Firhad Hakim on Jagdeep Dhankhar: ‘গাঁও না মানে, আপনি মোড়ল…রাজ্যপালই বরং দেশটা চালান!’

TV9 Bangla Digital | Edited By: tista roychowdhury

Dec 30, 2021 | 6:08 PM

Kolkata: যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ, এই ধরনের টুইট করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

Firhad Hakim on Jagdeep Dhankhar: গাঁও না মানে, আপনি মোড়ল...রাজ্যপালই বরং দেশটা চালান!
রাজ্যপালকে খোঁচা ববির, নিজস্ব চিত্র

Follow Us

কলকাতা: কিছুতেই থামছে না রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত। এ বার রাজ্যপালকে সরাসরি নিশানা করলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে কটাক্ষ হেনে ফিরহাদের মন্তব্য, ‘গোটা দেশটাই বরং রাজ্যপাল চালান।’ এমনকী, রাজ্যপালকে গ্রামের ‘মোড়লের’ সঙ্গে তুলনা করেন তিনি।

ফিরহাদ এদিন বলেন, “বাংলায় একটা কথা রয়েছে, গাঁও মানে না আপনি মোড়ল! রাজ্যপালের হল সেই অবস্থা। রাজ্যপাল সাংবিধানিকভাবে প্রধান। তাঁর কাজ সাংবিধানিক নিয়ম মেনে। তা না করে তিনি বরাবর সংবিধানবিরোধী কাজ করে চলেছেন। তাঁর আচরণ দেখে মনে হয়, দেশে সরকারের দরকার নেই। গোটা দেশটাই বরং রাজ্যপাল চালাবেন। প্রধানমন্ত্রীর দরকার হবে না।” তাঁর আরও সংযোজন, “মানুষ যাদের ভোট দিয়েছে তারাই তো সরকার চালাবে। এটা তো গণতন্ত্রের রাজ্য।  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ মানুষের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেন, রাজ্যপালের খেয়াল অনুযায়ী নয়।”

প্রসঙ্গত সম্প্রতি একের পর এক সংঘাতে জড়িয়েছে নবান্ন-রাজভবন। কখনও শিক্ষা মহল নিয়ে, কখনও মুখ্যমন্ত্রীর গোয়া সফর নিয়ে, কখনও বা হাওড়া পুরভোট নিয়ে কিংবা পাহাড়ের জিটিএ নির্বাচন নিয়ে। পাহাড় থেকে সমতলে বিভিন্ন সময়ে সংঘাতে জড়িয়েছেন রাজ্যপাল।

জিটিএ ‘দুর্নীতির আখড়া’

সম্প্রতি, পাহাড়ে জিটিএ নির্বাচন নিয়ে সরব হয়েছিলেন রাজ্যপাল। টুইট করে তিনি অভিযোগ করেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জিটিএ-তে একেবারে গড়বড়ে অবস্থা। জিটিএ গঠনের পর এক দশক পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও ক্যাগ অডিট হয়নি। জিটিএ আইন, ২০১১ এর ৫৫(১০) ধারা অনুযায়ী, জিটিএ-র কার্যকলাপের কোনও রিপোর্ট দেওয়া হয়নি।”

তিনি আরও লিখেছেন, “জিটিএ প্রশাসক মণ্ডলী ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে জিটিএ আইনের ৫৫ (১০) ধারা অনুযায়ী সমস্ত কাজের আপডেট এবং রিপোর্ট জমা করতে হবে।” সেইসঙ্গে রাজ্যপালের বক্তব্য, পূর্বের জিটিএ বোর্ড এবং বর্তমান প্রশাসক মণ্ডলীর ভূমিকায় যথেষ্টই হতাশ। জিটিএ-র তহবিল অপব্যবহারে অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যপাল। তাঁর কথায়, জিটিএ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।”

এদিকে কয়েক মাস আগে কার্শিয়াঙে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, নতুন ভোটার তালিকা এলেই পাহাড়ে জিটিএ নির্বাচন হবে। সভা থেকে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “নতুন ভোটার লিস্ট এলেই আমরা জিটিএ নিয়ে এগোব। আমরা পাহাড়ের উন্নয়ন চাই। নির্বাচন হওয়া জরুরি। নিজেদের মধ্যে কোনও বিরোধ নয়। ঝগড়া নয়। একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে উন্নয়নের কাজ করব। জিটিএ নির্বাচন হবে। ওটার সঙ্গে লেগে থাকতে হবে।”

হাওড়া-বিল বিতর্ক 

গত শুক্রবার, হাইকোর্টে রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, হাওড়া পুরসভার বিলে সই করে দিয়েছেন রাজ্যপাল। তাই হাওড়া পুরভোটে কোনও বাধা নেই। কিন্তু, শনিবার সকালেই টুইট করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। স্পষ্ট তিনি টুইটে জানান, হাওড়া পুরসভা সংক্রান্ত বিল এখনও তাঁর বিবেচনাধীন। পাশাপাশি এও জানান, হাওড়া-বিলে তিনি সই করেননি।

পরবর্তীতে উত্তরবঙ্গে সফরকালেও একই দাবি করেন ধনখড়। তিনি ষ্পষ্টই জানান, হাওড়া পুরবিল সংক্রান্ত কোনও বিলেই সই করেননি। এমনকী, হাওড়া পুরবিল সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য চেয়ে তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। কিন্তু, তার কোনও উত্তর আসেনি বলেই অভিযোগ করেন তিনি। সেই বিতর্কের জল গড়ায় অবশেষে নির্বাচন কমিশন থেকে হাইকোর্ট। সেই মামলায় আজ  অর্থাৎ বৃহস্পতিবারই প্রথম শুনানি হয়।

শিক্ষামহলে বিতর্ক

বৃহস্পতিবার সকালেই টুইটে রাজ্যপাল লিখেছেন, “নিয়মবহিভূর্তভাবে আচার্যের অনুমতি ছাড়াই  উপাচার্যের নিয়োগ করা হয়েছে। এই নিয়োগ সম্পূর্ণ অবৈধ। এই নিয়োগের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।”  একইসঙ্গে ২৪ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাও প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল। সেই তালিকায় রয়েছে, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় সহ-একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

এক্ষেত্রে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে। গত ২৩ জুন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের মেয়াদ শেষ হচ্ছিল। বিকাশ ভবন জানাচ্ছে ১৭ তারিখ ও ২২ তারিখ আচার্যের কাছে অধ্যাপক দাসের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু আচার্যের কাছ থেকে কোনও উত্তর আসেনি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন মাথায় রেখে রাজ্য সরকার সুরঞ্জনবাবুর পদ-মেয়াদ বৃদ্ধি করে। সেই নিয়মেই এখনও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে বহাল রয়েছেন।

আর এতেই অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যপাল। তাঁর অভিযোগ, পদাধিকারবলে রাজ্যপাল আচার্য পদে আসীন। তাঁকে না জানিয়ে কী করে এই মেয়াদ বৃদ্ধি সম্ভব হল তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ধনখড়। পাল্টা রাজ্য সরকারের অভিযোগ, রাজ্যপালকে নিয়োগ ও উপাচার্যের মেয়াদবৃদ্ধি সংক্রান্ত নথি পাঠানো হলেও তিনি কোনও উত্তর করেননি। দিনের পর দিন ফাইল আটকে রেখেছেন বলে অভিযোগ। এইভাবে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। তাই বাধ্য হয়েই পদক্ষেপ করেছে রাজ্য।

উল্লেখ্য কিছুদিন আগে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গেও বিরোধে জড়িয়েছিলেন রাজ্যপাল। সাংবাদিক বৈঠকে ব্রাত্য বলেছিলেন, “তিনি দিনের পর দিন এ ভাবে ফাইল ফেলে রাখেন। তিনি বিন্দুমাত্র সহযোগিতার মনোভাব যদি না দেখান, তা হলে কেরলের রাজ্যপাল যেমন বলেছেন, প্রাদেশিক স্তরে আমরাও তা করতে বাধ্য হব। সংবিধান খতিয়ে দেখব, দরকারে আইনজ্ঞদের পরামর্শ নেব। আমরা আইনজীবীদের কাছে জানতে চাইব, অন্তবর্তীকালীন সময়ের জন্য রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য পদে আমরা মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে আসতে পারি কি না।”

তাতে পাল্টা রাজ্যপাল মন্তব্য করেন, “শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য করবেন। উনি ওঁকে রাজ্যপালই করে দিন না! অসুবিধা কোথায়! দিদিকেই বরং রাজ্যপাল করে দেওয়া হোক!”

রাজ্য-রাজ্যপালের বিরোধের অন্ত নেই।  তৃণমূলের মুখপাত্র ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের দাবি, রাজ্যপালের আচরণ পক্ষপাতদুষ্ট। তিনি বিজেপির পক্ষেই কথা বলেন। কিন্তু রাজ্যপালের থেকে এরকম আচরণ কাম্য নয়। কুণালের কথায়, “রাজ্যপালের কথা শুনলে মনে হয়, টুলের উপর দাঁড়িয়ে কোনও বিজেপি নেতা স্ট্রিট কর্ণারে বক্তৃতা দিচ্ছেন।” তাঁর আরও সংযোজন, “রাজ্যপালকে এত অসহিষ্ণু হলে চলে না। তাঁর আচরণ কোনওভাবেই রাজ্যপাল-সুলভ নয়।”

সম্প্রতি, তৃণমূল সুপ্রিমোর মন্তব্য নিয়েও টুইট করে ক্ষোভ উগড়ে দেন রাজ্যপাল। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ, এই ধরনের টুইট করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রায় মাস পেরতে চলা সেই গোয়া সফরের মন্তব্যকে আচমকা কেন টেনে আনলেন ধনখড় তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।

আরও পড়ুন: Sougata Roy: প্রসঙ্গ ‘মমতার নিন্দা করে হোয়াটসঅ্যাপ’! সৌগতকে টুইটে জবাব রাজ্যপালের

Next Article