কলকাতা: বোধনেই কুমোরটুলিতে (Kumartuli) বিসর্জনের বাদ্যি। গত কয়েকটা দিন মাছি পড়ারও জায়গা পায়নি এই কুমোরপাড়ায়। দিনভর মানুষের ভিড়, বায়না, হাজার হাজার টাকার লেনদেন, বল দুগ্গা মাইকি বলে মাকে নিয়ে যাওয়া। তবে ষষ্ঠীর সকাল থেকে সে সব আর নেই। লোকেরও যাতায়াত নেই সেখানে।
কুমোরটুলি এখন ফাঁকা ফাঁকা। অগোছালো ঘরগুলোয় রঙের ছাপ, মাটির ছোপ। পড়ে আছে কিছু বিক্রি না হওয়া দুর্গা মূর্তি। পাশে দাঁড়িয়ে ধনদেবী লক্ষ্মী। এখনও সাজগোজ হয়নি। খালি মাথা, চাপানো হয়নি কালো কেশের বহর। ষষ্ঠীর কুমোরটুলি এমনই। তিলে তিলে গড়া প্রতিমা বিক্রির পর লাভ ক্ষতির হিসাবে ব্যস্ত।
মেয়েকে ছোট থেকে বড় করে যখন শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়, সেই যে একটা অনুভূতি! মৃৎশিল্পীদের অনুভূতিও এখন অনেকটা তেমনই, বলছিলেন প্রতিমা শিল্পী মিন্টু পাল। তিনি বলেন, “প্যান্ডেলে চলে গেল, আবার কয়েক দিন পর বিসর্জনও হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের এটা মেনে নিতে হয়। এরপরই লক্ষ্মীপুজো। লক্ষ্মী এসে সেই শূন্যতা কিছুটা ভরাট করে। এরপর কালী পুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো।”
বড় শিল্পীর ঘরে মাথা গুজে খাটেন কারিগররা। নাওয়া খাওয়া ভুলে খড় বাধা, তার পর এক মেটে দো মেটে থেকে দুর্গা গড়ার কৃতিত্ব জেলা থেকে আসা এই মানুষগুলোর কিছু কম নয়। কুমোরটুলি থেকে মণ্ডপে দুর্গাকে রওনা করিয়ে দিয়ে কারিগর বাড়ি ফেরেন। তাঁরও পথ চেয়ে আছেন বউ, সন্তানেরা। বাড়ি ফেরে কুলি। যাঁদের কাঁধে চেপে সপরিবারে মণ্ডপে গিয়ে বসে দুর্গা।
প্রতিমা শিল্পী মিন্টু পাল জানালেন, “কারিগররাও ব্যাগ গোছাচ্ছে। ওরাও বাড়ি যাবে। ওদেরও বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে মেয়ে রয়েছে। তারাও পথ চেয়ে বসে। কাজের শেষে টাকা পয়সা নিয়ে ওদেরও ছুটি।” অথচ যাঁরা এই প্রতিমা গড়েন, তাঁদের সংসার কিন্তু টেনেটুনে চলে। দুর্গা প্যান্ডেলের পথে রওনা হলে তারপর মেলে টাকা। পাওনা গন্ডা বুঝে তুলি থেকে রং তুলে কারিগর পাড়ি দেয় দেশে। ফাঁকা ঘরে থেকে যায় দুর্গার ছাঁচ। কুমোরটুলিতে বিসর্জন আসে বোধনের দিনেই। তবে সেখানে বিষাদও আছে, আছে গরম ভাত আর নতুন জামার গন্ধও।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: পুজোর কলকাতায় ছড়িয়ে পড়ে খুশবু, আতরের গন্ধে ভেসে যায় ‘শোভাবাজার-সুতানুটি’
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: বোধনের সন্ধ্যাতেই জোর ‘টক্কর’! সিপিএমের বুক স্টল নাকি জাগো বাংলার স্টল, এগিয়ে কে