Subrata Mukherjee Passes Away: “সুব্রতদা অস্বীকার করে চলে যাওয়ার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রিয়দা”
"শকটা প্রচন্ড ছিল। তারপরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দল পরিবর্তন এর আগেও সুব্রতদা করেছিলেন। তবে তখন প্রিয়দা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি থাকায় আঘাতটা ভীষণ মাত্রায় লেগেছিল। তাঁকে না বলে সুব্রতদা চলে গিয়েছিলেন।"
রক্তিম ঘোষ
কলকাতাঃ সকাল থেকে বার কয়েক চেষ্টা চলছিল তাঁকে ফোনে ধরার। সুইচ অফ ছিল। বেশ অনেকক্ষণ। কিন্তু তাঁর প্রতিক্রিয়া না এলে তো সুব্রতমুখোপাধ্য়ায়ের প্রয়াণ পরবর্তী প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ কিছুতেই পূর্ণ হয় না। তিনি প্রিয়-জায়া দীপা দাশমুন্সি। রাজনীতিতে প্রিয়-সুব্রত জুটিকে সবাই যেমন দেখেছেন তা অনেকটা দিনের আলোর মতো। কিন্তু ঘরোয়া আবহে কেমন ছিল সেই রসায়ন, তা জানালেন দীপা দাশমুন্সি। আরে সেই প্রতিক্রিয়াতেই উঠে এল স্মৃতিচারণা এবং বিস্ফোরক মন্তব্য। ” সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দল পরিবর্তনের পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি।” কিন্তু কেন? কী ঘটেছিল?
এ প্রসঙ্গে টেলিফোনে প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির স্ত্রী দীপা দাশমুন্সি TV9 বাংলা-কে যা বলেছেন তা হুবহু তুলে দেওয়া হল।
“প্রিয়- সুব্রত জুটি একটা সময় বাংলার রাজনৈতিক আন্দোলনে একটা প্রতীক হয়েছিল।পরবর্তীকালে রাজনৈতিক মতভেদের কারনে সুব্রতদা অন্য দলে চলে গেলেও সামাজিক বন্ধুত্ব থেকেই গিয়েছিল দুজনের মধ্যে।বন্ধুত্বর থেকেও বলব, আত্মীয়তা।প্রিয়দা আঘাতই পেয়েছিলেন, সুব্রতদার এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মত পরিবর্তনেও।তবে প্রিয়-সুব্রত জুটির রাজনৈতিক আন্দোলনের যাঁরা ফসল তাঁরা এখন অনেকে বিভিন্ন পদে আছেন। স্থায়ীভাবেই আছেন।অনেকেই মন্ত্রী হয়েছেন। বিধায়ক-সাংসদও হয়েছে অনেকে।সুব্রতদা-র চলে যাওয়ায় রাজনৈতিক একটা যুগ শেষ হয়ে গেল।প্রিয়-সুব্রত জুটিটার কেউই-ই আর থাকল না।আজকের প্রজন্মের জানা নেই, কিভাবে বাংলাকে একটা রাজনৈতিক আন্দোলনের অভিমুখ দেখিয়েছিল এই জুটি।যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা কখনই ভুলতে পারবেনা।”-গড়গড় করে স্মৃতিচারণায় বলে চলেছিলেন কংগ্রেসনেত্রী ও প্রিয় পত্নী দীপা দাশমুন্সি।
আমরা প্রিয়-সুব্রত জুটিকে যেমন দেখেছি, দীপা দাশমুন্সি তা দেখেছেন আরও গভীরভাবে এবং ভিন্ন পরিসরে। কেমন ছিল সেই বন্ধুত্ব?
“সুব্রতদা খুব রসিক মানুষ ছিলেন।যখন দুজনের দেখা হত পরবর্তী সময়ে, তখন রাজনৈতিক মতভেদ থাকতনা আড্ডায়।এক অনাবিল আড্ডা ছিল। দারুন জমত সেই আড্ডা।আমাদের বাড়িতে বহুবার সেই আড্ডা হয়েছে। ছন্দবাণীদিও (সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী) আসতেন।ছন্দবাণীদি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও সুব্রতদার জীবনে তাঁর অবদান ছিল অপরিসীম।আড্ডার মুহূর্তগুলো কখনই ভোলা যায়না।রাজনীতিতে তো বন্ধুতা সেরকমভাবে হয়না। আর প্রিয়দার রাজনীতির বাইরে তেমন কোনও বন্ধু ছিল না। আমার বলতে আজ দ্বিধা নেই, রাজনীতিতে প্রিয়দার একমাত্র বন্ধু ছিলেন সুব্রতই।আমাদের বাড়ি যখন আসতেন , কিংবা যখন কোনও কমন জায়গায় দেখা হত, সুব্রতদা-প্রিয়দার খুনসুঁটি, আড্ডা দেখলে বোঝা যেত সম্পর্ক কতটা জোরালো ছিল।আজ তো সেই মধুর স্মৃতিগুলো রোমন্থনের সময় নয়। আমি সুব্রত দার আত্মার শান্তি কামনা করি। ছন্দবাণীদির প্রতি রইল গভীর সমবেদনা। ”
বন্ধুত্বের মাঝেও প্রিয়বাবুর ঠিক কী প্রতিক্রিয়া ছিল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দল বদলে? সেই ঘটনা কতটা আকস্মিক ছিল প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির কাছে?
“শকটা প্রচন্ড ছিল। তারপরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দল পরিবর্তন এর আগেও সুব্রতদা করেছিলেন। তবে তখন প্রিয়দা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি থাকায় আঘাতটা ভীষণ মাত্রায় লেগেছিল। তাঁকে না বলে সুব্রতদা চলে গিয়েছিলেন। শুধু না বলে নয়, একেবারে অস্বীকার করে চলে গিয়েছিলেন। এটা খুব বড় আঘাত ছিল।”
স্মৃতিচারণার মাঝেও উঠে এল বিতর্ক। বন্ধুত্বের মাঝে বিতর্ক। যা হয়ত আড্ডায় বা খুনসুঁটিতে সরিয়েই রাখতেন প্রিয় ও সুব্রত দুজনেই। এটাই বোধ হয় রাজনীতির বাইরের প্রিয়-সুব্রত জুটি বঙ্গ রাজনীতিতে অমর হয়ে যাওয়ার এক ও একমাত্র কারণ।