Durga Puja 2021: পুজোর কলকাতায় ছড়িয়ে পড়ে খুশবু, আতরের গন্ধে ভেসে যায় ‘শোভাবাজার-সুতানুটি’
Sobhabazar Rajbari: কনৌজ, লখনউ, এলাহাবাদ কিংবা মুম্বই থেকে আসা মৃগনাভি, জুঁই, বেল, গোলাপের খোসবাই ভেসে বেড়ায় পুজোর কলকাতায়।
কলকাতা: শহরজুড়ে এখন প্রেমের মরসুম। ঠাকুর (Durga Puja) দেখার ছুতোয় প্রেমিকের হাত ছুঁয়ে আছে প্রেমিকার আঙুল। সেই ভিড় ঠেলা পথ থমকে দাঁড়ায় শোভাবাজার রাজবাড়ির সামনে। সেখানে সময়ও থমকে দাঁড়ায় এক মুহূর্ত। কিনে নেয় সুবাস। আতরের গন্ধ ম ম সে হাওয়া। দরিয়া দিলে ভরে দেয় শুধুই সুবাতাস।
যে কলকাতার ঠিকানা নাখোদা মসজিদের পাশের গলি অথবা মেটিয়াবুরুজ ওয়াটগঞ্জের দশ ফুট বাই দশ ফুট। সেই গলি, সেই ঘর থেকে বাক্স ভরা আতর এনে ছড়িয়ে দেন মহম্মদ দানিশ আলাউদ্দিন। বাপ দাদারা আতর বিক্রি করতেন। দানিশ আলাউদ্দিনও বিক্রি করেন আতর। যা সমঝদার তাঁরা ঠিকই কেনেন।
অনেকে বলে আতরের সেই সৌখিন দিন নাকি ফুরিয়ে গিয়েছে? প্রশ্ন করতেই দানিশের এক খরিদ্দার বললেন, ‘কে বলে এসব কথা! এসব কখনও ফুরোয়? এ ভাবে বললে তো সহজে সবই ফুরিয়ে যায়। যাদের কেনার তারা ঠিকই কেনে, মেখেও নেয় শরীরজুড়ে।’
আতরদান থেকে তুলোয় মোছা সুবাস শরীরময় ছড়িয়ে পড়ে পুজোর কলকাতায়। একেবারে রোম্যান্টিসিজমে মাখামাখি। অনেকে আবার এ কথায় বলেন, বাজার চলতি পারফিউমে কেমন যেন দম নিতে কষ্ট হয়। কিন্তু আতরে সেসবের বালাই নেই। গন্ধও থেকে যায় অনেকক্ষণ।
শোভাবাজার রাজবাড়ির সামনে থেকে ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় আতর কিনতে কিনতে এমনই জানালেন প্রৌঢ়া। তাঁর কথায়, “পারফিউমগুলোতে রীতিমতো শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। অন্যরকম একেবারে। মাখতেই পারি না। আতরে আমি অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ্য। আমি ঠাকুরকেও আতর দিয়ে পুজো দিই। আমি নিজেও তা ব্যবহার করি।”
বাবুয়ানি মুছে যাওয়া শহরে কে মাখেন আতর? এই যে মানুষগুলো! যাঁরা পুজোর শহরে দানিশ আলাউদ্দিনের হাত থেকে তুলোয় করে হাতে নিচ্ছেন সুগন্ধি! অনেকের ধারনা রয়েছে আতর মানেই মহার্ঘ। কিন্তু দানিশ আলাউদ্দিন জানালেন, এ ধারণা একেবারেই ভুল। হাজার টাকা অবধিও খুশবু বোতলবন্দি হয় বটে! তবে তার শুরুটা কিন্তু ২৫ টাকা থেকেও হতেই পারে।
কনৌজ, লখনউ, এলাহাবাদ কিংবা মুম্বই থেকে আসা মৃগনাভি, জুঁই, বেল, গোলাপের খোসবাই ভেসে বেড়ায় পুজোর কলকাতায়। দানিশ আলাউদ্দিন বলেন, “আমি প্রায় ২০ বছর ধরে এখানে পুজোয় থাকি। চার পাঁচদিন টানা বসি।” বছরের বাকি সময়টা কলকাতার অলি গলি পাকস্থলি চষে ফেলেন এই আতরওয়ালা। আপাতত পুজোর ক’দিন দুই বৃদ্ধ এক জায়গায় বসে নাগাড়ে রুমালে ঢালছেন রঙিন তরল। যখন ঠাকুর দেখার ভিড় থমকে দাঁড়ায়, সাদা দাড়ি গোফের ফাঁকে খেলা করে এক চিলতে হাসি।