কলকাতা: সম্প্রতি, পদ্ম পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন সঙ্গীত শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukhopadhyay)। তারপরেই গুরুতর অসুস্থ গীতশ্রী। এ বার সন্ধ্যাদেবীর অসুস্থতার নেপথ্যে সরকারের পরোক্ষ চাপ রয়েছে বলে অভিযোগ করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। খড়গপুর সাংসদের দাবি, সন্ধ্যাদেবীর পুরস্কার প্রত্যাখ্যান নিয়ে এমন পরিবেশ তৈরি হল, যে মানসিক ভাবে পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেন তিনি। আর তারপরেই তাঁর এই অসুস্থতা।
ইকো পার্কে প্রাতঃভ্রমণ সেরে ফেরার পথে দিলীপ বলেন, “আমার মনে হয় চাপটা ওইদিক থেকেই আসছে। বুদ্ধবাবুকে তাঁর পার্টি চাপ দিয়ে পুরস্কার নিতে দেয়নি। সন্ধ্যাদেবীর ক্ষেত্রেও একটা চাপের পরিবেশ তৈরি করা হল। যেন পুরস্কার নেওয়াটা অপরাধ। ওঁ সমাজের জন্য, সংস্কৃতির জন্য যা করেছেন তা স্বীকৃতি দেওয়াটা অপরাধ। তিনি নিজে কিছু বলার আগেই মুখ বন্ধ করে দেওয়া হল। ছ্যাঁচড়ামির রাজনীতি হচ্ছে বাংলায়। হতে পারে, এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান নিয়ে ওঁর মধ্যে কোনও মানসিক চাপ তৈরি হয়েছিল। যাঁরা এধরনের চাপের রাজনীতি করে বিতর্ক তৈরি করছেন তাঁরাই ওঁর অসুস্থতার কারণ।”
সদ্যই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ‘গীতশ্রী’। ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ার পাশাপাশি তাঁর হার্টেও সমস্যা দেখা গিয়েছে। ৯০ বছরের গায়িকার চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যেই তাঁকে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।
হাসপাতাল (Apollo Hospital) সূত্রে খবর, সন্ধ্যার চিকিৎসার জন্য মোট পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। সেই টিমে রয়েছেন কার্ডিওথোরাসিক ড. সুশান মুখোপাধ্যায়। কার্ডিওলজিস্ট ড. প্রশান্ত মণ্ডল। তাঁদের যৌথ নেতৃত্বে বোর্ডের অন্য তিন সদস্য চিকিৎসক হলেন জেনারেল মেডিসিন ড. শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, পালমোনোলজিস্ট সুরেশ রামাসুব্বন ও দেবরাজ যশ। কোভিড আইসোলেশন ওয়ার্ডের ২০২ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন গীতশ্রী।
বৃহস্পতিবারই সন্ধ্যাদেবীকে দেখতে এসএসকেএম হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর শারীরিক অবস্থার খবর শুনে প্রথম থেকেই খোঁজখবর নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এসএসকেএমে দাঁড়িয়েই মমতা জানিয়েছেন, শিল্পীর হার্টেরও সমস্যা রয়েছে। তাই তাঁকে দ্রুত অ্যাপোলোতে পাঠানো হয়েছে।
সম্প্রতি পদ্মশ্রী সম্মান প্রত্যাখ্যান করেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি সরগরম হয়ে ওঠে। সূত্রের খবর, এই নিয়ে মানসিকভাবে কিছুটা খারাপ লাগা কাজ করছিল শিল্পীর। এরইমধ্যে বুধবার রাতে শ্বাসের কষ্ট, বাথরুমে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে বলে গায়িকার পরিবার সূত্রে খবর। বৃহস্পতিবার আরও খারাপ হয় শরীর। ওইদিনই এসএসকেএম থেকে গ্রিন করিডর করেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে অ্যাপোলোতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
যদিও, সন্ধ্যাদেবীর এই পদক্ষেপকে সমর্থন করে রাজ্যের শাসকদল থেকে আপামর শিল্পীমহল। মেয়র ফিরহাদ হাকিম দাবি করেন বাংলাকে ভালবেসেই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন সন্ধ্যাদেবী। অন্যদিকে, তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় মনে করেন, মোদী সরকারের ‘দেখনদারি উদারতায়’ সায় দেননি সন্ধ্যা। শিল্পী শুভাপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় যদিও বলেন, “সন্ধ্যাদেবীর এটা বয়স নয়, পদ্মশ্রী পাওয়ার। আর যেভাবে ওঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল সেভাবে কোনও শিল্পীকে সম্মান জানানো যায় না।”
সমস্ত বিতর্কের মাঝে খোদ গীতশ্রীর কী মন্তব্য ? তিনি বলেছিলেন, “আমি ওঁদের জানিয়ে দিয়েছি, পদ্মশ্রী আমি অ্যাক্সেপ্ট করব না। সোজাসুজি বলেছি, মেরা দিল নেহি চাহতা হ্যায় (আমার মন চাইছে না)। ম্যায় নেহি লুঙ্গি (আমি গ্রহণ করব না)। আমাকে ওঁরা কারণ জিজ্ঞেস করেছিল। বলেছি, ওই একটাই কারণ, মেরা দিল নেহি চাহতা হ্যায়। আমার তো এতটা বয়স হয়েছে। ব্যাস, এই টুকুই জানিয়েছি। বাড়াবাড়ি আর কোনও কথাই বলিনি।”
আরও পড়ুন: অবস্থা ভাল নয়, কড়া পর্যবেক্ষণে ‘গীতশ্রী’, অ্যাপোলো হাসপাতালে তৈরি নতুন মেডিক্যাল বোর্ড