কলকাতা: বিভ্রান্ত সঞ্জীব যেন মহাভারতের অর্জুন। আর শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকায় কলতান দাশগুপ্ত। তাই কলতানকে ফোন করে সঞ্জীব বুঝতে চেয়েছিলেন, তাঁর কী করা উচিৎ। কলতানের অডিয়ো ক্লিপ সংক্রান্ত মামলায় এভাবেই বিষয়টা এজলাসে বর্ণনা করল রাজ্য। সল্টলেকে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই ইস্যুতেই মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার মামলার শুনানি শেষ। এদিনই সন্ধ্যে সাতটায় মামলার রায় ঘোষণা হবে।
রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়েছে, শেষ পাঁচ মাসে সঞ্জীব ও কলতান একে অপরকে ১৭১ বার ফোন করেছেন। তাহলে অচেনা হবেন কেন? উভয়েই ওই কন্ঠস্বর নিজেদের বলে স্বীকার করেছেন বলেও দাবি করেছে রাজ্যে। উল্লেখ্য, কুণাল ঘোষ প্রথম ওই কথোপথন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন। এরপরই সঞ্জীব নামে এক ব্যক্তি ও বাম নেতা কলতান দাশগুপ্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই ইস্যুতেই মামলা হয়েছিল হাইকোর্টে।
এদিন বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ প্রশ্ন তুলেছেন, অভিযুক্তরা গ্রেফতার হওয়ার আগে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি কীভাবে এই কথোপকথন হাতে পেলেন? পেন ড্রাইভ কীভাবে পাওয়া গেল, পেন ড্রাইভ যার কাছ থেকে পাওয়া গেল, তাকে কি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে? এই প্রশ্ন তুলে বিচারপতি বলেন, “আন্দোলনরত চিকিৎসকদের রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। সিবিআই তাহলে গোটা ঘটনারই তদন্ত করুক।”
উত্তরে রাজ্যের আইনজীবী কিশোর দত্ত বলেন, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা রাজ্য দেখবে। বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “যে আশঙ্কা হচ্ছে, যদি এটা আতঙ্কবাদী হামলা হয়, তাহলে কেন কোনও পদক্ষেপ করা হল না! ওরা মাত্র ১৮- ১৯ বছরের। আমাদের বিষয়টা ভাবতে হবে। তাই সিবিআই এই বিষয়ে তদন্ত করবে।”
রাজ্যের তরফে কিশোর দত্ত জানিয়েছেন, সিসিটিভি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বাকি ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিচারপতি জানতে চান, অডিয়ো পরীক্ষা না হলে কীভাবে বুঝছেন যে এটা ওদের গলা। আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য জানান, কলতান ফোন পেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু সেটা পরিচিতের ফোন ছিল না। তাঁকে চিনতেন না। তাও তাঁর বিরুদ্ধে ধর্তব্যযুক্ত অপরাধের ধারা দেওয়া হয়েছে। বিকাশ ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, ফোন রেকর্ড কে করলেন? যিনি ফোনালাপটি প্রকাশ করলেন তিনিই বা কীভাবে করলেন? বিকাশ রঞ্জনের দাবি, ধৃত সঞ্জীবের কাছে ‘কি প্যাড’ ফোন ছিল অর্থাৎ স্মার্টফোন ছিল না। তাই আইনজীবী বলেন, “ফোন কি ট্যাপ হতে পারে? সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী এটা বেআইনি। আর সেই কথোপকথন ফেসবুকে দেওয়া আরও বেআইনি।”
রাজ্যের তরফে কিশোর দত্ত বলেন, “ওই কথোপকথনে একবারের জন্যও কলতান ওই ব্যক্তিকে নিষেধ করেনি, এখানে সঞ্জীব হল ‘অর্জুন’। বিভ্রান্ত ‘অর্জুন’ কী করবেন, না বুঝতে পেরে ফোন করেছিল। সাহেব, বাবু, দাদু – এরা কারা ছিল জানতে এদের গ্রেফতারের প্রয়োজন আছে। ফোন রেকর্ড করার কথা সমর্থন বা অসমর্থন করছি না। অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র আসলে অপরাধই।”