কলকাতা : তলানিতে কলকাতা পুরনিগমের ভাঁড়ার। উন্নয়নমূলক কাজে বাধা পেতে হচ্ছে আর্থিক সংকটের জেরে। পুরনিগমের সদ্য অবসারপ্রাপ্ত কর্মীরা পেনশন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। পুরনিগমের আধিকারিকরা যখন আর্থিক সংকট থেকে বেরোনোর রাস্তা খুঁজছেন, তখন কলকাতা পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chatterjee) বলছেন, আর্থিক সংকট থেকে বেরোনো সম্ভব। টিভি নাইন বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তাঁর বক্তব্য, বড় জোর একমাস লাগবে। কলকাতা পুরনিগমের মধ্যেই কুবেরের ধন রয়েছে। কিন্তু, এখনও কেউ তার খোঁজ করল না।
চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে পুরনিগমের একটি বিজ্ঞপ্তি ঘিরে হইচই শুরু হয়েছিল। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর যাঁরা অবসর নিয়েছেন, তাঁদের পেনশন আপাতত দেওয়া হবে না। আর্থিক সংকটের জেরেই এই সিদ্ধান্ত বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এই নিয়ে হইচই শুরুর পর কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, পুরনিগমের তরফে সরকারিভাবে এমন কোনও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। এটা পুরোপুরি ভুয়ো। পুরনিগমের কর্মীদের পেনশন ও বেতন যথাসময়েই হবে বলে জানিয়ে দেন। তবে পুরনিগমের আর্থিক সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে নেন তিনি।
ফিরহাদ আর্থিক সংকটের কথা বললেও তা মানতে রাজি নন তাঁর পূর্বসূরি শোভন। টিভি নাইন বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “কলকাতা পুরনিগমে আর্থিক সংকট থাকার কথা নয়। পুরনিগমের মধ্যেই কুবেরের ধন রয়েছে। কোথায় রেখেছি, কেউ খোঁজ করল না। এখনও কেউ খোঁজ করেনি।”
২০১০ সালে মাঝামাঝি থেকে ২০১৮ সালে নভেম্বর পর্যন্ত কলকাতার মেয়র পদে ছিলেন শোভন। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে মন্ত্রিত্ব ও মেয়র পদ ছাড়েন তিনি। তাঁর জায়গায় মেয়র হন ফিরহাদ। উত্তরসূরি ফিরহাদকে কি জানাবেন কী সেই কুবেরের ধন?
কলকাতার প্রাক্তন মেয়র মুচকি হেসে বলেন, “আমাকে মমতা বলতেন, বউ, বুদ্ধি, বই কাউকে দিবি না। কিংবা এই নিয়ে বেশি আলোচনা করবি না। চুপ করে থাকবি। আমি চুপ করে আছি।” কী সেই কুবেরের ধন, তা অবশ্য ব্যাখ্যা করেননি প্রাক্তন মেয়র। বর্তমান মেয়রকে কিছুটা খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, “একটা দফতর চালানো সহজ। কিন্তু, পুরনিগমকে না চিনে কাজ করা খুব কষ্ট।”
মেয়র হিসেবে ফিরহাদ হাকিম কেমন?
এই প্রশ্নের উত্তরে শোভন বলেন, “আমার সমালোচনা করার কোনও উদ্দেশ্য নেই। ববিদা (ফিরহাদ হাকিম) সেরা মেয়র, সেই বিচার করার সময় এখনও আসেনি। কারণ, মেয়র হিসেবে তিনি এই যাত্রা শুরু করেছেন। আগের পুরবোর্ডের পাঁচ বছরের মধ্যে তিন বছর ৭ মাসের বেশি আমি মেয়র ছিলাম। তারপর যে পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়ন হচ্ছে, সেগুলি আমার করা। যা বাস্তবায়ন হয়েছে, সেগুলিও আমার।”
কলকাতা পুরনিগমে আর্থিক সংকট নিয়ে শোভনের এই মন্তব্যে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। কী সেই কুবেরের ধন, তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে। তেমন শোভন ফের তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন কি না, সেই জল্পনাও বাড়ছে।
আরও পড়ুন: Fire in Kolkata: ট্যাংরায় ক্রিস্টোফার রোডের বস্তিতে ভয়াবহ আগুন, দাউ দাউ করে জ্বলছে লেলিহান শিখা