Enemy Property Survey: জড়িয়ে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের স্মৃতি, কলকাতাতেও শুরু হল শত্রু সম্পত্তি সমীক্ষা, কাদের খুঁজে বের করছে কেন্দ্র?

Sayanta Bhattacharya | Edited By: ঈপ্সা চ্যাটার্জী

Sep 18, 2024 | 2:14 PM

Enemy Property Survey: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে যে কর্তারা উপস্থিত হয়েছেন, তাঁদের কথায়, দেশের প্রায় সর্বত্র এই ধরনের সম্পত্তি উদ্ধার করা গিয়েছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গে এখনও উদ্ধার করা সম্ভবপর হয়নি। যে কারণে এবার সক্রিয় হল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। 

Enemy Property Survey: জড়িয়ে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের স্মৃতি, কলকাতাতেও শুরু হল শত্রু সম্পত্তি সমীক্ষা, কাদের খুঁজে বের করছে কেন্দ্র?
চলছে জমি জরিপ।
Image Credit source: TV9 বাংলা

Follow Us

সায়ন্ত ভট্টাচার্য ও সিজার মণ্ডল

কলকাতা: গোটা দেশ থেকে সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়েছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই সম্ভব হচ্ছিল না। এবার কলকাতায়  শুরু হল এনিমি প্রপার্টি (Enemy Property Survey) বা শত্রু সম্পত্তির সমীক্ষা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ এনিমি প্রপার্টি ডিপার্টমেন্ট এই  সমীক্ষার শুরু করল। এই প্রথমবার এমন সমীক্ষা হচ্ছে।

জানা গিয়েছে, রাজাবাজারের ১৭০ নম্বর কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটে এই সমীক্ষা চলছে। প্রায় ৪৪ কাঠা জমির উপরে দীর্ঘদিন ধরেই বসবাস ৭০০০ বাসিন্দার। রয়েছে ২৫টি দোকান। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর এখানকার অনেক নাগরিকই এই সম্পত্তি ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যান। তারা কেউ এই সম্পত্তি দাবি না করায়, তা এনিমি প্রপার্টি ডিপার্টমেন্টের অধীনস্থ হয়ে যায়। আজ কেন্দ্রীয় বাহিনীর দুই ব্যাটালিয়ন জওয়ান এনে এই সমীক্ষা শুরু করেছে এনিমি প্রপার্টি ডিপার্টমেন্ট।

সূত্রের খবর, এই জমি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ হলেও, সেখানে যারা বসবাস করেন, তারা কলকাতা পুরসভাকে কর দিয়ে থাকেন। নিয়মমাফিক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তহবিলে এই কর জমা হওয়ার কথা। কিন্তু তা জমা হচ্ছে না বলেই এনিমি প্রপার্টি ডিপার্টমেন্ট সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই সমীক্ষার কাজ শুরু করতে এসেছিলেন এনিমি প্রপার্টি ডিপার্টমেন্টের আধিকারিকরা। তখন তাদের উপরে এলাকার মানুষজন চড়াও হয়েছিলেন, যে কারণে কাজ বাকি রেখেই চলে যেতে হয়েছিল তাদের। এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে এসেছেন প্রপার্টি ডিপার্টমেন্টের আধিকারিকরা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে নির্দেশে মূলত বলা হয়েছে যে এই এনিমি প্রপার্টিতে কতগুলি বেআইনি নির্মাণ তৈরি করা হয়েছে, তার তালিকা তৈরি করতে হবে। সেগুলি আদৌ ভাঙা হয়েছে কি না, তার তালিকাও তৈরি করা হবে।এছাড়া কতজন এই এনিমি প্রপার্টিতে বসবাস করছেন, এবং কতজন কর দিচ্ছেন, সেই তালিকাও তৈরি করা হবে।

জানা গিয়েছে, এই সমস্ত তালিকা সহ সমীক্ষার রিপোর্ট, স্ট্যাটাস রিপোর্ট হিসেবে তৈরি করে সুপ্রিম কোর্টে এবং দিল্লিতে থাকা এনিমি প্রপার্টি ডিসপোজাল কমিটিতে পাঠানো হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে যে কর্তারা উপস্থিত হয়েছেন, তাঁদের কথায়, দেশের প্রায় সর্বত্র এই ধরনের সম্পত্তি উদ্ধার করা গিয়েছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গে এখনও উদ্ধার করা সম্ভবপর হয়নি। যে কারণে এবার সক্রিয় হল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ডেপুটি সেক্রেটারি ও কলকাতা এনিমি প্রপার্টি ইনচার্জ বাপ্পাদিত্য দত্ত বলেন, “এনিমি প্রপার্টি হল যারা পাকিস্তান বা চিন যুদ্ধের সময় অন্য দেশে চলে গিয়েছেন, তাদের রেন্টও অন্য দেশে চলে যাচ্ছিল। এটা আটকাতেই সরকার এই পদক্ষপ করে। কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে এই সম্পত্তি থেকে রাজস্ব বাড়াতে। অনলাইন পোর্টাল আছে, সেখানে  ভাড়া জমা দিতে হয়। কিন্তু এই সম্পত্তিতে তা হচ্ছে না। এই সম্পত্তিগুলির সমীক্ষা করা হচ্ছে।”

তিনি জানান, আগেরবার সমীক্ষার সময় ঝামেলা-হাতাহাতি হয়েছিল, যার জন্য় আর্মহাস্ট স্ট্রিট থানায় অভিযোগও জানানো হয়েছিল। এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে সমীক্ষা করা হচ্ছে।

যারা এই সম্পত্তিতে থাকেন, তাদের কী হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি বলেন, “যদি সম্পত্তির মূল্য বা ভ্যালু ১ কোটি টাকার নীচে হয়, তবে তারা ইপি়ডিসির মাধ্যমে সম্পত্তি কিনে নিতে পারেন। এর বেশি হলে, তা অনলাইন বিডিং হবে। এই প্রেফারেন্স পেতে হলে, আগে রেন্টাল সিস্টেমের অধীনে আসতে হবে।”

কেন্দ্রের তরফে এনিমি প্রপার্টি ডিপার্টমেন্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এই ধরনের সম্পত্তিতে যারা বসবাস করছেন, তাদের তিনটি শর্ত দিতে। প্রথম, এই সম্পত্তিতে যারা বসবাস করছেন, তারা সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এনিমি প্রপার্টি ডিপার্টমেন্টের অধীনে চলে আসবে এবং সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টকে এই সম্পত্তি কর দেবেন। তাদের আর কলকাতা পুরসভাকে সম্পত্তি কর দিতে হবে না। এনিমি প্রপার্টি ডিপার্টমেন্ট কলকাতা পুরসভাকে তাদের হয়ে সম্পত্তি কর দেবে।

দ্বিতীয়, এই সম্পত্তিতে যেহেতু তারা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন, তারা এই সম্পত্তি কিনে নিতে পারেন।

তৃতীয়ত, এই সম্পত্তি সম্পূর্ণ খালি করে দিতে হবে অথবা এনিমি প্রপার্টি ডিপার্টমেন্ট তাদেরকে উচ্ছেদ করে দেবে।

কলকাতায় এই প্রথম এই ধরনের সক্রিয়তা এনিমি প্রপার্টি ডিপার্টমেন্টের। স্বাভাবিকভাবে এলাকায় রয়েছে উত্তেজনা। মোতায়েন রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এর আগে ২০২১ সালে প্রথম এই রাজ্যেই শত্রু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। গণেশ চন্দ্র এভিনিউয়ের একটি চারতলা বাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়।

এনিমি প্রপার্টি কী?

দেশ ভাগের পর যারা পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন, তাদের মালিকানাধীন ভারতীয় সম্পত্তি বন্টনের বৈধকরণ ও নিয়ন্ত্রণের আইন হল শত্রু সম্পত্তি আইন, ১৯৬৮। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর এই আইন পাশ করা হয়েছিল। এই আইন অনুযায়ী, ভারত সরকার এই সম্পত্তির মালিক হবে।

শত্রু আইনে যদি সম্পত্তির মালিকানা ‘শত্রু’র কাছে থেকে যায়, তবে সম্পত্তির অধিকার ও মালিকানা কাস্টডিয়ান বা হেফাজতকারীর হাতে থাকে। আসল মালিকের অনুপস্থিতিতে কাস্টডিয়ান বা বসবাসকারী এই জমি বা সম্পত্তি ভাগাভাগি বা বিক্রি করতে পারে।

কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে ৪ হাজার  ৩০১টি এই ধরনের সম্পত্তি রয়েছে যেগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রপার্টি ডিপার্টমেন্টের অধীনস্থ। দেশজুড়ে প্রায় ১২ হাজার এই ধরনের সম্পত্তি রয়েছে। সবথেকে বেশি এই ধরনের সম্পত্তি রয়েছে উত্তর প্রদেশে। ৫৩৬১টি এনিমি প্রপার্টি বা শত্রু সম্পত্তি রয়েছে।

Next Article