কলকাতা: ঝালদার কাউন্সিলর তপন কান্দু হত্যা মামলার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী নিরঞ্জন বৈষ্ণবের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে এবার তদন্ত করবে সিবিআই। এতদিন এই মামলার তদন্ত করছিল রাজ্য পুলিশ ও সিআইডি। তপন কান্দু খুনের মামলার পাশাপাশি নিরঞ্জন বৈষ্ণবের অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলাও সিবিআই খতিয়ে দেখবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি রাজা শেখর মান্থা। আদালতের বক্তব্য, দুটি মামলা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। তাই তদন্তভার একই সংস্থার হাতে থাকা উচিত।
শুনানির সারবত্তা
বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা মনে করছেন, নিরঞ্জন বৈষ্ণব অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তবে এদিনের সওয়াল জবাবের সময়ে রাজ্যের তরফে জানানো হয়, এফআইআর দায়ের হয়েছে। সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে। প্রতিবেশীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের তরফে তৎপরতার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। রাজ্যের তরফে আরও বলা হয়, ফরেনসিক আধিকারিকদের ঘটনাস্থলে আসতে বলা হয়েছে। তবে তাঁরা ঘটনার এতদিন পরেও আসেননি। এমনকি পেশায় গৃহশিক্ষক নিরঞ্জন বৈষ্ণব যে ছাত্রদের পড়াতেন, তাঁদের খাতাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। সুইসাইড নোটের হাতের লেখার সঙ্গে ছাত্রদের খাতায় তাঁর লেখা মিলিয়ে দেওয়া হবে। এরপর বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “সব মানা হচ্ছে। তবে এটা তো ঠিক নিরঞ্জনই তপন কান্দু মামলায় অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী। দুটো ঘটনা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।” আর সেই কারণে সিআইডি-র হাত থেকে এই তদন্তভার গেল সিবিআই-এর কাছে।
মামলাকারীর আইনজীবী
এ প্রসঙ্গে আইনজীবী কৌস্তভ বলেন, “মূলত তদন্ত করছিল রাজ্য পুলিশই। সিআইডি-র কাছে ওরা কেবল হাতের লেখা মিলিয়ে দেখার বিষয়টি দেখছিলেন। রিট পিটিশন করেছিলেন তপন কান্দুর স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দু ও ভাইপো মিঠুন কান্দু। তাঁরা আদালতকে জানিয়েছিলেন তপন কান্দু যেদিন হত্যা হন, সেসময় ঘটনাস্থলের কাছেই ছিলেন নিরঞ্জন বৈষ্ণব। সেটা রাজ্য প্রশাসনও মানছে। তবে তাঁর মৃত্যুটাও অস্বাভাবিক। সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।”
‘সিবিআই সব বার করবে’
স্বামীর মৃত্যুতে প্রথম থেকেই সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন পূর্ণিমা কান্দু। আদালতে আইনি লড়াইয়ে জিতেছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর তদন্ত করছে সিবিআই। কিন্তু এরইমধ্যে ঘটে আরও একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। সপ্তাহ দুয়েক আগে ঘর থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় নিরঞ্জনের। সেটা স্বাভাবিক নয় বলেই মনে করছিলেন তিনি। তাই এই মৃত্যুরও তদন্ত যাতে সিবিআই-এর হাতে দেওয়া হয়, তার আর্জি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সোমবার সেই মামলার শুনানি হয়। তদন্তভার যায় সিবিআই-এর হাতে। এদিনের রায় প্রসঙ্গে পূর্ণিমা কান্দু বলেন, “আমি প্রথম থেকে বলছিলাম সিবিআই তদন্ত হোক। ওর কাছ থেকে অনেক কিছু জানা যেত। সে হঠাৎ করে আত্মহত্যা করল! এটা মানা যায় না। পুলিশরা অনেক চাপ দিয়েছিল। ও তো সুইসাইড নোটে লিখে গিয়েছিল, পুলিশের চাপেই আত্মহত্যা। পুলিশ কেন চাপ দিচ্ছিল? কী নিয়ে চাপ দিচ্ছিল? সিবিআই সব বার করবে। স্বামীর খুনের নেপথ্যে অনেক কিছুই রয়েছে, সবই বেরিয়ে আসবে। এই রায়ে আমরা আশাবাদী।”
মামলার প্রেক্ষাপট
তপন কান্দুর খুনের প্রত্যক্ষদর্শী নিরঞ্জন বৈষ্ণবের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার হয় দেহের পাশ থেকে। সেখানে মানসিক চাপের কথা উল্লেখ করা ছিল। পুলিশের বিরুদ্ধেই আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তোলে পরিবার। তপন কান্দুর মৃত্যু কীভাবে হয়েছে তা চোখের সামনে দেখেছিলেন নিরঞ্জন। তপনকে দীর্ঘদিন ধরে চিনতেনও তিনি। নিরঞ্জনের দাদার অভিযোগ ছিল, ঝালদার কাউন্সিলরের মৃত্যুর পর বারবার পুলিশ তাঁর ভাইকে ডেকে পাঠিয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা থানায় বসে থাকতে হয়েছে। এই সমস্ত কিছুতে মানসিক চাপ বোধ করছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। তা থেকে মুক্তি পেতেই এই চরম সিদ্ধান্ত বলেও দাবি করে নিরঞ্জনের পরিবার। এবার তাঁর মৃত্যুর তদন্তভারও সিবিআইয়ের হাতে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন পূর্ণিমা কান্দু।