কলকাতা: গঙ্গার তলা দিয়ে মেট্রো চালিয়ে ইতিহাস গড়েছে কলকাতা মেট্রো। ১১ বছর আগে যখন এই মেট্রো প্রকল্পের (সেক্টর ফাইভ থেকে হাওড়া ময়দান) পরিকল্পনা করা হয়েছিল, সেই সময় খরচ ধার্য করা হয়েছিল ৪৮৭৪ কোটি টাকা। তারপর নানা কারণে খরচ বেড়েছে। মেট্রোর রুটও আগের চেয়ে বিস্তৃত হয়েছে। এসেছে অনেক বাধা-বিপত্তি। বাজেটেও বরাদ্দ বেড়েছে। শুধু ইস্ট-ওয়েস্ট নয়, কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মেট্রোর কাজে খরচ হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।
ইস্ট-ওয়েস্ট প্রকল্পের খরচ বাড়তে বাড়তে দাঁড়িয়েছে ৮৫৭৫ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে ৯০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ওই প্রকল্পে। এর আগে কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশন লিমিটেড পেয়েছিল ১০০০ কোটি টাকা। এই টাকা দিয়ে কি কাজ শেষ করা যাবে? এই প্রশ্নই উঠেছিল বিভিন্ন মহলে।
মেট্রোর তরফে জানানো হয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মেট্রোর কাজ সম্পূর্ণ করতে ১৮ হাজার ২১২ কোটি টাকা ব্য়ায় হয়েছে।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেটিং এজেন্সি বা জাইকা এই প্রকল্পে প্রধান ঋণদাতা সংস্থা। মোট খরচের ৫৫ শতাংশ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে তারা। সরকার বাড়তি খরচ অনুমোদন করার পরে এবার ঋণের বাকি অংশ দেবে জাইকা। প্রকল্পের বাকি টাকা দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। গত বছর অক্টোবর মাসে রেলবোর্ড বাড়তি খরচের প্রস্তাব অনুমোদন করে।
গত বছর এক্সটেন্ডেড রেল বোর্ডের বৈঠকে বাড়তি খরচের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এক্সটেন্ডেড রেল বোর্ডে অর্থমন্ত্রক, নীতি আয়োগ, পরিসংখ্যান ও প্রকল্প কার্যকর দফতরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। জাইকা এবার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের জন্য ঋণ দিচ্ছে ৪১৫৮ কোটি টাকা। ১১ বছর আগে ২২৫৩ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নতুন করে খরচের হিসেব করে দেখা গিয়েছে, ৮৫৭৫ কোটি টাকা খরচ হতে চলেছে। সেই খরচে রেল বোর্ডের অনুমোদন পেতে লেগেছিল চার বছর। এরপর ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প কয়েকটি বড় বাধার মুখে পড়েছিল। বহু ক্ষেত্রে মেট্রোর রুট ঘুরিয়ে দিতে হয়েছে। মূলত এই কারণেই খরচ বেড়েছে এত বেশি পরিমাণে। এছাড়া ১১ বছরে কর্মীদের বেতন বেড়েছে। স্টিল এবং আয়রনের দামও বেড়েছে। সেই কারণে বেড়েছে খরচ।
২০২১-২২ অর্থবর্ষের বাজেটে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে কেন্দ্রের বরাদ্দ ছিল ৯০০ কোটি টাকা। আর ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে বরাদ্দ বেড়ে হয় ১১০০ কোটি টাকা। হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত গোটা প্রকল্প শেষ করার জন্য ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস সময়সীমা হিসেবে ধার্য করা হয়েছিল। চলতি অর্থবর্ষে সেটি এসে দাঁড়িয়েছে ১০০০ কোটি টাকায়।
এদিকে, গত মার্চ মাসের পর থেকে চলতি অর্থবর্ষে ওই মেট্রো প্রকল্পে পর পর দু’বার বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে, যার জেরে কাজের গতি কার্যত থমকে গিয়েছে। গত বছর মে মাসের পরে ফের অক্টোবরে বউবাজারের সুড়ঙ্গে জল ঢুকে যায়। ফলে কাজ বন্ধ করে দিতে হয়। তারপর থেকে একাধিক বিশেষজ্ঞ সংস্থার পরামর্শ নিয়েও একাধিক সমস্যার সমাধান করতে পারছে না মেট্রো কর্তৃপক্ষ।