Recruitment Case: পোস্টমর্টেম: কেন ‘হাইপাওয়ার’ কমিটি গড়েছিলেন পার্থ? নিয়োগ দুর্নীতিতে ভূমিকা কী?
Recruitment Case: তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থর অনুমোদনে ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়েছিল। সেই কমিটির কাজ কী ছিল? সরকারিভাবে কী জানানো হয়েছিল? প্রকৃতপক্ষে কী কাজ করত ওই কমিটি?

পর্ব-২
কলকাতা: ব়্যাঙ্ক জাম্প। সাদা ওএমআর শিট জমা দিয়ে চাকরি। ২০১৬ সালের এসএসসি-র নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একের পর এক তথ্য সামনে এসেছে। দুর্নীতিতে কোথাও কোনও ফাঁক না থাকে, তার জন্যও কি ফন্দি আঁটা হয়েছিল? প্যানেলের বাইরে থাকা চাকরিপ্রার্থীরা কীভাবে চাকরি পাবেন, সেই পথ সুগম করতে কি ‘হাইপাওয়ার’ কমিটি গঠন করা হয়েছিল? তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তৈরি করা কমিটিই কি সেই কাজ করত? সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হওয়ার পর এই নিয়ে জল্পনা আরও বেড়েছে।
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তৈরি করা কমিটির কথা প্রথম জানা যায় বাগ কমিটির রিপোর্টে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বাগ কমিটিকে তদন্তভার দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। বাগ কমিটির প্রধান ছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগ। সেই কমিটির রিপোর্টেই প্রথম জানা গিয়েছিল, স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে একটি কমিটি তৈরি করেছিলেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এসএসসি-র নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই কমিটিতে নিজের ঘনিষ্ঠদের রেখেছিলেন তিনি। পরে সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ইডি ও সিবিআই নিয়োগ মামলায় তদন্ত শুরু করে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী-সহ ওই কমিটির কয়েকজন গ্রেফতার হন।
এই খবরটিও পড়ুন




কেন ‘হাইপাওয়ার’ কমিটি গঠন করেছিলেন পার্থ?
তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থর অনুমোদনে ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়েছিল। সেই কমিটির কাজ কী ছিল? ২০১৬ সালের এসএসসি-র বাকি থাকা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সেন্ট্রাল কমিশনকে গাইড করা, তদারকি করা এবং নজরদারি চালানোর জন্য ওই কমিটি গঠন করা হয় বলে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। কিন্তু, আইনের চোখে ওই কমিটির গঠন করা যায় না।
কারা ছিলেন ওই কমিটিতে?
ওই কমিটির সদস্যদের বেশিরভাগই সেন্ট্রাল কমিশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কমিটিতে ছিলেন সেন্ট্রাল কমিশনের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা। ছিলেন মধ্য়শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, সেন্ট্রাল কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, সৌমিত্র সরকার, অশোককুমার সাহা-সহ কয়েকজন।
সিবিআই ও আইনজীবী মহলের একাংশের অনুমান, নিয়োগ দুর্নীতিকে সংগঠিত করেছিল এই উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। অভিযোগ, নিয়োগের ক্ষেত্রে এই কমিটির সুপারিশ ফলো করলেই হবে বলে নির্দেশ দিয়েছিলেন পার্থ। জানা গিয়েছে, প্রাথমিকে নিয়োগ মামলায় ধৃত মানিক ভট্টাচার্যের সুপারিশে শান্তিপ্রসাদ সিনহাকে এই কমিটিতে রেখেছিলেন পার্থ। নিয়োগের ক্ষেত্রে শেষ কথা হয়ে উঠেছিলেন শান্তিপ্রসাদ।
সিবিআই তদন্তে উঠে এসেছে, পার্থর আপ্ত সহায়কের ঘরেই এই ‘হাইপাওয়ার’ কমিটির বৈঠক হত। এই কমিটির কারসাজিতে শূন্যপদের চেয়েও অতিরিক্ত পদ তৈরি করে নিয়োগ হয়েছে। ক্লাস নবম ও দশম শ্রেণিতে অতিরিক্ত শিক্ষক পদ তৈরি করা হয়েছে ১০৭১টি। ক্লাস ইলেভেন ও টুয়েলভে অতিরিক্ত শিক্ষক পদ তৈরি করা হয়েছে ১৯৯টি। আর গ্রুপ সির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৪১৬টি পদ তৈরি করা হয়েছে। আর গ্রুপ ডির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৬৬৯টি পদ তৈরি করা হয়েছে।
মনে করা হচ্ছে, একটা প্যারালাল নিয়োগ চলত। যা নিয়ন্ত্রণ করত এই কমিটি। পার্থর অনুমোদনে দুর্নীতির মাথায় ছিলেন শান্তিপ্রসাদ। এমনকি, চাকরিপ্রার্থীদের আবেদনের ভিত্তিতে ডেটা স্ক্যানটেকের কাছ থেকে ওএমআর শিটের ডিজিটাল কপি আনার ক্ষেত্রেও মূল মাথা ছিলেন শান্তিপ্রসাদ। পার্থর পাশাপাশি তিনিও গ্রেফতার হন। তদন্তকারীরা বলছেন, দুর্নীতির উপর নজরদারির জন্যই এই কমিটি গড়েছিলেন পার্থ। আর এই মাথায় রেখেছিলেন শান্তিপ্রসাদকে।





