কলকাতা: বয়স ৮৯ বছর। মোবাইলে আসা ওটিপি ভালো করতে বার করতে পারতেন না। তাই ব্যাঙ্কে গেলেই বৃদ্ধকে সাহায্য করতেন বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবক। যখনই বৃদ্ধ ব্যাঙ্কে যেতেন, তাঁকে নানাভাবে সাহায্য করতেন ওই ব্যাঙ্ক কর্মী। তা থেকেই পরিচয়। আর ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় বৃদ্ধের বাড়িতেও যাতায়াত ছিল ব্যাঙ্ক কর্মীর। বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ওই ব্যাঙ্ক কর্মী বৃদ্ধকে বলেছিলেন একটা ফিক্সড ডিপোজিট খুলতে। বিশ্বাস করেই ব্যাঙ্ক কর্মীর কাছে সব নথি দিয়েছিলেন। আর তাতেই প্রতারণার ফাঁদে বৃদ্ধ। হারালেন জীবনের সঞ্চয়, ৩১ লক্ষ টাকা। যদিও প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল প্রাক্তন ব্যাঙ্ক কর্মীকে। শুভঙ্কর পাণ্ডে নামে ওই ব্যাঙ্ক কর্মীকে ভাঙর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে গ্রেফতার করেছে বিধান নগর সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ।
ঘটনার প্রেক্ষাপট
দমদমের বাসিন্দা ৮৯ বছরের প্রাক্তন সরকারি কর্মচারী প্রদীপ কুমার চট্টোপাধ্যায় গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর বিধান নগর সাইবার ক্রাইম থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর বয়ান অনুযায়ী, এয়ারপোর্টের কাছে একটি ব্যাঙ্কে একটি অ্যাকাউন্ট ছিল তাঁর। সেই সূত্রে ওই ব্যাঙ্কের কর্মী শুভঙ্করের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। তিনি যখন ব্যাঙ্কে যেতেন, তাঁকে নানা কাজে সহযোগিতা করতেন শুভঙ্কর। যার ফলে তাঁদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়। সেই সম্পর্কের সূত্রে ওই বৃদ্ধকে একটি ফিক্সড ডিপোজিট করতে বলেন।
প্রায় ৩১ লক্ষ টাকার একটি ফিক্সড ডিপোজিট করেন বৃদ্ধ। যেহেতু ৮৯ বছরের বৃদ্ধ ভালোভাবে মোবাইল অপারেট করতে পারতেন না, তাঁকে সাহায্য করতেন শুভঙ্কর। সাহায্যের নামে বৃদ্ধের মোবাইলের সব ডাটা যেমন ওটিপি, অ্যাকাউন্ট নম্বার-সহ নানা তথ্য নিয়ে নেন শুভঙ্কর। পরবর্তীতে বৃদ্ধ যখন ব্যাঙ্কে যান, তিনি জানতে পারেন তাঁর ওই ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এর পর তিনি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে গোটা বিষয় জানান।
অভিযোগ পেয়েই শুভঙ্করকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে বিধান নগর সাইবার ক্রাইম থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন ওই বৃদ্ধ। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বিধান নগর সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ শনিবার রাতে ভাঙর থেকে শুভঙ্কর পান্ডে নামে ওই প্রাক্তন ব্যাঙ্ক কর্মীকে গ্রেফতার করে।
জেরায় পুলিশ জানতে পেরেছে, মোট ৩২ লক্ষ টাকা দুটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দেন শুভঙ্কর। একটি তাঁর নিজের অ্যাকাউন্টে আরেকটি আত্মীয়র। প্রতারণা হওয়া টাকার মধ্যে শুভঙ্কর আট লক্ষ টাকা ফেরত দেন। এবং দু লক্ষ টাকার একটি চেক দেন। কিন্তু সেই চেক বাউন্স করে। কিন্তু বাকি টাকা শেয়ার মার্কেটে আটকানো আছে বলে পুলিশ জানতে পারে। ধৃতকে জেরা করছে পুলিশ।