের (CPIM) প্রাথমিক সদস্য পদের সংখ্যা ক্রমেই তলানিতে যাচ্ছে। কিন্তু, সঙ্কটাকালে নতুন রক্তরাঙা ভোরের স্বপ্ন দেখাচ্ছে যুব সম্প্রদায়ই। গত কিছু মাস ধরে যুব সংগঠনের সদস্য সংখ্যা বাড়ছে। গতবারের তুলনায় তা বেড়েছে ৫০ হাজার। শেষ বার ছিল ২৮.৫লক্ষ। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ২৯ লক্ষ। উত্থানের গতি ধরে রাখতেই আসন্ন সম্মেলনে একাধিক নতুন কর্মসূচি নিয়েছে সিপিআইএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই (DYFI)। একইসঙ্গে কর্মসংস্থানের প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) এক কাঠগড়ায় তুলে নিশানা করেছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব। পরিবর্তে বিকল্প কর্মসংস্থানের সন্ধান দিতে নতুন সম্ভাবনার কথাও বলছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে পি আর সি-এর সহায়তা ব্লাড কালেকশনকে চাকরির দিশা দেখানোর পথে আপাতত সামনের সারিতে রাখতে চেয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেছেন DYFI নেতৃত্ব।
একইসঙ্গে ‘চপ শিল্প’ নিয়ে তৃণমূল সরকারেরও তুলোধনা করেন বাম যুব নেতৃত্ব। যদিও তাঁদের দাবি, চপ বা পানের দোকান থেকে আর্থিক সংস্থান হয়। ফলে তা খাটো করার দেখার জায়গা নেই। তবে চপ বা পানের দোকান দেওয়ার কথায় আদতে সরকারের নেতিবাচক মনোভাবই ধরা পড়ে। তাই বিকল্পের সন্ধান দিচ্ছেন তাঁরা। স্বনির্ভর করার প্রয়াস তৈরির চেষ্টা চলছে। ক্ষমতায় না থাকলেও একটা ইতিবাচক মানসিকতা থেকেই এই চেষ্টা বলে দাবি ডিওয়াইএফআই নেতৃত্বের। তাদের এই পদক্ষেপে মানুষ বিশ্বাস রাখবেন বলে আশায় রয়েছেন সিপিআইএম যুব নেতারা।
সূত্রের খবর, ব্লাড কালেকশনে আপাতত ১১ জনকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ধীরে সারা রাজ্যে তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে সেলাই মেশিনকে ব্যবহার করেও কর্মসংস্থানের নতুন দিশা দেখাতে চান সহায়ক বাম নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়রা। বিকল্প কর্মংস্থানের জন্য ফুটবল কোচিং সেন্টারের কথাও ভাব হচ্ছে। যদিও আনুষ্ঠানিক সিলমোহর কবে পড়বে, তা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ তাঁরা। শুধু বলছেন, ক্রমশ প্রকাশ্য। আগামী ১২ থেকে ১৫ মে রাজ্যের ইস্টার্ন জ়োনাল কালচারাল সেন্টার বা ইজেডসিসি-তে অনুষ্ঠিত হবে DYFI-এর সর্বভারতীয় সম্মেলন। সেই উপলক্ষ্যে রক্তদান শিবির, সেমিনার সহ একাধিক বিষয়ের আয়োজন করা হয়েছে। যা নিয়ে সংগঠনের মধ্যে তুঙ্গে রয়েছে ব্যস্ততা।
একইসঙ্গে কর্মসূচির মধ্যে যুক্ত হয়েছে বই বিনিময় উৎসব। তরুণ প্রজন্ম যে ভাষায় কথা বলে, ভাবনা আদান প্রদান করে, সেভাবেই তাদের মনোভাবকে তুলে ধরতে চায় সিপিআইএম। তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে যুবদের সম্মেলন উপলক্ষ্যে ‘ব্যান্ড ফেস্টের’ বন্দোবস্ত হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তা অনুষ্ঠিত হবে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের ‘ফ্ল্যাশ মব’ কিংবা ‘টুম্পা সোনাকে’ ব্যবহার করে নির্বাচনী ময়দানে ঝড় তুলেছিল বামেরা। সেই একই রাস্তায় হেঁটে এবারে যুব সমাজের মন জয় করতে চাইছেন বাম যুব নেতারা। অন্যদিকে বিশ্বায়ন ও দূষণ রোধে পরিবেশ বাঁচাতে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মত সংগঠনের শীর্ষ নেতত্বের। তাই যুব সম্মেলনের প্রচারে ম্যানগ্রোভ চারা রোপন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। কথায় কথায় আন্তর্জাতিক বিষয়কে অস্ত্র করে ভারী ভারী শব্দে সেমিনার মঞ্চ ভরিয়ে তোলা হোক বা গুরুগম্ভীর বিষয়ে বক্তৃতা দিয়েও, সেই পথ যে আর সাফল্যের আলপনা দিতে পারবে না, তা হয়তো বুঝছেন বঙ্গের লাল পতাকা বহনকারীরা। তাই কী এই বড় পরিবর্তন? কাটাছেঁড়ায় ব্যস্ত রাজনীতির কারবারিরা।
আরও পড়ুন- নারদ মামলার শুনানিতে বৈশাখীকে নিয়ে আদালতে শোভন, হাজির মদন-ফিরহাদ