কলকাতা: বঙ্গ-বিজেপির অন্দরে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে ‘বিদ্রোহের’ সুর। এই পরিস্থিতিতে, রবিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের বাড়িতে বিজেপি নেতৃত্বের বৈঠককে কেন্দ্র করে তীব্র জল্পনা রাজনৈতিক মহলে। ঠাকুরনগরে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়িতে আচমকাই দেখা যায় দলের কিছু ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতাকে। সেই তালিকায় ছিলেন, সায়ন্তন বসু, রীতেশ তিওয়ারি-সহ অনেকে। ছিলেন জয়প্রকাশ মজুমদারও। যদিও কী নিয়ে এই রুদ্ধদ্বার বৈঠক, সে বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ বিজেপি নেতৃত্ব। মুখ খোলেননি শান্তনুও। এ নিয়েই এ বার নির্ঘোষ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh)।
সোমবার সকালে ইকোপার্কে ভ্রমণকালে দিলীপ বলেন, “আমারও মাঝেমধ্যে মনে হয় গ্রুপ লেফট করি। তাহলে কী হবে? তাহলে কেবল খবর হবে। সংবাদমাধ্যমের নজরে আসব। এর চেয়ে বেশি কিছু হবে না। কারণ, গ্রুপ লেফট করে সমস্যা সমাধান বা পদপ্রাপ্তি কোনওটাই হয় না। উল্টে অসম্মানিত হতে হয়। দলের অন্দরে কোনও সমস্যা তৈরি হলে সেটা ভেতরেই মিটিয়ে নেওয়া ভাল। সেই সুযোগও রয়েছে। ”
এরপরেই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে রুদ্ধদ্বার বৈঠক সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, “কে কার বাড়িতে বৈঠক করবে তা নিয়ে কী বলার আছে! শান্তনু এখন খবরের নজরে আসছেন। তাই তাঁর বাড়িতে বৈঠক হলেই খবর হচ্ছে। তিনি তো কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে যে কেউ দেখা করতে পারে। সৌজন্যের রাজনীতিতে তো কোনও খারাপ কিছু নেই। এ কথা তো আমি আগেও বলেছি।”
সাম্প্রতিক কালে বিজেপির নয়া রাজ্য ও জেলা কমিটি ঘিরে একাধিক বিতর্কের উদ্রেক হয়েছে। নতুন সদস্য তালিকা সামনে আসতেই একদিকে যেমন বিজেপিতে ‘লেফট’ রাজনীতির প্রকাশ প্রকট হয়েছে তেমনই দলের সাংগঠনিক দৃঢ়তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে।
নতুন রাজ্য কমিটিতে মতুয়াদের কোনও প্রতিনিধি নেই বলে অভিযোগ তুলে কিছুদিন আগে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পাঁচ বিজেপি বিধায়ক বিধায়ক হোয়াটস অ্যাপের একটি গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যান। তালিকায় ছিলেন অশোক কীর্তনিয়া, মুকুটমণি অধিকারী, সুব্রত ঠাকুর, অসীম সরকার এবং অম্বিকা রায়। পরে অম্বিকা রায় ‘ভুল’ বুঝে নিয়ে ফিরলেও বাকিরা ফেরেননি। এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য ও করেননি।
জল্পনায় ঘৃতাহুতি পড়ে বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের দলীয় হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া ঘিরে। যদিও শান্তনু সে সময় জানিয়েছিলেন, “কেন গ্রুপ ছেড়েছি, সময়মতো জানাব।” এরপর এখনও অবধি তিনি এ নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি। এরই মধ্যে রবিবার তাঁর বাড়িতে এই বৈঠক। শুধু তাই নয়, আরও জানা যাচ্ছে, চলতি সপ্তাহেই দিল্লি যাচ্ছেন শান্তনু। সূত্রের খবর, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি নাড্ডার সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সে সম্ভাবনা খারিজ করেছেন দিলীপ। তাঁর দাবি, শান্তনু মন্ত্রী, তাই তিনি দিল্লি যাবেন, এটাই স্বাভাবিক।
আগেই দিলীপ বলেছিলেন, “গ্রুপ নিয়ে বিজেপিতে রাজনীতি হয় না। পদপ্রাপ্তি নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হতে পারে। তবে দলের সমস্যা দলের অন্দরেই মেটানো হবে। আমাদের দল একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ দল। কেবলমাত্র ব্যক্তিগত স্বার্থ দেখে দল কাজ করে না।”
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh on Abhishek Banerjee: ‘ওঁ কখন দলের, কখন ঘরের লোক বুঝি না’