কলকাতা: বউবাজার এলাকায় একাধিক বাড়়িতে ফাটলের জের। তিন মাস পিছিয়ে গেল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজ। মেট্রো কর্তৃপক্ষ শনিবার এ কথা জানিয়েছেন। যদিও এই ফাটলের জেরে শিয়ালদহ থেকে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত মেট্রো চালাতে কোনও অসুবিধা নেই বলেই জানানো হয়েছে KMRLC-এর তরফে। যদিও শিয়ালদহ থেকে মেট্রো চলাচল শুরু ব্যাপারে রেলমন্ত্রীই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বউবাজার এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির পুনর্বাসন নিয়ে মেট্রো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বিজেপির ৩ কাউন্সিলর। আলোচনার পর বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ বলেছেন, “মেট্রো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুনর্বাসনের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এই কাজ দ্রুত করার জন্য আশ্বাস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।“
বুধবার সন্ধ্যায় বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনের ১৪টি বাড়িতে ফাটল দেখা যায়। মেট্রোর সুড়ঙ্গের টানেলে জল ঢোকার জেরেই এই ফাটল তৈরি হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল KMRLC-এর তরফে। তার পরই ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবি ওঠে। এবং মেট্রোর টানেলের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সেই কাজ আগামী তিন মাস বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে কলকাতা মেট্রোর তরফে। এর জেরে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ আরও এক বার ধাক্কা খেল। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো টানেলের কাজ খতিয়ে দেখার জন্য আইআইটি রুরকি থেকে আসবেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা টানেলের কাজের পর্যালোচনা করবেন বলে জানা গিয়েছে। অন্য দিকে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম শুক্রবারই জানিয়েছিলেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দল ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িরগুলির অবস্থা পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দেবেন।
বউবাজার এলাকার বাড়িগুলিতে ২ দফায় ফাটলের জেরে মেট্রোর রুট পরিবর্তনের প্রসঙ্গ উঠছে। কিন্তু এ ব্যাপারে KMRLC কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, মেট্রোর অন্য রুট নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়নি। তাই রুট পরিবর্তন করলে এ ঘটনা ঘটত না, তা নিশ্চিত করে এ অবস্থায় বলা অর্থহীন। মেট্রোর কাজ চলা সময় যদি ওই এলাকার বাড়িতে ফাটল হয়, তাহলে মেট্রো প্রকল্প চালু হলে কী হবে? এই প্রশ্ন মাথা চাড়া দিচ্ছে বিভিন্ন মহলে। কিন্তু এ ব্যাপারে মেট্রো কর্তৃপক্ষ আশ্বার দিয়েছে। টানেলের উপর প্রয়োজনীয় দৈর্ঘ্যের মাটি-বালির স্তর। থাকবে তাই মেট্রো চলাচল করলেও, তার কম্পনের প্রভাব ওই এলাকার বাড়ির উপরে পড়বে না।
২০১৯ সালের ৩১ অগস্টে বউবাজারে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোপথের সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সময়ে দুর্গা পিতুরি লেন ও সেকরাপাড়া লেনের ৭৩টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ২৩টি বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। আরও ২৩টি বাড়ি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। তিন বছর আগের সে দিন থেকে আজ পর্যন্ত বাড়িছাড়া প্রায় ৯০টি পরিবার। বুধবার রাতে নতুন করে ১৪টি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। কেএমআরসিএলের প্রতিশ্রুতি মতো তিন বছরেও বউবাজারের গৃহহীনদের বাড়ি তৈরি হয়নি। শুক্রবার ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন নিয়ে কেএমআরসিএলের সঙ্গে বৈঠক হয় কলকাতা পুরনিগমের। বৈঠকের পরে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘বউবাজারে নির্মীয়মাণ মেট্রো প্রকল্প এলাকার বাড়িগুলির স্বাস্থ্য খতিয়ে দেখবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দল। এ ক্ষেত্রে বাড়িগুলির সার্বিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে ওই সমস্ত বাড়ি এবং আশপাশের মাটি পরীক্ষা সম্পর্কিত একাধিক বিষয়ের রিপোর্ট চেয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। কেএমআরসিএল প্রায় পাঁচটি বিষয়ের রিপোর্ট সপ্তাহখানেকের মধ্যে কলকাতা পুরসভাকে জমা দেবে।’’