দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ভ্যাকসিন নিয়ে বিতর্ক যেন এ রাজ্যের পিছু ছাড়ছে না। একের পর এক মারাত্মক সব অভিযোগ উঠছে টিকাপ্রদান ঘিরে। এবার ভ্যাকসিন-পর্বে যুক্ত হল ‘হাফ প্যান্ট’ বিতর্ক। হাফ প্যান্ট পরে যাওয়ায় ভ্যাকসিন দিতে অস্বীকার করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ‘শোভনীয় পোশাক’ ছাড়া পুরসভাতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার অভিযোগ। আর সে কারণেই ভ্যাকসিন পেলেন না বোড়াল সর্দারপাড়ার বাসিন্দা শীর্ষনাথ পণ্ডিত। যদিও এই ঘটনায় পুরসভার তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ, শুক্রবার বিকেল তিনটে নাগাদ শীর্ষনাথ পণ্ডিত তাঁর মাকে নিয়ে রাজপুর সোনারপুর পুরসভার স্থানীয় ভবনে টিকা নিতে যান। নিয়ম মতো টিকা নেওয়ার আগে কুপনও সংগ্রহ করেন তাঁরা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নেওয়ার জন্য যখন মূল গেট পার করতে যাবেন, অভিযোগ সে সময়ই সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা শীর্ষনাথকে আটকে দেন। স্পষ্ট বলেন, হাফ প্যান্ট পরে এখানে ঢোকার অনুমতি নেই। এমন কথায় কার্যত থ হয়ে যান ওই যুবক।
শীর্ষনাথের কথায়, “এক ভদ্রলোক আমাকে বলেন, ‘একদিন আপনি হাফ প্যান্ট পরে এসেছেন, এরপর একদিন অন্তর্বাস পরে আসবেন এটা তো হয় না। ভিতরে মহিলারা আছেন। সব জায়গার একটা নিয়ম আছে’। আমি তো বুঝলামই না কোথায় এটা অশালীন হল! এর সঙ্গে কেনই বা অন্তর্বাস পরে আসার প্রসঙ্গ টানলেন। এত কথা বলছেন যাঁরা, তারা বছর ভর মুখ খোলেন না কেন, যখন এলাকার হাঁটু অবধি জল জমে থাকে। আমাদের এলাকার জল যন্ত্রণাই তো আমাদের এই অভ্যাস করতে বাধ্য করেছে। তবে এরকম নয় আমি কোনও অজুহাত দিতে চাই। আমি যে পোশাকই পরি না কেন, আমার মতে এমন কিছু পরিনি যা শালীনতার সীমা লঙ্ঘণ করে। বাড়ি থেকে একেবারেই সামনে এই টিকা কেন্দ্র। আমি কোনও অফিশিয়াল কাজেও যাইনি। টিকা নিতে গিয়েছিলাম। পুরসভার কাজে যাইনি।”
একই সঙ্গে শীর্ষনাথের প্রশ্ন, স্বাস্থ্যভবনের কোনও নোটিস ছাড়া কী ভাবে এমনটা কোনও পুরসভা ঘটাতে পারে? তাঁর কথায়, “রাজপুর সোনারপুর পুরসভার একটি নোটিস ঝুলছিল, হাফ প্যান্ট পরে ভিতরে যাওয়া যাবে না। কেন এমন নিদান কেউ দেবে? এই ঘটনায় আমি অত্যন্ত অপমানিত বোধ করি। মাকে বাইরে নিয়ে এসে লাইনে দাঁড় করাই। তবে মাকে ওনারা আগে ভাগে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন, সেটা আমি অস্বীকার করব না। কিন্তু এরপরই দেখি ভিতর থেকে একজন স্যান্ডো গেঞ্জি পরে বেরিয়ে আসছেন। যিনি আমাকে আটকে ছিলেন তাঁকে জিজ্ঞাসা করি, এটা তা হলে বৈধ? তিনি বলেন, আমি এখানে ঝামেলা করতে এসেছি কি না!”
এই ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছে বাম-বিজেপি সবপক্ষই। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, “ভ্যাক্সিনের জন্যও যে ড্রেস কোড আছে, আমার জানা নেই। ভ্যাকসিন দেবেন না ঠিক আছে। তা বলে হাফ প্যান্ট পরলে ভ্যাকসিন দেবেন না, সালোয়ার কামিজ পরলে ভ্যাকসিন দেবেন না, এ আবার হয় নাকি! হয়ত কাটমানি পাননি তাই এই পরিস্থিতি হয়েছে।” অন্যদিকে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এতো রাজনীতির টিকাকরণ মনে হচ্ছে। যাকে খুশি তৃণমূল টিকা দিচ্ছে, যাকে খুশি বের করে দিচ্ছে। নেতাদের স্লিপ থাকলে পাবেন, না হলে পাবেন না তো দেখেই আসছিলাম। এখন আবার ড্রেস কোড!” যদিও এ প্রসঙ্গে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার তরফে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আরও পড়ুন: ধোপে টিকল না তৃণমূল নেতার ‘দাদাগিরি’, গর্ভবতী মহিলাদের টিকা শিবিরে গোলমাল পাকিয়ে গ্রেফতার