এই তো ক’দিন আগে আগেও প্যাচপ্যাচে গরমে নাভিশ্বাস উঠছিল বঙ্গবাসীর। কোথাও, একেবারে চল্লিশ, কোথাও আবার ছেচল্লিশ! পারদের ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফে ভেঙেছিল অতীতের সব রেকর্ড। পকেট গড়ের মাঠ হলেও EMI বাবার আশীর্বাদে এসি বসেছে মধ্যবিত্তের ঘরে ঘরে। কেউ কেউ তো আবার বৃষ্টির জন্য হাপিত্যেশ করতে করতে ঝিন্টির খোঁজ করতে শুরু করে দিয়েছিলেন। তারমধ্যেই হাওয়া বদলের খবরে মুখে ফুটেছিল হাসি। আলিপুরের তেনারা বললেন, আর দেরি নেই। আসছে বর্ষা। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শুরু হতে পারে ধারাপাত। এরমধ্যে নিম্নচাপের চাপে গোমড়া মুখে বসেছিলেন সূর্যদেব। কমেছিল রোদের তেজ। কিন্তু, তাই বলে একেবারে রেমাল? প্রথমে নাম শুনেই তো কেউ কেউ বলেই ফেলছিলেন, রায় মহাশয় তো সেই কবেই বলে গিয়েছেন, ‘ছিল রুমাল, হয়ে গেল বিড়াল’। এ যেন একবারে সেই কেস! মেঘ না চাইতে বৃষ্টি অবধি ঠিক ছিল, এ তো একেবারে মেঘ না চাইতে দামাল ঘূর্ণিঝড়ের দেখা। সময় যত গড়িয়েছে ততই বেড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। আর আশঙ্কার দোলাদলের মধ্যেই রেমালের ঘূর্ণিপাকের বেগ যেন ক্রমেই আরও বেড়েছে। হাওয়া অফিস বলছে, ল্যান্ডফলের সময় প্রতি ঘণ্টায় ১৩৫ কিমি পর্যন্ত স্পিড তুলতে পারে রুদ্র রেমাল।
‘গা ছমছম কী হয় কী হয় ! কখনও মজা কখনও বা ভয়।’ আবহাওয়ার আপডেট দেখতে দেখতে ঠাকুমার ঝুলির এই লাইনই যেন এখন দিবারাত্রি জপ করছে বঙ্গবাসী। তথ্য বলছে, ‘রেমাল’ নামটি ওমানের দেওয়া। এটি একটি আরবি শব্দ। এই নামের অর্থ ‘বালি’। কিন্তু, সে নাম যেই দিক, অর্থ যাই হোক। বাঙালি যে তাকে নিজের মতো গড়েপিঠে নেবে তা বলাই বাহুল্য। আদর করে কেউ কেউ রেমালকে ডাকছেন রুমাল বলে কেউ আবার রুমেলা। কেউ আবার ডাকছেন রুবেল বলেও। পাড়ার ঠেক, চায়ের দোকান, ক্লাব, সবাই এখন মজেছে রুমাল থুড়ি রুমেলা থুড়ি রেমালে। এই তো কাল ঝড়ের কারণে ট্রেন বাতিলের খবর পড়তে পড়তে ট্রেনে বসেই এক কাকা বলে উঠলেন, এতদিন তো জানতাম ওতে ঘামটাম মোছা যায়। কে দেয় বাবা এসব নাম! পাশে বসে একজন এক মুখ হাসি নিয়ে বলে উঠলেন, মাথায় রুমাল বেঁধে নেবেন। উড়লে রুমাল উড়বে। আপনি থাকবেন!
সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখা যাচ্ছে মিমের বন্যা। কেউ কেউ তো আবার সিধু জ্যাঠারও শরণাপন্ন হয়েছেন। একজন তো ফেসবুকে লিখেছেন ফেলুদার সিধু জ্যাঠাকে জিজ্ঞেস করলাম, ঝড়ের নাম রেমাল কেন? উনি বললেন ওটা তো সংক্ষিপ্ত নাম। আসলে এসেছে, ‘লোটো-রে-মাল’ থেকে। ভোট বঙ্গে তা নিয়েও উঠেছে হাসির রোল। আর একজন তো লিখে ফেললেন, ‘ঝড়ের নাম রেমাল। দুই ফুল বেসামাল।’ পাল্টা একজন ছন্দ মিলিয়ে লিখে ফেললেন, ‘আবার ত্রাণ, ত্রিপল,চাল, নেতারা সব মালামাল।’
কেউ আবার রেমাল শুনে খেতে চাইছেন রুমালি রুটি। বাংলাদেশে আবার নাকি রেমালকে অনেকে রিমাল বলেও ডাকছেন। কিন্তু, কে ঠিক তা নিয়ে চলছে চাপানউতোর। এরইমধ্য়ে মজা করে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, আসল নামটা কী তা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্য়ে সংঘর্ষও হয়েছে। আহত ৫।
শ্রীরামপুরের ফেরিঘাটের একটি নোটিসও ভাইরাল হয়েছে সোশ্য়াল মিডিয়ায়। যা নিয়ে চলছে হাসাহাসি। তাতে স্পষ্ট লেখা, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নির্দেশানুসারে রুমেলা সাইক্লোনের জন্য যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকবে।’ যদিও এই নোটিসের সত্যতা যাচাই করেনি টিভি ৯ বাংলা।