ডাকাত কালীর গল্প: দুর্গা থেকে কালী হয়ে ওঠার ইতিহাস চিতু ডাকাতের প্রতিষ্ঠিত চিত্তশ্বরী দুর্গা মন্দিরের

TV9 Bangla Digital | Edited By: Shubhendu Debnath

Nov 04, 2021 | 10:21 PM

চিত্তেশ্বরী দেবী এখানে হরিদ্রাভবর্ণা অর্থাৎ হলুদ রঙের। তবে আর পাঁচটি কালী মূর্তির মত নয় এই দেবীর রূপ। দেবী এখানে সিংহবাহিনী। রেভারেন্ড লঙ সাহেবের কলকাতা বর্ণনায় এই চিত্তেশ্বরী দেবীর কথাও পাওয়া যায়। লঙ সাহেবের বর্ণনা অনুযায়ী এই মন্দিরে সর্বাধিক নরবলীও দেওয়া হত।

ডাকাত কালীর গল্প: দুর্গা থেকে কালী হয়ে ওঠার ইতিহাস চিতু ডাকাতের প্রতিষ্ঠিত চিত্তশ্বরী দুর্গা মন্দিরের
ফাইল চিত্র

Follow Us

আলোর সাজে সেজে উঠেছে কলকাতা সহ গোটা রাজ্য। কালী মানেই শক্তির আরাধ্যা দেবী, আর কালীপুজো মানেই যুগ যুগান্ত ধরে চলে আসা নানা গা ছমছমে গল্প। সেসব গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন রাজারাজরা থেকে মায় দুর্ধর্ষ সব ডাকাতরা পর্যন্ত। আর এই সব ডাকাতরা এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় শুধু নয় বরং এক সময় দাপিয়ে বেড়াত খোদ কলকাতার বুকেও। তবে সে কলকাতা আজকের ঝাঁ চকচকে শপিং মল, ফ্লাইওভার সম্বলিত কলকাতা নয়, সে কলকাতা ছিল জলাজঙ্গলে পরিপূর্ণ এক অঞ্চল।

খুব কম লোকেই জানেন যে বর্তমান কলকাতা এক সময় সুন্দরবনেরই একটি অংশ ছিল। জলাজঙ্গলে পূর্ণ এই অঞ্চলে ছিল সুন্দরবনের মতোই বাঘের উপদ্রব আর ছিল ভয়ঙ্কর সব ডাকাতদের উৎপাত। কলকাতার যে অঞ্চল আজ যাত্রা দলের রমরমার জন্য বিখ্যাত সেই চিৎপুরের নামের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে এক ডাকাত এবং কালী মায়ের নাম। সেই ডাকাতের নাম চিত্তেশ্বর রায় বা চিত্রেশ্বর রায়। এই চিৎপুর নামে কিন্তু কোনও রাস্তা ছিল না সে সময়। এই মন্দিরের পাশ দিয়ে যেতে হত বলে সাহেবরা বলতেন ‘ওল্ড পিলগ্রিমেজ রোড’ বা ‘রোড টু চিৎপুর’। সেখান থেকেই মন্দিরের নাম অনুসারে হয়ে যায় চিৎপুর রোড। আর এই চিৎপুরই ছিল চিতে ডাকাতের আখড়া।

একদিন স্বপ্নাদেশ পেয়ে গঙ্গার জলে ভেসে আসা নিমকাঠ দিয়ে দেবী দুর্গার মূর্তি নির্মাণ করে তা প্রতিষ্ঠা করে চিতু ডাকাত। এবং কালীপুজোর নিয়মানুসারেই শুরু করে পুজো। সে সময় ভাগীরথীর তীরে অবস্থিত কাশীপুর সংলগ্ন এই অঞ্চলটি ছিল জলাজঙ্গল, এবং গুটি কয়েক জেলেমাঝির বাস। ছিল বাঘের উৎপাতও। ফলে এই মূর্তি তৈরির পাশাপাশি বাঘের উৎপাত থেকে বাঁচতে ব্যাঘ্র দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে সুন্দরবনের প্রতিভূ হিসেবে দেবীর পায়ের কাছে একটি বাঘেরও মূর্তি তৈরি করে চিতে ডাকাত। শোনা যায় প্রতিদিন ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে ষোড়শোপচারে এই মূর্তির পুজো করত চিতে বা চিতু ডাকাত। এই মন্দির আদি চিত্তেশ্বরী মন্দির নামেও খ্যাত কারণ বলা হয় প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো এই মন্দির।

চিত্তেশ্বরী দেবী এখানে হরিদ্রাভবর্ণা অর্থাৎ হলুদ রঙের। তবে আর পাঁচটি দুর্গা মূর্তির মত নয় এই দেবীর রূপ। দেবী এখানে সিংহবাহিনী। রেভারেন্ড লঙ সাহেবের কলকাতা বর্ণনায় এই চিত্তেশ্বরী দেবীর কথাও পাওয়া যায়। লঙ সাহেবের বর্ণনা অনুযায়ী এই মন্দিরে সর্বাধিক নরবলীও দেওয়া হত। সে কারণেই দেবী এখানে দুর্গারূপে পুজিত হলেও এই নরবলীর কারণে কলকাতার নানা ইতিহাসে দেবী কালী রূপেও বর্ণিত হন। অন্যদিকে দক্ষিণ রায় বাঘের মূর্তিটিকে এখানে দেবীর পুজোর আগেই পুজো করা হয়। তবে ডাকাতদের কাছে এই দেবী উগ্রচণ্ডা রূপে পুজিত হলেও বর্তমানে স্নেহময়ী মাতৃরূপেই পুজিত হন। চিতু ডাকাতের মৃত্যুর পর এই বিগ্রহ উদ্ধার করে তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই সময়ের জমিদার মনোহর ঘোষ এবং নৃসিংহ ব্রহ্মচারী। বর্তমানে এই মন্দিরের সেবায়েতের দায়িত্বে রয়েছেন সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের বংশধর হালিশহরের কাশীশ্বর এবং ইন্দ্রা রায়চৌধুরী। ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের এই মন্দিরে যাতায়াতের উল্লেখ অনেক নথীতেই পাওয়া যায়। তবে এই দেবী দুর্গা হিসেবে পুজিত হলেও এই দেবীর পাশে কিন্তু নেই লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী এবং কার্তিক। আজও এই মন্দিরের আরতি দেখতে প্রচুর লোক সমাগম হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: Kali Puja 2021: এখানে মশাল জ্বালিয়ে আসেন পুরোহিত, স্বহস্তে এই কালীর পুজো দিতেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র

Next Article