কলকাতা: একজন কবি। একুশের হৃদপিণ্ডে আঠারোর স্পর্ধা। লেখার ছত্রে ছত্রে মানুষের লড়াই। ক্ষুধার লড়াই। অন্যজনও কবি তবে অনেক বেশি রাজনীতিক। তাঁর লড়াই ময়দানে। মানুষের জন্যই, ক্ষুধার জন্যই। একজন সুকান্ত ভট্টাচার্য। অন্যজন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সম্পর্কে তাঁরা কাকা-ভাইপো। দেখা সেভাবে তাঁদের হয়নি। সুকান্ত যখন মারা যান বুদ্ধের বয়স মোটে ৩। কিন্তু একুশ বছর বয়সেই যে স্পর্ধার আকাশ সুকান্ত ছুঁয়েছিলেন, তার ছোঁয়া থেকে কী করে বাদ পড়েন শান্ত, শিষ্ট, পরিশীলিত মেধাবী ছাত্রটি। কাকার কবিতা পড়েই প্রথম রাজনীতির প্রাথমিক পাঠ বুদ্ধর।
পরাধীন ভারতে জন্ম সুকান্ত ভট্টাচার্যর। ১৯২৬ সালের ১৫ অগস্ট। তাঁর বাবা নিবারণ ভট্টাচার্য ও মা সুনীতি ভট্টাচার্য। মাত্র ২১ বছর বয়সে প্রয়াত হন কিশোর কবি সুকান্ত। প্রথমে ম্যালেরিয়া ও পরে ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েকমাস আগে ১৯৪৭ সালের ১৩ মে প্রয়াত হন। কাকার মৃত্যুর বছর তিনেক আগে জন্ম বুদ্ধদেবের। ১৯৪৪ সালের ১ মার্চ। ফলে কাকার সঙ্গ খুব বেশিদিন পাননি বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, তাঁর জীবনে সুকান্তর প্রভাব ছিল অপরিসীম। প্রবীণ সাংবাদিকরা বলছেন, সুকান্ত ভট্টাচার্যের বন্ধু কলিম শরাফির সঙ্গে দেখা হলেই কাকার কথা জানতে চাইতেন বুদ্ধদেব। তখন তিনি যেন শিশু। মন দিয়ে কাকার জীবনের নানা ঘটনা শুনছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগের পিছনে রয়েছে কাকার প্রভাব।
মাত্র ২১ বছরের জীবনে সুকান্ত লেখা-লেখি করেছেন ৬-৭ বছর। আর এই কয়েক বছরেই তাঁর লেখা মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, কম দিন লিখলেও সুকান্তর কবিতার ব্যাপ্তি সুদূরপ্রসারী। তাঁর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় আজও প্রাণ খোঁজে ছাত্র-যুবরা। কাকার মতো লেখালেখি করেছেন বুদ্ধদেবও। তাঁর দৃষ্টিতে বামফ্রন্ট সরকারের প্রথম দশ বছর ও শেষ দশ বছর নিয়ে দুই খণ্ডে লিখেছেন ‘ফিরে দেখা’। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিষয়ে লিখেছেন ‘নাৎসি জার্মানির জন্ম ও মৃত্যু’ এবং ‘স্বর্গের নীচে মহাবিশৃঙ্খলা’।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম একবার বলেছিলেন, “সুকান্ত ভটাচার্য নিজের কবিতায় বলেছেন, ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’ আর সেই সুকান্ত ভট্টাচার্যেরই ভাইপো বুদ্ধদেব। তিনি রাজ্যকে নতুন প্রজন্মের বাসযোগ্য করার জন্য রাজনীতিতে এসেছিলেন।”