Cyclone Biporjoy: শক্তি খুইয়ে পূর্ব ভারতের পথে ‘বিপর্যয়’! পাপক্ষালন করে বাংলায় আনবে বর্ষা?

Cyclone Biparjoy: বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার তাপমাত্রা আবার ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার করেছে। ৪৩ ডিগ্রির কোঠায় অন্তত পাঁচটি জায়গার পারদ। চল্লিশের চৌকাঠে কলকাতা, দমদম, হাওড়া।

Cyclone Biporjoy: শক্তি খুইয়ে পূর্ব ভারতের পথে ‘বিপর্যয়’! পাপক্ষালন করে বাংলায় আনবে বর্ষা?
গ্রাফিক্স- অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 15, 2023 | 10:48 PM

কলকাতা: পুড়ছে পশ্চিমাঞ্চল। ঘেমেনেয়ে কাদা কলকাতা (Kolkata)। পথে বর্ষার দেরি, প্রাকবর্ষার বৃষ্টিও বেপাত্তা। দায়ী কে? কেন দেরি বর্ষার? আবহাওবিদরা চোখ বুজে আঙুল তুলছেন যার দিকে, তার নাম বিপর্যয় (Cyclone Biporjoy)। তবে প্রকৃতির খেলা বোঝাও দুঃসাধ্য! যাকে দায়ী করা হচ্ছে, আবার তার দিকেই চেয়ে থাকতে হচ্ছে হাওয়া অফিসকে। প্রাথমিক ইঙ্গিত মিলে গেলে, ঘূর্ণিঝড় শক্তি হারাতে হারাতে, গুজরাত-রাজস্থান, মধ্য ভারত পেরিয়ে চলে আসতে পারে পূর্ব ভারতে। সেক্ষেত্রে বিপর্যয়ের অবশিষ্টাংশের হাত ধরেই হাওয়াবদল হতে পারে দক্ষিণবঙ্গে। ঢুকতে পারে বর্ষা। বহু প্রতীক্ষিত মৌসুমী বায়ু।

সাধারণত দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢোকে ১০ জুন, কলকাতায় ১২ জুন। শুধু এ তল্লাটে নয়, গোড়া থেকেই বর্ষার দেরি। কেরালায় এক জুনের বদলে বর্ষা ঢুকেছে ৮ জুন। নেপথ্যে বিপর্যয়ের হাত। জুনের শুরুতেই আরব সাগরে এমন জায়গায় নিম্নচাপ দানা বাঁধে, যার অবস্থান কেরালায় বর্ষা ঢোকার পক্ষে অনুকূল ছিল না। ৬ জুন আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম হয়। গুজরাত উপকূল পর্যন্ত লম্বা পথ, তাই ঘূর্ণিঝড় তকমা টিকিয়ে রাখতে একটুও সমস্যা হয়নি বিপর্যয়ের। উল্টে, শক্তি বাড়াতে বাড়াতে একসময় চরম তীব্র ঘূর্ণিঝড়েও পরিণত হয় বিপর্যয়। উপকূলের কাছে পৌঁছনোর আগে শক্তিক্ষয় শুরু হয় ঠিকই, তাতেও শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় তকমা থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এর আগে ২০১৯ সালে ফণী ৮ দিন ঘূর্ণিঝড় তকমা টিকিয়ে রেখেছিল। বিপর্যয় সেই রেকর্ড ভেঙে দিল। 

যত দিন বিপর্যয়ের স্থায়িত্ব, ততদিন বর্ষায় ‘বিপর্যয়’। বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতের। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘‘বর্ষার শুরুতে দড়ি টানাটানির খেলায় বঙ্গোপসাগরের চেয়ে আরব সাগর এগিয়ে গিয়েছে। কারণ, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় থাকায় আরব সাগর অতিসক্রিয়। সব জলীয় বাষ্প ওদিকে গিয়েই ভিড়ছে। এই কারণে বঙ্গোপসাগরের মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ খুব একটা সবল নয়। যেটুকু বৃষ্টি হচ্ছে, দখিনা-পশ্চিমী বাতাসের প্রভাবে। উত্তরবঙ্গ, উত্তর-পূর্ব ভারতে। বাকি পূর্ব ভারত, তা সে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ হোক বা ওড়িশা, বিহার বা ঝাড়খণ্ড, সব জায়গায় হয় তাপপ্রবাহ নয়তো ভ্যাপসা গরমের জ্বলুনি।’’

বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার তাপমাত্রা আবার ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার করেছে। ৪৩ ডিগ্রির কোঠায় অন্তত পাঁচটি জায়গার পারদ। চল্লিশের চৌকাঠে কলকাতা, দমদম, হাওড়া। জলীয় বাষ্প বেশি তাপ ধরে রাখতে পারে, তাই উপকূলীয় অঞ্চলের গরমের অনুভূতিও অনেক বেশি। তবে কথায় বলে, বেটার লেট দ্যান নেভার। প্রকৃতিও অবশেষে মুখ তুলে চাইছে। এই দফায় ১৮ জুন তাপপ্রবাহে ইতি পড়তে চলেছে। ১৯ তারিখ থেকে গোটা দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রা কমবে। কারণ, আগামী সপ্তাহের শুরুতেই বর্ষা হাজির হয়ে যাবে দক্ষিণবঙ্গে। 

সঞ্জীববাবুর কথায়, ‘‘দুটো সুবিধা হতে চলেছে। এক, ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ায় আরব সাগরের একাধিপত্য শেষ হয়ে যাবে। ফলে, বঙ্গোপসাগরের শাখাও শক্তিশালী হতে শুরু করবে। দুই, বিপর্যয় শক্তি খোয়াতে খোয়াতে পূর্ব ভারত পর্যন্ত চলে আসতে পারে। তখন সেই অবশিষ্টাংশের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে দখিনা-পুবালি বাতাস দক্ষিণবঙ্গে ঢুকবে। এসব দেখেই আমরা আশা করছি, ১৯ জুন থেকে ২১ জুনের মধ্যে নতুন করে বর্ষার অগ্রগতি শুরু হতে পারে।’’

তবে সবটাই নির্ভর করবে বিপর্যয়ের আয়ুর উপর। সঞ্জীববাবুর কথায়, ‘‘গুজরাত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ঢোকার পর রাজস্থানে ঢুকবে। একেবারে শুকনো অঞ্চল, জলাশয় কম। তার উপর ক্রমাগত শুকনো বাতাস ঢুকবে। সবমিলিয়ে দ্রুত শক্তি হারাতে পারে বিপর্যয়। মধ্য ভারত পেরোনোর পর যদি বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্পের জোগান পায়, তবেই বিপর্যয়ের অবশিষ্টাংশ বেঁচে থাকবে পারবে। একমাত্র তখনই আমাদের লাভ হওয়ার সম্ভাবনা।’’

একই কথা বলছেন পুণে মৌসম ভবনের আবহবিজ্ঞানী ডি শিবানন্দ পাই। তাঁর কথায়, ‘‘বিপর্যয় পূর্ব ভারতে নিম্নচাপ হিসেবেও পৌঁছতে পারে, ঘূর্ণাবর্ত হিসেবেও পৌঁছতে পারে। আবার তার আগেও পুরোপুরি শেষ হয়ে যেতে পারে। সবটাই নির্ভর করবে জলীয় বাষ্পের জোগান পাচ্ছে কি না, তার উপর।’’

বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলা বা ওড়িশা হয়ে ঢোকা নিম্নচাপ অনেক সময়ই রাজস্থানকে ভাসিয়ে দেয়। দেখা গিয়েছে, মধ্য ভারত পেরোনোর পরই নিম্নচাপগুলি আরব সাগর থেকে জলীয় বাষ্পের জোগান পেতে শুরু করে। ‘বিপর্যয়’ ঠিক উল্টো পথে পাড়ি জমাচ্ছে। পশ্চিম থেকে পুবের পথে। কী বলা যায় একে? যে ‘মারে’, সে ‘রাখে’ও? নাকি বিপর্যয়ের পাপক্ষালন?