পাম অ্যামিনিউয়ের সরকারি আবাসনে দু-কামরার ফ্ল্যাটে কেটেছে গোটা জীবন। বারবার ফ্ল্যাট বদলের কথা উঠলেও তা এড়িয়ে গিয়েছেন। ‘সিম্পল লিভিং হাই থিঙ্কিং’ এই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। ছাত্র রাজনীতি দিয়ে ইনিংস শুরু, তারপর তো নিত্যনতুন উচ্চতায় উঠেছে তাঁর রাজনৈতিক জীবন। বসেছিলেন বাংলার মসনদেও। কিন্তু, বামপন্থার শিকড় ছেড়ে বের হননি জীবনের শেষ লগ্ন পর্যন্ত। এক সাক্ষাৎকারে তো একবার তিনি বলেছিলেন, ‘কলেজে যে ধরনের পোশাক পরতাম, যা খেতাম, যে ভাবে আড্ডা দিতাম, এখনও তাই করি। সাজানো গোছানো ঘরে গেলে আমার একটা অস্বস্তি হবে।’ যাঁকে নিয়ে কোনও ‘কু-কথা’ শোনা যায়নি খোদ রাজ্যের ‘পালাবদলের’ কাণ্ডারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও। তাঁর প্রয়াণের খবরে শোকস্তব্ধ তিনিও। ছুটি দিয়ে দিয়েছেন গোটা রাজ্যে সব সরকারি দফতরে। বলেছেন, ‘বারবার ফিরে ফিরে আসুন এই বাংলায়।’
‘সৎ’ রাজনীতিকদের কথা উঠলেই বারবার ফিরে ফিরে এসেছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নাম। দলের নেতারা তো বটেই, “তাঁর প্রয়াণের পরেও বাড়ি গিয়ে সেই সার্টিফিকেট দিয়ে এসেছেন ফিরহাদ হাকিমের মতো নেতারা। স্পষ্টই বলেছেন, ওনার সততার জন্য ওনাকে অত্যন্ত সম্মান করি।” তৃণমূল ছাড়াও একই সুর সুকান্ত ভট্টাচার্যদের মতো বিজেপি নেতাদের গলাতেও। বলছেন, “মতাদর্শগতভাবে ভিন্ন মেরুর লোক হলেও ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে আমি অত্যন্ত সম্মান করতাম। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি তাঁর আত্মার সদ্গতি হোক।”
শোকস্তব্ধ কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীও। বুদ্ধদেবের আমলে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন রয়েছে তাঁরও। সেই অধীরও বলছেন, “আদর্শ থেকে পিছপা হননি। যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে কখনও দুর্নীতি, স্বজন-পোষণ করার অভিযোগ আজ পর্যন্ত বাংলার কেউ করতে পারেননি।” কংগ্রেস নেতা সৌম্য আইচও বলছেন, ‘একজন সৎ মানুষ হিসেবে আপনাকে মনে রাখব স্যার’।
শোকবার্তা দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তিনি বলছেন, “উনি এক জন বলিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। যিনি একাগ্র ভাবে তাঁর রাজ্যের মানুষের সেবা করেছেন।” শোকস্তব্ধ বাংলার বুদ্ধিজীবীরাও। চোখ জল নিয়েই শুভাপ্রসন্ন বললেন, ‘ওঁর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক ছিল। আমাকে উনি ভালবাসতেন। অনেক বিষয়ে আমরা কথা বলতাম। এমন সৎ মানুষ দেখা যায় না। এই সততার কোনও তুলনা নেই।’
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)