কলকাতা: রাজ্য সরকার চায় ১৯ ডিসেম্বর কলকাতা ও হাওড়ায় একসঙ্গে পুরভোট করাতে। কিন্তু বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন ভোটের নির্ঘণ্টসংক্রান্ত যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সেখানে কেবলমাত্র কলকাতার কথাই উল্লেখ রয়েছে। হাওড়ায় কবে ভোট সে সংক্রান্ত কোনও তথ্যই কমিশনের তরফে জানানো হয়নি। কমিশনের দাবি, রাজ্যের তরফে এখনও হাওড়ার ভোট নিয়ে তাদের কাছে কোনও তথ্য আসেনি। অন্যদিকে তৃণমূলের দাবি, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের জন্যই হাওড়ায় ভোট পিছিয়ে যাচ্ছে।
হাওড়া পুর সংশোধনী বিল ২০১২ নিয়ে রাজ্যপাল সন্তুষ্ট নন বলেই জানা গিয়েছে। সেই বিলে এখনও স্বাক্ষর করেননি রাজ্যপাল। আপত্তি তুলে তিনি সেই সংশোধনী বিল ফেরত পাঠানোর হাওড়ার পুরভোট নিয়ে একটা জটিলতা রয়ে গিয়েছে। এদিকে পুর আইন মোতাবেক, যেদিন ভোট তার ২৪ থেকে ২৭ দিনের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। এর মধ্যে রবিবার ও সরকারি ছুটি থাকলে সেদিনগুলি বাদ থাকবে। সে ক্ষেত্রে ১৯ ডিসেম্বর ভোট করতে হলে বৃহস্পতিবার ২৫ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করা প্রয়োজন ছিল। সে সম্ভাবনা যে একেবারেই নেই তেমনটাই বলছেন ওয়াকিবহালমহল।
কারণ, সংশোধনী বিল পাশ হলে তার পরে আইন করে বালি পুরসভা আলাদা হবে। বালিকে ধরে হাওড়ায় মোট ৬৬টি ওয়ার্ড। বালি আলাদা হলে সেখান থেকে ১৬টি ওয়ার্ড বাদ যাবে। বাকি ৫০টি ওয়ার্ড নিয়ে হাওড়া পুরসভা হবে। কিন্তু যখন ভোটের কথা বলা হয়েছিল তখন হাওড়া ৬৬টি ওয়ার্ডের কথা বলা ছিল। এ নিয়েও একটা জটিলতা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাস বৃহস্পতিবারই জানান, “নিয়মটা খুবই স্পষ্ট। নির্বাচন কমিশন রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দিন ঘোষণা করে। রাজ্য সরকারকে আমাদের আগে জানাতে হবে। তার পর আমরা সহমত হতে পারি, আলোচনা করতে পারি, তারপর আমাদের বক্তব্য জানাতে পারি। হাওড়া নিয়ে আমাদের কাছে এখনও কোনও কমিউনিকেশন নেই।”
অন্যদিকে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আমি যা শুনেছি মহামান্য রাজ্যপালের জন্য হাওড়াটা দেরী হল।” অন্যদিকে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, “হাওড়ায় ভোট না হওয়ার জন্য রাজ্য সরকার দায়ী। তৃণমূল কংগ্রেস দায়ী। হাওড়া এবং বালিকে এক করে দেওয়া হল। আবার পাঁচ বছর পর আলাদা করে দেওয়া হল। এটা রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি।”
কেন হাওড়া নিয়ে এত জটিলতা?
এতদিন হাওড়া পুরসভার অধীনেই ছিল বালি পুরসভা। বালি পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ড নিয়ে হাওড়ার মোট ওয়ার্ড ছিল ৬৬টি। গত ১২ নভেম্বর বালিকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই মতো সদ্য অনুষ্ঠিত বিধানসভা অধিবেশনে বিল আনা হয়। ‘মাইক্রো লেভেলে নাগরিক পরিষেবা’ পৌঁছে দিতেই এই সিদ্ধান্ত বলে রাজ্য সরকারের তরফে বলা হয়েছে। কিন্তু বিল পাস করানো হলেও রাজ্যপালের সই ছাড়া তা আইন হবে না। এদিকে রাজ্যপাল একাধিক প্রশ্ন তুলে সেই সই-পর্ব বাকি রেখেছেন।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, কোনও ভাবেই ফেব্রুয়ারির আগে এই হাওড়ার ভোট সম্ভব নয়। এদিকে বৃহস্পতিবারই কলকাতা হাইকোর্টে এক মামলার শুনানি চলাকালীন অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) জানিয়েছেন, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে রাজ্যের সমস্ত বকেয়া পুরসভায় ভোট করতে চায় রাজ্য সরকার। অর্থাৎ হাওড়ার ভোট আগামী বছর ২০২২-এই হবে বলে মনে করা হচ্ছে।