সুজয় পাল, কলকাতা: চার মাস কেটে গিয়েছে মাঝে। মৃত্যু নিয়ে হয়েছে অনেক কাদা ছোড়াছুড়ি। পুলিশ, আদালত, সিবিআই- বাদ যায়নি কিছুই। কিন্তু বন্ধু-বান্ধব, পোষ্য নিয়ে মেতে থাকা বেলেঘাটার ছেলেটা এখন কোথায়? ছেলের দেহ সৎকারের সুযোগটুকু পায়নি পরিবার। মর্গে এখনও পচছে অভিজিৎ সরকারের দেহ (যদিও কার দেহ, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পরিবারের)। এই উৎকন্ঠার মাঝেও ছেলের জন্মদিনে প্রিয় পদ রেঁধে দেবেন মা। বেঁচে থাকলে ৩২-এ পা দিতেন অভিজিৎ। ২৬ অগস্ট, বহস্পতিবার অভিজিতের জন্মদিন। প্রতি বারের মতো থাকবেন বন্ধুরা, খাওয়ানো হবে পোষ্যদেরও। রান্না হবে পঞ্চব্যাঞ্জন। শুধু থাকবেন না অভিজিৎ।
রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পর নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বাংলার রাজনীতি। ভোটের দিন বিকেলেই পিটিয়ে খুন করা হয় অভিজিৎকে। গলায় পেঁচানো ছিল তার। পরিবারের দাবি, বিজেপি করার অপরাধেই খুন করা হয় তাঁকে। তারপর থেকে বিচারের আশায় থানা, আদালত সর্বত্রই ছুটেছে পরিবার। ভোটের পর রাজনৈতিক হিংসার পুরো তদন্তভার এখনও সিবিআই-এর হাতে। হয়ত সুবিচার মিলবে এক দিন, এই আশাতেই বুক বাঁধে পরিবার। কিন্তু ছেলের আত্মার শান্তিটুকু কামনা করার অধিকার মেলেনি পরিবারের।
তদন্তের স্বার্থে এখনও সৎকার করতে দেওয়া হয়নি অভিজিতের দেহ। এখনও কমান্ডো হাসপাতালের মর্গে রয়েছে সেই দেহ। পচে-গলে সেই দেহ আর চেনার কোনও উপায় নেই। পরিবারের প্রশ্ন, ওই দেহ আদৌ অভিজিতের? তাঁদের অভিযোগ, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় দেহ সরিয়ে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। তাই মর্গে আদতে কার দেহ রয়েছে, তা এখনও জানে না পরিবার। ইতিমধ্যেই ডিএনএ পরীক্ষা হয়েছে ওই দেহের। কিন্তু যেহেতু ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, তাই আপাতত সেই ডিএনএ রিপোর্ট আছে সিবিআই-এর হাতে। ডিএনএ রিপোর্ট দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে অভিজিতের পরিবার। সত্যিই কি মর্গে শুয়ে আছেন অভিজিৎ? অন্তত সেটুকু জানতে চায় তারা।
হিন্দু নিয়মে যেহেতু সৎকার বা শেষকৃত্য সম্পূর্ণ না হলে আমিষ খাওয়ার রীতি নেই, তাই চার মাস ধরে নিরামিষ খাচ্ছে অভিজিতের পরিবার। কিন্তু, আগামিকাল বাড়িতে আসবে মাছ। অভিজিৎ যে মাছ খেতে ভালোবাসত! তাই পমফ্রেট, চিংড়ি, কাতলা বাদ যাবে না কিছুই। বিরিয়ানি খেতেও ভালোবাসত অভিজিৎ, তাই দোকান থেকে আনা হবে বিরিয়ানি। এ ছাড়া রীতি মেনে পাঁচরকম ভাজা, দই-মিষ্টি আয়োজন থাকবে সবকিছুরই। মা নিজে হাতে সব রান্না করবেন। অভিজিতের ঘরে সাজিয়ে দেওয়া হবে সেই খাবার। অভিজিতের ভাই জানিয়েছেন, বাজারের তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। কাছের বন্ধুরাও আসবেন বাড়িতে। অপূরণীয় শূন্যতার মাঝে পরিবারের জন্য এটুকুই স্বস্তি।
এ দিকে, সিবিআই-এর হাতে তদন্তভার যাওয়ার পর থেকে সিবিআই দফতরে বারবার যাচ্ছেন অভিজিতের ভাই বিশ্বজিৎ। গত সোমবারই সিজিও কমপ্লেক্সে যান তিনি। সেখানে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন আধিকারিকদের সঙ্গে। আজ, বুধবার ফের তাঁকে যেতে হচ্ছে সিবিআই দফতরে। এ দিন তাঁকে নিজাম প্যালেসে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে নথি, ভিডিয়ো-সহ একগুচ্ছ প্রমাণ আধিকারিকদের হাতে তুলে দেবেন তিনি। তাঁদের আশা, হয়ত এ বার মিলবে সুবিচার। হয়ত সৎকারের সুযোগটুকু পাবেন তাঁরা। আরও পড়ুন: তথ্য তালাসের ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে সিবিআই, ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে এবার ‘স্পেশ্যাল ১০৯’