কলকাতা : রাজ্যে চারটি ধর্ষণের মামলায় এবার তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। দেগঙ্গা, মাটিয়া, ইংরেজবাজার এবং বাঁশদ্রোণী-এই চার জায়গায় ধর্ষণের মামলায় আইপিএস দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে ধর্ষণের মামলায় নজরদারি করতে দময়ন্তী সেনের কোনও আপত্তি থাকলে, তা তিনি জানাতে পারবেন হাইকোর্টে। আগামী ২০ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানি।
রাজ্যে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় জল গড়িয়েছে হাইকোর্টে। রাজ্যে অরাজকতার অভিযোগ তুলে শাসকদলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের চার জায়গায় ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। সেই কমিটির নেতৃত্বে রাখা হয়েছে দময়ন্তী সেনকে। ২০১২ সালে পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ মামলায় তদন্ত করেছিলেন তিনি। সেইসময় তাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রশংসা করেছিলেন অনেকে। তবে ওই মামলার তদন্ত ঘিরেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে চাপানউতোর তৈরি হয়েছিল দময়ন্তী সেনের। তাঁকে কলকাতা পুলিশের পদ থেকে বদলি করা হয়। সাত বছর পর আবার তিনি কলকাতা পুলিশে ফিরে এসেছেন। এখন তিনি কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল কমিশনার। পুলিশ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের দায়িত্বে রয়েছেন।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে আজ শুনানিতে মাটিয়া মামলার তদন্তভার দময়ন্তী সেনকে দেওয়ার আর্জি জানান মামলাকারী। তিনি বলেন, “এই ধরনের তদন্তের অভিজ্ঞতা রয়েছে এই আইপিএস অফিসারের।” সেই সময় প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব বলেন, “দময়ন্তী সেন পুলিশ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্ত। সেই কাজে ক্ষতি হবে।” মামলাকারীরা বলেন, “তিনি শুধু পুলিশ অ্যাকাডেমির সঙ্গে যুক্ত।”
এক পর এক ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, “রাজ্যে পরপর একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। রাজ্যের পরিকাঠামো থাকার পরও কেন ঘটছে ? আমরা প্রতিটি ঘটনা আলাদা করে তদন্ত করব। যেখানে মনে হবে তদন্তকারী সংস্থার হাতে তদন্তভার দেওয়া হবে।”
প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌম্যেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “দিল্লিতে এই ধরনের ঘটনা ঘটে। দেশের বহু জায়গায়ও এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। এই রাজ্য মহিলাদের জন্য অন্যতম সুরক্ষিত।” এরপরই তিনি যুক্তি দেন, এই রাজ্য রাজনৈতিক ভাবে ভীষণ স্পর্শকাতর। ধর্ষণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য কী পদক্ষেপ করছে, তাও বিচারপতির কাছে তুলে ধরেন অ্যাডভোকেট জেনারেল। দময়ন্তী সেনকে দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ওই আইপিএস অফিসারের সময় আছে কি না তা দেখতে হবে। এমনকী, রাজ্যের তরফে অন্য এক নামও দেওয়া হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “তদন্তে নজরদারি করতে কোনও আপত্তি থাকলে, তা জানাতে পারেন দময়ন্তী সেন। ২০ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানি। ওই দিনই দুঁদে এই আইপিএস অফিসারকে জানাতে হবে, তিনি তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দিতে পারবেন কি না। তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে তিনি কোনও আপত্তি জানান কি না, সেটাই এখন দেখার।”
মাটিয়ায় নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ-
২৪ মার্চ উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের মাটিয়ায় ১১ বছরের এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। উপহারের লোভ দেখিয়ে নির্জন এলাকায় নিয়ে গিয়ে এক যুবক তাকে যৌন নির্যাতন করে। নির্যাতিতাকে ভর্তি করা হয় আর জি কর হাসপাতালে। ১১ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে তাকে ছাড়া হয়।
ইংরেজবাজারে বাড়িতে ঢুকে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ-
২৭ মার্চ মালদা জেলার ইংরেজবাজারের শোভানগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে প্রতিবেশী যুবকের বিরুদ্ধে। বাড়িতে ঢুকে কিশোরীর মুখ, হাত বেঁধে, মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই কিশোরীকে মালদা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। জানা গিয়েছে, ওই কিশোরী এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে।
দেগঙ্গায় গৃহবধূকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ-
২৮ মার্চ দেগঙ্গায় এক মহিলার অর্ধনগ্ন মৃতদেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ, মদ খাওয়ানোর পর ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে তাঁকে। পুলিশ মহিলার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকে মদের বোতল, জলের বোতল সহ বেশ কিছু জিনিস পেয়েছে দেগঙ্গা থানার পুলিশ।
বাঁশদ্রোণীতে কিশোরীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ-
১৮ মার্চ দোলের দিন বাঁশদ্রোণীতে ১৩ বছরে এক কিশোরীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওইদিন বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল ওই কিশোরী। অভিযোগ, পাড়ার দুই যুবক তাকে তুলে নিয়ে একটি বাড়িতে যায়। সেখানে ধর্ষণ করা হয়। বাড়ি ফিরে প্রথমে কিছুই বলতে পারেনি কিশোরী। পরদিন বাবা-মাকে সব ঘটনা জানায়।